পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ইয়েমেনের নারীরা। গণগ্রেফতার, হত্যা, ধর্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। দেশটির রাজধানীসহ ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল হুতি বিদ্রোহীদের দখলে। সেখানেই চলছে এসব নির্যাতন। মানবধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা জানান, দীর্ঘ পাঁচবছরের এ যুদ্ধে ক্রমেই নৃশংসতা বেড়েছে নারীদের ওপর। এর মধ্যে মেয়েরাই বেশি ঝুঁকিতে। ইয়েমেনের মানবাধিকার কর্মী এবং পিচ ট্র্যাক ইনেশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা রাশা জারহুম বলেন, ‘ইয়েমেনের নারীদের জীবনে ঘটতে থাকা অত্যন্ত কুৎসিত ও অন্ধকার দিক এটি। যুদ্ধ শুরুর আগে নারীদের রক্ষায় দেশটিতে কোন আইন বা প্রতিষ্ঠান ছিল না। নৈতিক ও গোত্রীয় কিছু নীতির মাধ্যমে নারীরা সুরক্ষা পেত।। কিন্তু যুদ্ধের ভয়াবহতা যতো বেড়েছে সে সব নিয়ম নীতি ভেঙ্গে পড়েছে।’ বছরের শুরুতে জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল তদন্তে খুঁজে পায়, যে সব নারী হুতি বিদ্রোহীদের বিরোধিতা করছে তারাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে হুতিরা সানায় অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান হিসেবে সুলতান জাবিন নামে এক লোককে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই গণগ্রেফতার ও নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। নারী নির্যাতন এখন যুদ্ধপারাধের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। হুতিরা নারী যোদ্ধাদের নিয়ে ‘জায়নাবিয়াত’ নামে একটি দল গঠন করেছে। তাদের কাজ হচ্ছে যে সব নারী হুতিদের বিরোধিতা করবে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়া। রাশা জারহুম বলেন, ‘ইয়েমেনের ইতিহাসে এমন ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতি আমরা এই প্রথম দেখছি।’ সামেরা আল-হুরির অভিজ্ঞতা ছিল এমন-রাজধানী সানায় একদিন কয়েকজন হুতি কর্মকর্তা হঠাৎ করেই আল-হুরিদের বাড়িতে হানা দেয় এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারা সামেরাকে একটি স্কুলের বেজমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে আরও কয়েকজন নারীকে আগে থেকেই বন্দি করে রাখা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা হতো, দেয়া হতো ইলেক্ট্রিক শক। চলতো আরো নানা শারীরিক নির্যাতন। তাকে মৃত্যুদন্ড ও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একেবারে শেষ মুহ‚র্তে তা বাতিল হয়। ৩৩ বছর বয়সী সামেরা আল-হুরিকে তিন মাস হুতি বিদ্রোহীরা বন্দি করে রাখে। পরে ক্যামেরার সামনে তাকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত থাকার স্বিকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। ইয়েমেনে পতিতাবৃত্তি আইনের চোখে অপরাধ। সংবাদ সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামেরা আল-হুরি নিজের ওই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। জানান, রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তাইজ স্ট্রিটে বিভিন্ন বাড়ি ও স্কুলে নারীদের বন্দি করে রাখার গোপন সেলগুলোর কথা। যেখানে কয়েকশ নারী আছে।তিনি বলেন, ‘নানা শারীরিক নির্যাতনের পাশপাশি নারীদের ধর্ষণও করা হয়। সেখানে অনেকের অভিজ্ঞতা আমার চেয়েও খারাপ। বন্দি নারীদের মধ্যে স্কুলের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, এমনকি কিশোরীরাও ছিল। হুতি বাহিনী আমার মাথা এমনভাবে টেবিলে ঠুকে দিতো যে, মুক্তির পর আমার চোখে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে।’ এপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।