Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২০, ১২:০৫ এএম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের ষোলটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনার এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এ বছরের শেষের দিকে বিশ্বে অনাহারে, অর্ধাহারে থাকা বা ভুখা-নাঙ্গা জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২৬ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে এ জনসংখ্যা সড়ে ১৩ কোটি। ভুখা-নাঙ্গা এ জনসংখ্যার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষও অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ কথাও বলেছে, খাদ্যের অভাবে বিশ্বের ৩ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। এসব সতর্কবার্তা এবং শঙ্কা খুবই ভয় এবং আতঙ্কের। বিশেষ করে বাংলাদেশ এসব শঙ্কার মধ্যে থাকায় ভয়টা বেশি এবং এ ভয় অমূলক নয়। মানুষের মধ্যে ক্ষুধা বিস্তৃত হওয়া এবং খাবারের জন্য হাহাকার বৃদ্ধি সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতোমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা কোনোভাবেই ভালো আলামত নয়। দেশের কোথাও কোথাও অভাবী মানুষ ও ত্রাণ প্রত্যাশীদের দ্বারা খাবার এবং ত্রাণ সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাকে আপাত দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হলেও তা যে বড় ধরনের ঘটনা বা তীব্র খাদ্য সংকট সৃষ্টির পূর্বাভাস, তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তারা যে পেশাদার ছিনতাইকারী বা লুটেরা তা নয়, তারা অভাবী মানুষ। করোনার কারণে অচল হয়ে পড়া এসব নিরুপায় মানুষ উপায় খুঁজে না পাওয়ার অনিবার্য উপায় হিসেবে খাবার কেড়ে নেয়ার পথ অবলম্বন করেছে। আগমীতে যে খাবার কেড়ে নেয়ার মতো এমন ঘটনা সম্প্রসারিত হবে না, তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। শুধু খাবার কেড়ে নেয়া নয়, এ নিয়ে যদি মারামারি এবং হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এক যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা আমরা দেখেছি। আর এ-তো খাবারের অভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের কাড়াকাড়ি। যাকে বলে, ‘খাদ্যযুদ্ধ’। এ যুদ্ধ যে কোনো যুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর। এ যুদ্ধ কোনো নিয়ম-কানুন মানে না। সমাজের সর্বত্র এক ভয়াবহ অরাজকতা সৃষ্টি করে অকল্পনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণে ক্ষুধার্থ মানুষ কোনো কিছুর পরোয়া করে না। অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত হয় না। অসহায় পিতা যখন ক্ষুধার্ত সন্তানের দিকে তাকায়, তখন কি সে নিজের জীবনের মায়া করে? খাদ্যের সন্ধানে পাগলের মতো ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তখনই অরাজকতা দেখা দেয়। এই যে খাবার যারা ছিনিয়ে নিয়েছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাদের মধ্যে সন্তানের ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পারা কোনো পিতাও হয়তো রয়েছে। আর যাদের মধ্যে আত্মসম্মান বোধ খুব বেশি প্রখর, তারা নীরবেই চোখের পানি ফেলছে। এদের সংখ্যাটাই বেশি। তবে ক্ষুধার কাছে তারা কতক্ষণ আত্মসম্মান ধরে রাখতে পারে, তাই দেখার বিষয়। তাদের এই বাঁধ যদি ভেঙ্গে যায়, তখন কী পরিস্থিতি হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। তার আলামত এখনই একটু একটু টের পাওয়া যাচ্ছে।
মানুষ যদি তীব্র খাদ্য সঙ্কটে পড়ে, তখন কারো কারো মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দেখা দেয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানামুখী অপরাধ বৃদ্ধি পায়। বিশ্লেষকরা এমন আশঙ্কা এখনই করছেন। তার অর্থ হচ্ছে, আগামীতে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। যদিও সরকারের তরফ থেকে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। সরকারের এ দাবি অমূলক নয়। যথেষ্ট মজুদ আছে। গুদামে ১৫ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য আছে। তারপরও মানুষের মধ্যে খাবারের জন্য হাহাকার বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? এর কারণ খাবার যেভাবে বিতরণ করা হচ্ছে, তা যথাযথভাবে হচ্ছে না। বণ্টন প্রক্রিয়ায়গলদ রয়েছে। এতে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে ত্রাণ না পেয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছে। এসব অভাবী মানুষের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সেসব মানুষ, যাদের কখনো কারো কাছে হাত পাততে হয়নি কিংবা সরকারি রেশন বা রিলিফের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। করোনা এসব মানুষকে এই কাতারে নামিয়ে দিয়েছে। ফলে হাত পাততে অনভ্যস্ত এসব মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ নিজের সঞ্চিত যৎসামান্য অর্থকড়ি শেষ করে এখন সন্তান-সন্ততি নিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছে। একদিনের খাবার কোনো রকমে যোগাড় করতে পারলেও পরের দিন কী খাবে, এ দুঃশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। যদি এমন একটি পরিবারের কথা চিন্তা করা হয়, যেখানে বাবা-মা এবং ছোট ছোট দুটি ছেলে-মেয়ে। বাবা কোনো মার্কেটের ছোট্ট একজন দোকানদার। মর্কেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, তার আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের যেটুকু সঞ্চয় ছিল, তা শেষ। এখন সে কী করবে? ঘর ভাড়া দিবে কীভাবে আর সন্তান দুটিকে খাওয়াবেই বা কীভাবে? সে না পারছে হাত পাততে, না পারছে সন্তানের খাবার জোগাড় করতে। এ অবস্থায় তার কি মাথা ঠিক থাকার কথা? তার মতো এমন অসহায় অবস্থার মধ্যে এখন অসংখ্য মানুষ পড়েছে। লকডাউনের মধ্যে বের হয়ে পড়া অনেকে যে উদভ্রান্তের মতো চলছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের বেশির ভাগই খাবারের সন্ধানে বের হয়েছে। করোনার চেয়ে ক্ষুধা তাদের কাছে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এসব মানুষের ঘরে কি সরকার খাবার পৌঁছে দিতে পারছে? সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে গিয়ে যদি এসব মানুষ নিরুপায় হয়ে খাবার ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কি তাদের দোষ দেয়া যাবে? যাবে না। আবার সরকারকেও পুরোপুরি দোষ দেয়া যাবে না। কারণ, এ ধরনের মানুষকে কীভাবে সাহায্য করতে হয়, এ অভিজ্ঞতা সরকারের নেই। সরকারের অভিজ্ঞতা শুধু ভিজিএফ আর কাবিখা’র খাদ্য বিতরণ করা। তাও সীমিত পরিসরে। এতে খাদ্য সামগ্রীও কম লাগে এবং বিতরণেও তেমন সমস্যা হয় না। এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্য যেমন বেশি লাগবে, তেমনি সরকারের স্টকেও টান পড়বে।
দেশে কি দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে? এমন শঙ্কা জাগানো প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে উঠছে। উঠাই স্বাভাবিক। কারণ, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কল্পনাতীতভাবে বেড়ে গেছে। যে জিডিপি নিয়ে সরকারের গর্বের সীমা ছিল না, তা যে দেশের ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মানুষের কাজে আসেনি, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। সরকারও বুঝতে পারছে। ফলে এখন জিডিপির কথা বাদ দিয়ে মানুষ বাঁচানোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হবে না বলে কেউ কেউ মনে করলেও, তা জোর দিয়ে বলতে পারছে না। এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে করোনার কবল থেকে কত দ্রুত বের হওয়া যাবে এবং সরকার ক্ষতি পোষাতে কত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তার ওপর। তবে চলমান ক্রাইসিস যদি নিয়ন্ত্রণে রেখে এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায়, পরবর্তীতে তা মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি অভাবী মানুষের খাদ্য জোগান দেয়া। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কর্যকর উপায় হচ্ছে, সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা। এর অভাব হলে যেমন একশ্রেণি বেশি পাবে, তেমনি আরেক শ্রেণি বঞ্চিত থেকে যাবে। ইতোমধ্যে এ চিত্র দেখা গেছে। সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার অভাবে একটি শ্রেণি যদি বঞ্চিত হতে থাকে, তখন এ শ্রেণি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। তখন তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। পাওয়া না পাওয়ার মাঝে সংঘাতের সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে মানুষের মধ্যকার খাদ্য শৃঙ্খল যে কোনো উপায়ে ঠিক রাখতে হবে। কারণ বিশ্বে এ পযর্ন্ত দুর্ভিক্ষে যেসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা খাদ্যের অভাবে হয়নি, হয়েছে খাদ্যের সঠিক বণ্টন প্রক্রিয়ার অভাবে। ’৭৪ যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে, তার অন্যতম কারণ ছিল খাদ্যের সুষ্ঠু বণ্টন প্রক্রিয়ার অভাব। সেই সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এ সময়ের মতো যেমন উন্নত ছিল না, তেমনি বেশুমার লুটপাট দুর্ভিক্ষকে তীব্র করে তুলেছিল। মানুষকে নিম্নমানের আটার জাউ খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হতো। সে সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার সরবরাহ করা ছিল অত্যন্ত দুরুহ কাজ। এখন আধুনিক ও মসৃণ যোগাযোগ ব্যবস্থার এই সময়ে খাবার দ্রুত পৌঁছে দেয়া কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা সুষ্ঠু বিতরণ নিয়ে। কিন্তু সমস্যা সেখানেই। ফলে ত্রাণ কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না।
দেশে খাদ্য সঙ্কট করোনা শুরুর আগ পর্যন্ত ছিল না। এখন যে আছে, তা নয়। যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তা সুষ্ঠু সরবরাহ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে। ইতোমধ্যে দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গের সবজি চাষিরা সবজি বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। যেখানে ঢাকায় টমেটো, বেগুন, করোলাসহ অন্যান্য সবজির কেজি গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সেখানে দুই টাকা এমনকি আট আনায়ও তারা বিক্রি করতে পারেনি। এই যে বিপুল সবজি, তার সঠিক সরবরাহ যদি নিশ্চিত করা যেত, তবে এই দুর্যোগের সময়টিতে অভাবকে সহনীয় পর্যায়ে যেমন রাখা যেত, তেমনি কৃষকরাও লাভবান হতো। সবজি উৎপাদনের আগ্রহ আরও বেগবান হতো। সমস্যা হচ্ছে, সরকার খাদ্য বলতে কেবল ধান-চাল বোঝে। এর স্বয়ংসম্পূর্ণতাকেই খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বোঝে। এক অর্থে তা ঠিক আছে। কারণ আমাদের দেশে প্রচলিত কথা আছে, ঘরে ভাত থাকলে নুন দিয়েও খাওয়া যায়। এটা একেবারে মৌলিক কথা। এ কথা এক সময়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল, যখন খাদ্যে এবং মাছ, গোশত, তরি-তরকারিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। এখন ভাতের সাথে এসব খাবার কম-বেশি নিয়মিত থাকে। আমাদের দেশ মাছ, গোশত, শাক-সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে করোনার এক আঘাতে এসবই যেন লন্ডভন্ড হতে শুরু করেছে। পুরোদেশ কার্যত লকডাউন হওয়ায় পরিবহন সঙ্কটে সবজি চাষিরা তাদের ফসল বিক্রি এবং সরবরাহ করতে পারছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়ায়, একদিকে সবজি বিক্রি করতে না পেরে কৃষক ফেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে মানুষকে উচ্চমূল্যে শাক-সবজি কিনে খেতে হচ্ছে। সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যদি এসব সবজি দেশব্যাপী বিশেষ করে রাজধানীতে সরবরাহ নিশ্চিত করা যেত, তবে কৃষকরা যেমন এই আকালের দিনে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতো, নতুন করে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হতো, তেমনি রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানের সবজি চাহিদাও মিটতো এবং সঙ্কট সামাল দেয়াও সহজ হতো। বলা বাহুল্য, দেশের সঙ্কটকালে খাদ্যপণ্যের সরবরাহের বিষয়টি যে সবার আগে নিশ্চিত করা জরুরি, এ বিষয়টির ওপর সরকারকে তেমন জোর দিতে দেখা যায়নি। এটা অনভিজ্ঞতা কিংবা দূরদর্শিতার অভাব ছাড়া কিছুই নয়। কিংবা ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতার অভাব।
যতই দিন যাচ্ছে, মানুষের অভাবও যে তীব্র হচ্ছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে। করোনার শুরুতে সমাজের অনেককে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া গেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, দিন যাওয়ার সাথে সাথে এসব সহযোগিতা কমে আসছে এবং তা হওয়ায়ই স্বাভাবিক। কারণ সবকিছু অচল হয়ে পড়ায় এবং তাদেরও টানাটানি শুরু হওয়ার শঙ্কায় হাত গুটিয়ে নেবে। ফলে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে নীরব দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এ থেকে রেহাই পেতে হলে সরকারকে এখনই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অভাবী মানুষের খাদ্য সঙ্কটের লাগাম টেনে ধরতে হবে। হঠাৎ করে একসঙ্গে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠির খাদ্য সহায়তা দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এক তৃতীয়াংশ মানুষকে খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে, তারপরও বিপুল জনগোষ্ঠি এ আওতার বাইরে রয়ে গেছে। এ জনগোষ্ঠি ত্রাণ বা রিলিফ নিয়ে অভ্যস্ত নয়। এদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে পারলে, দুর্ভিক্ষ বা অরাজক পরিস্থিতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা সামাল দেয়া সম্ভব হবে। সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে এবং সরকার ক্রাইসিস সময় অতিক্রম করতে আন্তরিক হলেও, যথাযথভাবে তা বিতরণ করতে না পারা ও চুরি ঠেকাতে না পারলে সঙ্কট আরও তীব্র হয়ে উঠবে। কাজেই খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে খাদ্যের যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এই বোরো মৌসুমে কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে তাদেরকে পরবর্তী ফসল ফলাতে উৎসাহী করে তুলতে হবে। আমাদের দেশে বোরো এবং আমন ধানের মাঝামাঝি সময়ে আউশ ধানের চাষ করা হয়। বিগত বছরগুলোতে এ ধান তেমন একটা উৎপাদন করা হয়নি। এই জরুরি পরিস্থিতিতে কৃষকরা যদি আউশ ধান চাষ করে ঘরে তুলতে পারে, তবে খাদ্য সঙ্কট কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা যাবে। এছাড়া শাক-সবজি, মাছ, গোশত, দুধ উৎপাদনকারীদের অগ্রহ ও উৎসাহ ধরে রাখা এবং বৃদ্ধি করতে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। অর্থাৎ কৃষি খাতটিকে যদি সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরতে পারে, তবে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা কিংবা দুর্ভিক্ষের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা ঠেকানো সহজ হবে। আমাদের এখন থেকেই অধিক ফসল ফলানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে বেশি বেশি ফসল ফলাতে তকিদ দিয়েছেন। এ মুহূর্তে এর কোনো বিকল্পও নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন