Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা পরীক্ষায় ভুল-ত্রুটি কাম্য নয়

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

করোনায় সন্দেহভাজনদের টেস্টের ফলাফল নিয়ে নানা ধরনের অসঙ্গতি এখন দেখা দিচ্ছে। টেস্ট করার ক্ষেত্রে অনেকটা শৈথিল্য কিংবা অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সঠিকভাবে পরীক্ষার কাজটি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার নমুনা সংগ্রহও যথাযথ প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সোয়াব স্টিক ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিন কালেকশনের টিউব, যা যথাযথ নয়। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, আক্রান্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রদানে বেশ গরমিল দেখা যাচ্ছে। যে রোগীর নমুনাই দেয়া হয়নি, তাকে বলে দেয়া হচ্ছে পজেটিভ। আবার ১৪ দিন হাসপাতালে থাকার পর প্রথম পরীক্ষায় বলা হচ্ছে, নেগেটিভ এবং পরের পরীক্ষায় বলা হচ্ছে পজেটিভ। নমুনা সংগ্রহকারীদের অনেকেই নিজে না করে রোগীদের হাতে নমুনা সংগ্রহের কাঠি দিয়ে নমুনা নিচ্ছে। করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে যেমন বিভ্রাট সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি অনেকে ভুল ফলাফলের শিকার হয়ে মানসিক চাপের মধ্যে পড়ছে।
করোনার মতো অপ্রতিরোধ্য এবং প্রতিষেধকহীন এমন একটি ভাইরাস মোকাবেলা করার মতো অবস্থায় বিশ্বের কোনো দেশই ছিল না। সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় এ ভাইরাসটি অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে প্রায় পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষের আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুবরণের কারণে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। এ ভাইরাস কীভাবে মোকাবেলা করা হবে এবং এর প্রতিষেধকই বা কি, তা বুঝে উঠতে পারছিল না কেউই। ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় প্রাথমিকভাবে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়, একে অপরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অন্যদিকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেতেই থাকে। ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এর যথাযথ প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। যদিও সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক প্রতিষেধক উদ্ভাবিত হয়েছে, তবে এর মধ্যে ছয়-সাতটি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা কর্তৃক ব্যবহারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্ভাবিত রেমডিসিভির টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং তা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এটিই প্রথম করোনা প্রতিষেধক টিকা। তবে এসব টিকা আবিষ্কার এবং গবেষণা পর্যায়ে থাকা অবস্থায় করোনা প্রতিরোধে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো হিমশিম অবস্থায় পড়ে যায়। শুরুতে তাদের যথাযথ প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছিল না। পিপিই থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক উপকরণ সংগ্রহ করতে অনেক সময় লেগে গেলেও জোর চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং তারা পুরোপুরি প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে পৌঁছে। আমাদের দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার মতো পর্যাপ্ত সামর্থ্য না থাকলেও প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতেই অনেক গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ভাইরাস আমাদের দেশে আসবে না, এমন মনোভাব নিয়ে শুরু থেকেই প্রস্তুতিতে শৈথিল্য ও সময়ক্ষেপণ করা হয়। যখন পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে, তখন দেখা গেল, প্রস্তুতি বলতে কিছুই নেই। কীভাবে রোগী শনাক্ত করবে, কোথায় রাখবে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা হবে এ নিয়ে কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় তারাও শুরুতে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে তাদেরসহ নার্সদের পিপিই-এর ব্যবস্থা করলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের এলোমেলো অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা এখনও বলবৎ রয়েছে। অথচ এ সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে গুছিয়ে ওঠা উচিৎ ছিল।
করোনা মোকাবেলায় দেশে এখনও প্রশিক্ষিত নার্স, টেকনিশিয়ান ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। করোনার ভয়াবহতার কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরুতেই তালগোল অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। কোথা থেকে শুরু করবে, কীভাবে শুরু করবে, তা বুঝে উঠতে পারেনি। প্রায়োরিরিটি বেসিসে কোনটি আগে করবে, তা বুঝতেই অনেক সময় লেগে যায়। বোঝার পর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রেও নানা গড়িমসি শুরু হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার মতো রোগের টেস্ট করার বিষয়টি উন্নত বিশ্বে তো বটেই আমাদের দেশেও প্রথম। এ টেস্ট করার জন্য যে কিটের প্রয়োজন তা শুরুতে অনেক দেশেই পর্যাপ্ত ছিল না। নতুন কিট উদ্ভাবন করতে হয়। আমাদের দেশে পিসিআর-এর মাধ্যমে এ টেস্ট শুরু হয়। তাও এর কিট সংগ্রহ করতে হয়েছে বিদেশ থেকে। তবে দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটি দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিট আবিষ্কার করে। সরকারও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। তবে শেষের দিকে কিটের পরীক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও এখন এটি পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ অবস্থায় রয়েছে। এ পরীক্ষা সফল হলে অচিরেই ব্যাপক হারে এ রোগ নির্ভুলভাবে শনাক্তকরণের কাজ সহজ হয়ে যাবে। তবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যে ধরনের ভুল-ত্রু টি দেখা যাচ্ছে, তা কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি বাঞ্ছনীয় নয়। এ জন্য স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। তাদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে সুগঠিত করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন