Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাকালে হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিমবিদ্বেষ ভারতের অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

চীনের ওহান থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বিশ্বের কোনো দেশ বা অঞ্চল বাদ যায়নি।চীনের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বা বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রাদুভার্ব ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই তা মহাদেশের গÐি পেরিয়ে ইউরোপ আমেরিকায় প্রাণঘাতী মহামারী আকার ধারণ করেছিল। ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনে প্রথম নতুন ভাইরাসটি ধরা পড়ার পর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিল চীন থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ার দেড়মাস পর ভারতে ও বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভারতে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়া এবং দেশের প্রায় সব বড় শহরে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর দিল্লীতে তবলিগ জামাতের একটি সমাবেশ থেকে ভারতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গুজব রটিয়ে এই মহামারীর মধ্যেও ভারতে আরেকটি মুসলবিদ্বেষী দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়ার উস্কানি সেখানকার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারতে সংঘটিত মুসলমান বিরোধী দাঙ্গা ও গণহত্যার ঘটনাগুলোর মত এবারের পেন্ডেমিক দাঙ্গায়ও ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকায় দেখা গেছে। তখনো দিল্লী দাঙ্গার রক্ত ও অঙ্গারের দাগ মুছে যায়নি। মূলত চীনে এবং ইতালি, স্পেন ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস তখন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছিল, ফেব্রæয়ারীর শেষদিকে ভারতের রাজধানী দিল্লীর উত্তর-পূর্ব প্রান্তে হঠাৎ করেই মুসলমানদের উপর উগ্রবাদী হিন্দুরা রণহুঙ্কারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চল্লিশের দশকের শেষদিকে উগ্রবাদী হিন্দুদের এমন মুসলিম বিদ্বেষী দাঙ্গার কারণে দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মকে অনিবার্য করে তুলেছিল। এবারের দাঙ্গায় আগের মত ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা না ঘটলেও উগ্রবাদী হিন্দুদের উন্মত্ততা, ধ্বংসযজ্ঞ ও পৈশাচিকতা ছিল আগের চেয়েও নির্মম। পঞ্চাশের দশকের পর শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদির গুজরাটে মুসলমানরা এমন ভয়ঙ্কর দাঙ্গার সম্মুখীন হয়েছিল। ডিসেম্বরে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি ভারতীয় সংবিধানের স্পিরিটের বিরোধী এবং মুসলমান বিদ্বেষী একপেশে আইন হিসেবে সারাবিশ্বের নিন্দিত হওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় কংগ্রেস, বামপন্থী ও উদারপন্থী সব রাজনৈতিক দলগুলো এই বৈষম্যমূলক আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেনে আসে। মুসলমাদেরকে টার্গেট করা আইনের বিরুদ্ধে উদারপন্থী হিন্দুদের জনসমর্থন বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়া বিজেপি দিল্লীতে মুসলিম বিদ্বেষী দাঙ্গার সুত্রপাত করে একটি রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা চালায়। উগ্র জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় গিয়ে কিভাবে সরকার ও রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলে, কিভাবে উগ্রবাদী দলীয় ক্যাডারদের কাছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে তার জ্বলন্ত উদাহরণ দিল্লী দাঙ্গা। হাজার হাজার মুসলমান পরিবার উন্মত্ত দাঙ্গাকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর হটলাইনে যোগাযোগ করে পুলিশের কোনো সহায়তা পায়নি। চারদিনের দাঙ্গায় অর্ধশতাধিক মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আশিভাগই মুসলমান।
দিল্লী ম্যাসাকার ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের চেহারা আবারো বিশ্বের সামনে উন্মোচিত করে দেয়ার পর আভ্যন্তরীণ ও আন্তজার্তিক চাপের মুখে দাঙ্গা থামলেও করোনাভাইরাস মহামারীর দায় মুসলমানদের উপর চাপিয়ে আরেকটি বড় দাঙ্গা এবং ভারতীয় মুসলমানদের নানাভাবে হয়রানি করার একটি পরিকল্পিত তৎপরতা শুরু হয়। এটি শুধু ভারতেই নয়, ভারতীয় হিন্দুরা সারাবিশ্বে একযোগে মুসলিবিদ্বেষী প্রপাগান্ডা বাড়িয়ে দেয়। বিজেপি ক্ষমতায় থাকার কারণে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ভারতের বিশাল ডায়াসপোরায় হিন্দুত্ববাদীদের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ভারতের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি হচ্ছে তার বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্স। আর বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মূল বাজারই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো। এসব দেশের রাজপরিবারগুলো বরাবরই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে ভারতীয়দের প্রতি বেশ উদার। লাখ লাখ ভারতীয় কর্মী নিয়োগ দিয়ে তারা ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান কোনো একপাক্ষিক বিষয় নয়। বিদেশি কর্মীরা নিয়োগকারী দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে ওআইসিভুক্ত অনেক দেশই যেখানে বেকারত্ব ও অধিক জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ, সেখানে ভারতীয় হিন্দুদের নিয়োগ পাওয়া ভারতীয়দের প্রতি আরবদের উদারতারই বহি:প্রকাশ বটে। আরবদের এই উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির সুযোগে সেখানে অবস্থানরত হিন্দুত্ববাদী ভারতীয়রা পশ্চিমা জায়নবাদীদের অনুসরণে মুসলিম বিদ্বেষী অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। চলমান করোনাভাইরাস মহামারী সারাবিশ্বে যুদ্ধ উন্মাদনা, জাতিগত ও আঞ্চলিক সংহিংসতা থেমে গেলেও ভারতীয়দের মুসলিম বিদ্বেষ আগের চেয়েও বেড়ে গেছে। দিল্লীতে তাবলিগ জামায়াতের সমাবেশকে পুঁজি করে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়নোর দায়ে মুসলমানদের অভিযুক্ত করে ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাধারণ হিন্দুদের ক্ষেপিয়ে তোলার পাশাপাশি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একটি আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। তাবলিগ জামায়াতের সমাবেশ থেকে ভারতে করোনাভাইরাস ছড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে করোনাজিহাদ হ্যাশট্যাগ দিয়ে তাদের ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোর সংঘবদ্ধ তৎপরতা এবার মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে স্কলার ও সাধারণ মানুষের নজরে পড়েছে। এই করোনাকালে প্রথমবারের মত আরব সমাজে তাদের এই মতলবি তৎপরতার প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দুনিয়ায় হিন্দুত্ববাদিরা বিরূপ নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ‘মুসলমারা বাহক হিসেবে কাজ করছে’ এমন অভিযোগকে সামনে রেখে তাদের সূচিত ক্যাম্পেইন আরবদের পাশাপাশি পশ্চিমাদেরও নজর এড়াচ্ছে না। এ ধরণের অপতৎপরতার দায়ে গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন ভারতীয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের পর এ সপ্তাহে কানাডাতেও মসলিম বিদ্বেষী অপপ্রচারের দায়ে একজন ভারতীয় নাগরিক চাকুরী হারিয়েছেন।
নাইন-ইলেভেন তথা ২০০১ সাল থেকে আমেরিকা ও ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষী ইসলামোফোবিক অপপ্রচারের ধকল সামলে এই করোনার সময়ে পশ্চিমা দেশের বিভিন্ন শহরে প্রকাশ্য আজান প্রচারসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বি জনগোষ্ঠির প্রতি নমনীয়তা ও সহমর্মিতায় সামিল হতে দেখা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কানাডার ব্রাম্পটন সিটির মেয়র প্যাট্টিক ব্রাউন এই রোজায় মসজিদগুলোতে মাইকে আজান প্রচারের অনুমোদন দেয়। মেয়র প্যাট্টিক ব্রাউন তার টুইট বার্তায় বলেন, ১৯৮৪ সালের একটি আইনে যেখানে শব্দদূষণের মাত্রা ঠিক রেখে গির্জার ঘন্টা বাজানোর অনুমোদন ছিল, এখন তা সব ধর্মীয় সংস্কৃতির জন্য উন্মুক্ত করা হল। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় অন্টারিও ভিত্তিক একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানী ও ইমিগ্র্যান্ট কনসালট্যান্ট রিম্যাক্স-এর এজেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভুত রবি হুদা তার টুইট বার্তায় লিখেন, ‘এরপর কি হবে, রাস্তায় উট এবং ছাগলের জন্য আলাদা লেইন হবে, কোরবানির নামে বাড়িতে পশু জবাই করার অনুমতি দেয়া হবে এবং মেয়েদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবৃত করার আইন জারি করা হবে, শুধুমাত্র বোকাদের ভোট পাওয়ার জন্য?’ রবি হুদার এই মুসলিম বিদ্বেষী টুইটের বিরোধিতা করে কানাডার ্এন্টি-হেইট নেটওর্য়াকের তরফ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পর রিম্যাক্সের তরফ থেকে টুইটার বার্তায় বলা হয়, তারা রবি হুদার মতামত সমর্থন করেনা এবং রবি হুদাকে তাদের কোম্পানী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগের কয়েক সপ্তাহে আরব আমিরাত, কুয়েত ও ওমান থেকে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক চাকুরীচ্যুত হওয়ার পর মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে কানাডায় চাকুরী হারালেন ভারতীয় নাগরিক। দু’দশজন চাকুরি হারানো হয়তো বড় কোনো ঘটনা নয়। তবে কি কারণে ভারতীয়রা চাকুরী হারাচ্ছে, গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত হচ্ছে সেটা অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিমধ্যে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ভারতের গুজরাটে মুসলমান করোনা রোগীদের প্রতি প্রশাসনের বৈষম্যমুলক আচরণের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া এবং মুসলিম বিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন পাশের পর যখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত ভারতের এসব বৈষম্যমূলক তৎপরতার বিরোধিতা করেছিল, তখন মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশ শুধু নিরবতাই পালন করেনি, কোনো আরব দেশ নরেন্দ্র মোদিকে খেতাব দিয়ে সম্মানীত করতেও দেখা গেছে। এখন সে সব দেশের মানুষ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদিদের মুসলিম বিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে উঠেছে এবং তাদেরকে বহিষ্কারের দাবি ক্রমে জোরালো হয়ে উঠেছে। এই দাবির ঢেউ এখন সুদুর কানাডায় গিয়ে লেগেছে।
করোনাভাইরাসে যখন সারাবিশ্বে যুদ্ধ, জাতিগত সংঘাত ও অপরাধ প্রবণতা ৭০ ভাগ কমে এসেছে। জাতিসংঘের তরফ থেকেও যুদ্ধবিরতির আহŸান জানানো হয়েছে। অঘোষিতভাবেই তা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু ভারত এবং ইসরাইল। করোনাভাইরাস মহামারী ইসরাইলকেও আক্রান্ত করেছে। এর মধ্যেই তারা পশ্চিমতীরসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনী অঞ্চলগুলোকে ইসরাইলের সাথে একীভূত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাস এবং পবিত্র রমজান মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিক কাশ্মীরে চারমাসের কার্ফিউ ও লকডাউনের মধ্যেই নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পুলওয়ামায় ভারতীয় যৌথ বাহিনীর অভিযানে হিজবুল মুজাহিদিন গ্রæপের নেতা রিয়াজ নাইকুকে হত্যা করার ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ইতিপূর্বে কাশ্মিরী নেতা বুরহান ওয়ানিকে এরূপ অভিযানে হত্যার পর কাশ্মির পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠলে সেখানে সামরিক আইন, কেন্দ্রীয় শাসন জারির ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ও স্বায়ত্বশাসন রদ করে বিজেপি সরকার। সেই থেকে গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কাশ্মির পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। মুক্তিকামী কাশ্মিরীদের কষ্ঠস্বর রুদ্ধ করার জন্য সেখানকার টিভি ও গণমাধ্যম, ইন্টারনেট-মোবাইলফোন পর্যন্ত বন্ধ করে রাখা হয়। এমন অন্ধকারে কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনী হাজার হাজার কাশ্মিরী তরুনকে ধরে নিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছিল। সেখানে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান ও গণহত্যা চালানো হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। চলমান করোনাভাইরাস মহামারীতে কাশ্মিরিদের নিরাপত্তায় ভারত সরকারের ভ’মিকা ইতিমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তার উপর যৌথ বাহিনীর সেনা অভিযানে রিয়াজ নাইকুর মত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী কাশ্মিরীকে হত্যার মধ্য দিয়ে ভারতের বুঝিয়ে সরকার বুঝিয়ে দিল প্রাণঘাতী করোনা মহামারী বা রমজান মাসের বিশেষত্ব বা বিশ্বমানবতার দাবির প্রতি তাদের কোনো ভ্রæক্ষেপ নেই। মুসলমানদের প্রতি অমানবিক নিপীড়নমূলক অবস্থান বিজেপি সরকারের রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অংশ। এই করোনা মহামারীতে জেনোফোবিয়া ও বিদ্বেষের সুনামি বন্ধ করার আহŸান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। অন্যদিকে পশ্চিম তীর ও গাজাকে ইসরাইলের অন্তভর্’ক্ত করতে নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকারের পদক্ষেপকে বেশিরভাগ ইহুদি সমর্থন করছে না বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে জানা যায়। কমান্ডার্স ফর ইসরাইলস সিকিউরিটি নামের সাবেক ইসরাইলী সেনা কমান্ডারদের দ্বারা গঠিত সংগঠণ থেকে পরিচালিত জরিপে ইসরাইল সরকারের পদক্ষেপ শতকরা ৯০ভাগ ইহুদিই সমর্থন করছে না। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ইসরাইল ও ভারতের মুসলিম বিরোধি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনী ও কাশ্মিরীরা রাজপথে নেমে এসেছে। যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু এবং হিন্দুত্ববাদি মোদি সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতি সাধারণ ইহুদি এবং সাধারণ ভারতীয়দের সমর্থন ক্রমে ক্ষীন হয়ে আসছে। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের বশংবদ শক্তির পায়ের তলার মাটি সরে যেতে শুরু করেছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর এই কঠিন সময় সারাবিশ্বের মানুষের বোধ-বুদ্ধি, উপলব্ধি ও চেতনা জগতের অনেক কিছুই বদলে যেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জেনোফোবিয়া ও ইসলামোফোবিয়া কনস্পিরেসির গতানুগতিক গাইডলাইন ভেঙ্গে পড়ছে। সেই সাথে নিওকনজারভেটিভদের ইসলামোফোবিক তৎপরতা পশ্চিম থেকে ভারতে চালান হয়ে যাওয়ার বাস্তব পরিবর্তনের প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। করোনা মহামারীর প্রভাবে সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়াসহ সংঘাতপূর্ণ সীমান্তগুলোতে যুদ্ধের রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেলেও মুসলমানদের উপর ফিলিস্তিনে ইসরাইলী আইডিএফ এবং কাশ্মীর ও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিবর্ষণ থেমে যায়নি। ইতিমধ্যে প্রথমবারের মত ওআইসি দেশগুলোর পক্ষ থেকে ভারতীয় নাগরিকদের মুসলিম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা এবং ভারতের মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে ভারত সরকারকে সর্তক করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে কিছু সংখ্যক হোয়াই-টকলার ভারতীয় চাকুরি হারিয়েছেন। করোনার প্রভাবে এমনিতেই প্রবাসি শ্রমিক নিয়োগ এবং নতুন কর্মসংস্থানে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক সমাজ ও নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টরা ভারতীয়দের মুসলিম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা পরিকল্পনার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠায় সামনের দিনগুলোতে লাখ লাখ ভারতীয় শ্রমিকের কর্মসংস্থানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এসব বিষয় সামনে রেখেই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক রেটিং সংস্থা মুডিস’র রেটিংয়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতিতে শুণ্য প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বানি করা হয়েছে। করোনা মহামারীর প্রভাবে বিশ্বের সব অর্থনীতিই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চলমান অর্থনৈতিক বিশ্বায়ণ এবং সমাজ বাস্তবতায় ব্যাপক রদ বদলের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমন ও মৃত্যুর হার ভারতে আশ্চর্যজনকভাবে কম হলেও ভারতের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব চীন বা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আভাস দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদিদের মুসলিম বিদ্বেষী অপপ্রচারের ক্যাম্পেইন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ায় ভারতের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। হিন্দুত্ববাদীরা যেভাবেই চিন্তা করুক একটি বৈশ্বিক মহামারীর আন্তর্জাতিক সংকটে সব জাতিকে পারস্পারিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।
[email protected]



 

Show all comments
  • Sagor Mamun ১৩ মে, ২০২০, ২:৩২ এএম says : 0
    এটাই প্রকৃত নোংরা ভারত |
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ১৩ মে, ২০২০, ২:৩৩ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ ,এয়া আল্লাহ ইন্ডিয়া সহ পৃথিবীর সকল মুসলিমদেরকে আপনার রহমত দিয়ে হেফাজত করুন।আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir ১৩ মে, ২০২০, ২:৩৩ এএম says : 0
    জাগো মুসলমান জাগো
    Total Reply(0) Reply
  • Mohamed Rabiul Hassan ১৩ মে, ২০২০, ২:৩৩ এএম says : 0
    Inshallah we are wait to see india economic crisis coming
    Total Reply(0) Reply
  • Zafar Iqbal ১৩ মে, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
    বিশ্বের কলংক দেশটি এরা নিপাত যাবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুম ১৩ মে, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
    তোদের কর্মফল তাদেরকে ভোগ করতেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী মোঃ সাহাব উদ্দিন ১৩ মে, ২০২০, ৪:৪৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ্ ইসলামের শত্রু মোদীর হাত থেকে ভারতের মুসলমানদের রক্ষা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৩ মে, ২০২০, ১:৪৫ পিএম says : 0
    O´Allah wipe out muslim killer Modi and his RSS from India and save the muslim and wipe out from Kashmir by corona virus. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন