পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের তরফে এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যাকেজের অর্থ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প সুরক্ষায় ব্যয় করা হবে। অবশ্য এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর তা বাস্তবায়নে নানা সংকট, জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যাতে প্রণোদনার সুফল যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ছাড় সহজ ও দ্রুত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হলেও কবে সেটা হবে, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিল্পের মালিকরাই কেবল নয়, শ্রমিক-কর্মচারীরাও নানা দুর্বিপাক ও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেয়া ছাড়াও কর্মহীন ও অসহায় লাখ লাখ মানুষকে ত্রাণসহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নগদ সহায়তা প্রদানের উদ্বোধন করা হবে আগামী ১৪ মে। ত্রাণ কার্যক্রম আগেই শুরু হয়েছে, যদিও ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি, চুরি ও লুটপাটের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত ত্রাণপ্রাপকের একটা বড় অংশই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারী দলের জনপ্রতিনিধি, নেতা ও পাতিনেতারা ত্রাণ সামগ্রী লুটেপুটে খাচ্ছে। দারিদ্র, অসহায়, কর্মহীন ছাড়াও আমাদের সমাজে এমন এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা দরিদ্র ও নিম্নাবিত্তের পর্যায়ে পড়েনা। তাদের পক্ষে কারো কাছে হাতপাতা কিংবা ত্রাণসহায়তা নেয়া সম্ভব হয়না সামাজিক অবস্থানগত কারণে। এই শ্রেণীর মানুষের সংকট ও সমস্যা কারো কাছে উল্লেখযোগ্য নয়। তারা নিরবেই তাদের অভাব ও কষ্ট ভোগ করে থাকে। আমাদের দেশে লাখ লাখ আলেম ও হাফেজ আছে, যারা ন্যূনতম আয়ে সন্তুষ্টির সঙ্গে জীবন-যাপন করে থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের জীবন-জীবিকায় টান পড়েছে। দেশের প্রায় ৪০ হাজার মাদরাসা-মক্তবের শিক্ষক-কর্মচারীরা দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে। এই আলেম, হাফেজ, শিক্ষক ও কর্মচারীদের যত্রতত্র সাহায্যপ্রার্থী হওয়া অসম্ভব। দেশে প্রতিষ্ঠানিক ও অপ্রতিষ্ঠানিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ৬ কোটির ওপর। এদের মধ্যে ৫ কোটির বেশি অপ্রতিষ্ঠানিক শ্রমিক, যাদের আয়-রোজগারের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। এই শ্রেণীর শ্রমিকেরা সবচেয়ে ভারনারেবল। দেশে কার্যত সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ। বড় প্রকল্প থেকে শুরু করে মাঝারি ও ক্ষুদ্র সকল প্রকার প্রকল্পের কাজই বন্ধ। এর ঠিকাদাররা যেমন কঠিন পরিস্থিতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে তেমনি লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীও সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারদের মধ্যে এমন একটি অংশ আছে, যাদের আর্থিক অবস্থান নিম্নমধ্যবিত্তের কাছাকাছি। তাদের আর্থিক সংগতি নি:শেষ প্রায়। তাদের অধীনস্থ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া তাদের পক্ষে কঠিনই নয়, অসম্ভব বটে।
যারা হতদরিদ্র, অসহায়, এতিম, কর্মহীন তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা সরকারের যেমন অপরিহার্য দায়িত্ব তেমনি যারা বিত্তবান ও সঙ্গতিসম্পন্ন, তাদেরও একান্ত কর্তব্য। এর বাইরে যারা আছে সেই আলেম, হাফেজ, কর্মহীন ও সংকটাপন্ন লাখ লাখ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা দেয়া, ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তা দেয়া একই সঙ্গে সরকার ও ধনবানদের অনিবার্য কর্তব্যকর্মের মধ্যেই পড়ে। আলেম, হাফেজ, ইমাম ও মোয়াজ্জিন আমাদের সমাজে বিশেষ সম্মানের অধিকারী। বিপদাপদে তাদের সাহায্যপ্রার্থী হওয়াকে তারা সম্মানজনক মনে করে না। সমাজের আরো অনেকেই এটা পছন্দ করে না। বস্তুতপক্ষে এসব মানুষের সাহায্য-সহযোগিতার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কাজেই, তাদের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা সরকারের নেয়া প্রয়োজন। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানী ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলের শত শত মসজিদভিত্তিক নূরানী মক্তব, হিফজখানা ও মহিলা মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী, মসজিদের মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বলা বাহুল্য, দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মক্তব, হিফজখানা, ও মাদরাসার অবস্থাও ভিন্নতর নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৭ হাজার কওমী মাদরাসার জন্য প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলেও অনুরূপ বরাদ্দ দেয়া উচিৎ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানত : দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত : করোনা যেহেতু প্রাণঘাতী রোগ, সুতরাং সর্বাগ্রে এই রোগ থেকে জীবন সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার পরীক্ষা বাড়াতে হবে, এর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নির্ভরযোগ্য, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে, যতটা সম্ভব ঘরে থাকা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত : করোনাকারণে সমাজের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে যে আর্থিক অসঙ্গতি সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে হবে। তাদের খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যসমগ্রী যোগান দিতে হবে। এখানে উভয় ক্ষেত্রে জীবন রক্ষাই প্রধান ও একমাত্র দায়িত্ব। ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, করোনাকারণে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ কেবল কর্মই হারাবে না, বিপুল সংখ্যক মানুষ দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ শিকার হবে। এই আশংকার প্রেক্ষাপটে দুর্ভিক্ষ রুখতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তার মজুদ-সংরক্ষণ বাড়াতে হবে। জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। তাই, করোনা ও করোনা পরিস্থিতি থেকে জীবনকে অবশ্যই রক্ষা ও নিরাপদ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।