মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ধাক্কা লেগেছে বিশ্বের সব দেশেই। এই ধাক্কা সামলাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কর্মীদের ছাঁটাই করে ফেরত পাঠাতে চাইছে। অবৈধদের আগে থেকেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ছাঁটাই করায় ফিরতে হবে আরও অনেককে। গত এপ্রিলের শুরু থেকে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ বেকার কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাঁচ-সাত লাখ কর্মী ফেরার আশঙ্কা করছেন। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাড়াতে পারে।
সউদী আরব ও কুয়েতের পাঁচ প্রবাসী কর্মী ফোনে বলেছেন, অভিবাসী কর্মীদের বেশির ভাগই চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। এখন কাজ নেই। অবৈধ ব্যক্তিরা কোনো কাজই পাচ্ছেন না। জীবন হয়েছে মানবেতর, অনেকেই দেশে ফেরার পথ খুঁজছেন।
ফেরত পাঠানোর জন্য কুয়েত সরকার বাংলাদেশের অবৈধ কর্মীদের অস্থায়ী আটক শিবিরে জড়ো করেছে। শিবিরগুলোর বাসিন্দারা বলছেন, তাদের মোট সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার।
মাজ্জাত আটক শিবিরে থাকা মো. রায়হান শেখ ফোনেবলেন, ২২ দিন ধরে বড় একটা স্কুলঘরে গাদাগাদি করে ৬০০ জন আছেন। খাবারের কষ্টের কথা বললে পুলিশ বেদম মারছে। বিভিন্ন শিবিরে চারজন মারা গেছেন। তিনি বলেন, দূতাবাসে দিনে ফোন দিয়েও কাউকে পাই না। আমাদের বাঁচান।
ইতিমধ্যে সংক্রমণের ভয়ে জেল ও আটকশিবির খালি করে অবৈধ কর্মীদের পাঠানো শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ৬৯৫ জন ফিরেছেন। সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধে রাখতে হচ্ছে। ৬ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ফিরবেন প্রায় ২৯ হাজার জন, বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
সরকারের জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, অভিবাসী কর্মীদের প্রায় ৮০ ভাগই আছেন মধ্যপ্রাচ্যের আট দেশে। প্রবাসী আয়ের অর্ধেকের বেশি তাঁরাই পাঠান। কর্মী বেশি ফিরতে পারে সউদী আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত ও ওমান থেকে। এই পাঁচ দেশ বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি প্রবাসী আয়ের দেশের মধ্যে পড়ে। বাহরাইন, লেবানন আর জর্ডান থেকেও অনেক কর্মীকে ফিরতে হবে। জর্ডানে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করেন। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় কারখানায় কাজ বন্ধ, বেতন পাচ্ছেন না অনেকে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, করোনাকালে মধ্যপ্রাচ্যের তেলনির্ভর অর্থনীতি গত ৪০ বছরে সবচেয়ে বড় ধাক্কার মুখে পড়ছে। আর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) আরব দেশগুলোতে ৫০ লাখ লোক চাকরি হারাতে পারে।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাখ লাখ কর্মীর ফেরা ঠেকাতে সরকার যৌথ তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আরব দেশগুলো তা মানছে না।
প্রবাসীকল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিনজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক অদক্ষ। তাঁরা নির্মাণ খাতেই কাজ করেন বেশি। অর্থনৈতিক চাপে ব্যয় সংকোচনের কারণে দেশগুলোতে এই খাতের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য খাতের শ্রমিকেরাও কাজ হারিয়েছেন। আবার নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকেরাও এখন বেকার। হাজার হাজার শ্রমিক দেশগুলোর সরকারি খরচে বাংলাদেশে ফিরতে নিবন্ধন করেছেন। দুই দিনে ১০টি উড়োজাহাজে কর্মী পাঠাতে চেয়েছিল বাহরাইন। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পর ধাপে ধাপে পাঠাতে রাজি হয়েছে।
এদিকে করোনার ভয়ে গত জানুয়ারি-মার্চে দেড় লাখের বেশি প্রবাসী শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। তাঁদের কাজে ফেরার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। গত দুই মাসে এক লাখের বেশি নতুন কর্মী যেতে পারেননি। বেকারের তালিকায় তাঁদের নামও উঠবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির খুঁটি প্রবাসী আয় বিপন্নতর হবে।
দূতাবাস সূত্র বলছে, দেশে ফিরতে বাধ্য করার জন্য সৌদি সরকার ইকামা বা কাজের বৈধ অনুমতিপত্রের মেয়াদ না বাড়িয়ে কর্মীকে অবৈধ করে দিতে পারে। ইকামার নবায়ন ফি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্য দেশগুলোও এমন নানা কৌশল নিতে পারে।
জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর হিসাবে (বিএমইটি), গত দুই বছর অভিবাসন কমছে। ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ১০ লাখ কর্মী। কমতে কমতে গত বছর সংখ্যাটা সাত লাখে ঠেকেছে। এ বছর ২৫ মার্চ পর্যন্ত বিমান চলাচল ছিল। দেড় লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে গেছেন। কিন্তু বিশ্বজোড়া লকডাউন শেষ হলেও কর্মী নেওয়ার হার অনেক কমতে পারে।
বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম বললেন, চলমান সংকট সমাধানে প্রবাসীকল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে কাজ করছে। তারপরও যাঁরা ফিরে আসছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষণ ও কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা ছাঁটাই করার আগে কর্মীদের অন্তত ছয় মাস সময় দিতে অনুরোধ করেছেন। আরব দেশগুলো সাড়া দিচ্ছে না। কর্মীদের জায়গায় রেখে ব্যবসা বা অন্য কোনো কাজে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। কোনো দেশ রাজি হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কয়েক হাজার লোক ফিরলে আলাদা কথা, কিন্তু কয়েক লাখ ফিরলে বিরাট সমস্যা হবে। তাই সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার আবার তহবিল দেওয়ার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
অভিবাসন খাতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকী বলছেন, বৈধ হোক আর অবৈধ, দুর্যোগের মধ্যে কোনো কর্মী ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তিনি বলেন, সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে কর্মী পাঠানো অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মিলে সমঝোতার জন্য বিশ্ব পর্যায়ে চাপ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে সাবেক কূটনীতিকদের নিয়ে একাধিক দল গঠন করে কৌশল স্থির করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।