Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

করোনা : আরব দেশগুলোতে অভিবাসীদের প্রতি বাড়ছে বৈরিতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২০, ২:২২ পিএম

পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্তদের অধিকাংশই অভিবাসী শ্রমিক। করোনার এই প্রাদুর্ভাবকালে তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটির শুরুই করা হয়েছে কুয়েতের একটি টক শোর আলোচনার বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। টক শোর আলোচকরা এমন একটি বিষয় তুলে ধরেন, যার ফলে করোনাভাইরাস মহামারী জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসে। ওই আলোচনায় যে প্রশ্নটি উঠে আসে, তা হলো তেলসমৃদ্ধ ছোট্ট দেশটির এখনো বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করা উচিত কি না। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই এসব বিদেশি শ্রমিক, আর লকডাউনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তও তারা।
আহমাদ বাকের নামে টক শোতে উপস্থিত এক আলোচককে বলতে শোনা যায়, ‘কুয়েতের মলগুলোতে যান, সেখানে কখনো কোনো কুয়েতিকে কাজ করতে দেখেছেন? না, সেখানে সবাই অন্য দেশের নাগরিক।’ আলোচকের এমন বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোর অবস্থার। টক শোতে আলোচনার মধ্যেই কিছু সময় পরই ক্যামেরার ফ্রেমে ঢুকে যান দক্ষিণ এশীয় একজন কর্মী। তিনি ট্রেতে করে অতিথিদের চা পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান চলার সময় তিনবার ওই শ্রমিককে দেখা গেছে ক্যামেরায়। আলোচকদের মধ্যে একজনকে ছাড়া আর কাউকেই ওই দক্ষিণ এশীয় কর্মীটির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হতে দেখা যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মূলত নির্ভরশীল এশিয়া, আফ্রিকা ও দরিদ্র আরব দেশগুলো থেকে যাওয়া বিপুলসংখ্যক বিদেশি শ্রমিকের ওপর। টি-বয়, গৃহকর্মী, চিকিৎসক, নির্মাণশ্রমিক, ডেলিভারিম্যান, শেফ, নিরাপত্তাকর্মী, নাপিত, হোটেলকর্মী এসব দেশে এমন আরও অনেক পেশায় নিয়োজিত লাখ লাখ বিদেশি। কখনো কখনো দেশগুলোতে স্থানীয়দের ছাপিয়ে যায় অভিবাসীর সংখ্যা। ধনী আরবরা যে কাজগুলো করে না, বিদেশি শ্রমিকরা সে সবই লুফে নেন। আর সেই উপার্জনেই তাদের দেশে পরিবারগুলো পায় স্বাচ্ছন্দ্য।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তেল বিক্রিতে ধস, বিদেশি শ্রমিকদের আবাসস্থলগুলো ভাইরাস সংক্রমণের মূল ক্ষেত্র হয়ে ওঠা আর স্থানীয় নাগরিকরা প্রথমে নিজেদের সুরক্ষা দাবি করায় চিত্রটা পাল্টে গেছে এসব দেশে। বিদেশি, নাকি স্থানীয় নাগরিক কার অধিকার আগে, মহামারী এখন এ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। মহামারীর এ সময়ে আরব দেশগুলোতে বিদেশিদের প্রতি বৈরিতাও বেড়ে গেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশি শ্রমিক না থাকলে সেই শূন্যতা স্থানীয়দের দিয়ে পূরণ করার উপায়টা কী? তা ছাড়া বিদেশি শ্রমিক আমদানি এবং তাদের অবস্থান নির্ধারণ করারও দাবি তোলা হচ্ছে। ওয়াশিংটনের আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের ফেলো ইমান আল হুসেইনের মতে, ‘উপসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত দেশগুলো তেলের দাম ও বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে। করোনাভাইরাসের কারণে এই দুই খাতের ওপরই আঘাত এসেছে। ভাইরাসের কারণে এমন সব ইস্যু সামনে চলে এসেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে ধামাচাপা রয়েছে।’
বিভিন্ন আরব দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা ২০১৭ সালে তাদের দেশে যে অর্থ পাঠিয়েছেন, সব মিলিয়ে তার পরিমাণ ১২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। করোনাভাইরাস সরাসরি তাদের এই উপার্জনে আঘাত হেনেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে লকডাউনের কারণে এক লাখের মতো বিদেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তাদের এখন সরকার থেকে দেওয়া যথসামান্য রেশনের খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে তাদের পরিবারগুলো পড়েছে অর্থসংকটে। আরেক দল শ্রমিক ডরমিটরিতে গাদাগাদি করে থাকার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ওয়াশিংটনের আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কারেন ইয়ং বলেন, ‘তিন মাস আগে যে সক্ষমতা ছিল, এখন তার অর্ধেক নিয়ে চলছে দেশগুলো এবং সামনে আরও কাটছাঁট হবে। ফলে তারা নিজেদের নাগরিক এবং বিদেশিদের জন্য কতটুকু করতে পারবে তা আরও আলোচনার দাবি রাখে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ