Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আঘাতের ঝুঁকি, জাল খতিয়ান ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

মার্কিন অর্থনীতি- শেষ পর্ব

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে বন্ড কিনে নিয়ে আমেরিকার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আপাত দেনা থেকে মুক্ত করেছে এবং তাদের গণহারে দেউলিয়া হওয়া ঠেকিয়েছে। শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়েছে এবং সূচক আরোহণ করেছে। যদিও কর্পোরেট-বন্ডের বাজারে হাত দেয়ায় অর্থনীতি আরো গভীর মন্দায় পতিত হবে, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এছাড়া কিছু করার ছিল না।

তবে, আমেরিকাতে সরকারী বন্ডের যোগান দেয়া ইতিবাচক বিষয় নয়। এগুলো জাপান এবং ইউরোপেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক। তবে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ারগুলি একট্টা করে পদক্ষেপটিকে উৎসাহিত করেছেন। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লাভের জন্য শেয়ার ধরে রাখলে অর্থনাশ সুনিশ্চিত এবং মূল্যস্ফীতি যদি বৃদ্ধি পায় তবে লোকসান আরো বেদনাদায়ক হবে। সুতরাং শেয়ারগুলির বিষয়ে এটাই উত্তম সিদ্ধান্ত। তাদের নগদ আর্থ খাটানোর মতো অন্য স্থান নেই।

লাভের ঝুঁকি নেয়ার কারণে মার্চের শেষের দিকে শেয়ারের দাম কমে গিয়েছিল। তারপরেও শেয়ারের দরে সাম্প্রতিক বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মহামারীর আগেও বাজারটি ভারসাম্যহীন ছিল এবং এখন আরো বেশি। ব্রিটেন এবং ইউরোপের পূঁজিবাজার যানবাহন, ব্যাংকিং এবং শক্তির খাতের মতো ঝামেলাযুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জটলায় পিছিয়ে পড়েছে এবং একক মুদ্রা ব্যবস্থার কারণে নতুন করে স্নায়বিক চাপে পড়েছে।

আমেরিকাতে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে এসএন্ডপি ৫০০’র সূচকে ৫ শতাংশে এগিয়ে থাকা এলফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক এবং মাইক্রোসফ্ট’র মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটির ওপর আরো বেশি আস্থা রাখছেন। আনন্দের কথা এই যে, মুষ্টিমেয় এই ব্যবসাগুলোর জন্য নিরাশাজনক বিনিয়োগই পরিশেষে যে কোনো পরিস্থিতিতে টেকসই বলে প্রতিয়মান হয়েছে।

একটি পর্যায়ে এটি ভাল বিষয়। সম্পদ পরিচালকদের যথাসম্ভব সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য অর্থ লাগাতে হবে। তবে যেভাবে শেয়ারের দাম হুট করে চড়েছে এবং যেখানে এসে পৌঁছেছে, তাতে অসমাঞ্জস্য রয়েছে। আমেরিকান শেয়ারগুলি গত অগাস্টের তুলনায় এখন বেশি দামি। সব দেখে মনে হচ্ছে যে, বাণিজ্য এবং বিস্তৃত অর্থনীতি যথারীতি ব্যবসায় ফিরে আসতে পারে। তবে, এই ধরনের সম্ভাবনার সামনে অসংখ্য হুমকি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৩টি সব থেকে গুরুতর।

১ম টি হল: আঘাত পরবর্তী ঝুঁকি। এটি সম্পূর্ণভাবে সম্ভব যে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা আসবে। আমেরিকার জিডিপি গত ১ বছরের আগের তুলনায় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রায় ১০ শতাংশ কমে আসার শঙ্কার সাথে সাথে চরম মন্দার পরিণতি বহন করতে হবে। অনেক স্বতন্ত্র ব্যবসায়ী আশা করছেন যে, নির্মমভাবে ব্যয় কর্তন করে মূলধন রক্ষা এবং লম্বা বিরতির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। তবে সামগ্রিকভাবে এই কর্পোরেট কঠোরতা চাহিদাকে অবনমিত করবে। এর সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ৯০ শতাংশ সাধারণ স্তরের বহু নিচে সঞ্চলিত হচ্ছে।

২য় বিপত্তি হ›ল, জালিয়াতি। কয়েক বছরের সস্তা অর্থ এবং জাল আর্থিক সঞ্চালনাবিদ্যার ইতিহাস দেখায় যে, জাল খতিয়ান এখন আর তেমন কাজে আসবে না। ইতোমধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে এশিয়ার দুটি উল্লেখযোগ্য কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটেছে। একটি, লাকিন কফি নামে একটি চীনা স্টারবাকস হতে চাওয়া প্রতিষ্ঠান এবং অন্যটি হিন লিওং, সিঙ্গাপুরীয় পাওয়ার ব্যবসায়ী যে বিশাল লোকসান ঘটনা গোপন করেছে।

আমেরিকাতে একটি বড় জালিয়াতি বা কর্পোরেট পতন বাজারের স্থিতিশীলতা টলিয়ে দিতে পারে। ২০০১ সালে এনরনের ধসে বিনিয়োগকারীদের স্নায়ু বিকল হয়ে গিয়েছিল এবং ২০০৮ সালে লেহম্যান ব্রাদার্স শেয়ারবাজারের পতন ঘটিয়েছিল।

৩য় এবং সর্বাধিক উপেক্ষিত ঝুঁকি হ›ল রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই মন্দাটি ছোট সংস্থাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে এবং বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দেবে। মহামারীর আগেই সমস্যায় ছিল এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্কোচন বাড়বে।

সঙ্কট বলিদান দাবি করে এবং একটি বড় ঋণের বোঝা পিছনে ছেড়ে যায়। ঋণ পরিশোধের রাজনৈতিক হট্টগোল বেড়েই চলবে যদি, বড় ব্যবসাগুলি প্রস্তাবিত ভর্তুকিগুলো থেকে তাদের প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি আত্মসাত করে নেয়।

আপাতত, নিরেপেক্ষ বিনিয়োগকারীরা রায় দিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সাথে রয়েছে। তবে, বাজারের মেজাজ হঠাৎ করেই বদলে যেতে পারে, কারণ বিগত কয়েক মাসের এর অসাধারণ প্রমাণ মিলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মহামারী এবং এটি যে বিশাল অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, ১ মাস বয়সী গরম বাজার সেটির সম্ভাব্য খারাপ সংবাদগুলির মুখোমুখি যথেষ্টভাবে হতে পারেনি। এই শেয়ারবাজার নাটকের আরো কয়েকটি অধ্যায় অপেক্ষমান রয়েছে। (সমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ