Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন উজাড়ে বাড়ছে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০২০, ৬:৪৭ পিএম

বন জঙ্গল ঢালের মত মানবজাতিকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। বনাঞ্চল উজাড়ে সেই ঢাল যখন আর থাকে না তখন বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পরিণতি নেমে আসে। বিজ্ঞানীরা গত অন্তত দুই দশক ধরে এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, মানুষ যত সীমা লঙ্ঘন করে বনে প্রবেশ করবে। বুনো প্রাণীদের হওয়া নানা রোগ তত বেশি মানবজাতিকে সংক্রমিত করবে।

এ কারণেই চীনরে উহানে নতুন একটি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর একটুও অবাক হননি ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব মাতো গ্রাসো-র ইকোলোজিস্ট আনা লুসিয়ে তোউরিনহো। তিনি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হলে কিভাবে বন এবং সমাজ অসুস্থ হয়ে পড়ে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো নতুন ভাইরাস সেটির প্রাকৃতিক আবাস ত্যাগ করে মানুষের দেহে প্রবেশ করে তখন ভীষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নতুন করোনা ভাইরাস সেটাই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে।’

গত ডিসেম্বরের শেষে দিকে উহানে প্রাদুর্ভাবের পর করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটাই সম্ভবত প্রথম বৈশ্বিক মহামারী যেটাতে পুরো বিশ্ব আক্রান্ত। সার্স-কোভি-২ নামের এই ভাইরাসটি কোনো বন্য প্রাণী (সম্ভবত বাদুড়) থেকে মানব দেহে প্রবেশ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়।

এ ধরনের ভাইরাস যখন নিজের উৎসতে আবদ্ধ থাকে (বিশেষ করে গভীর জঙ্গলে যেখানে মানুষ প্রবেশ করে না) তখন সেটি মানবজাতির জন্য একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়।কিন্তু এই প্রাকৃতিক প্রতিরোধ যখন ভেঙে ফেলা হয়। অর্থাৎ, যখন বন উজাড় হতে থাকে সমস্যার শুরু হয় তখন।

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগেই বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বন উজাড়ের কারণে বাদুড়ের আবাস বিনষ্ট হওয়া এবং সেগুলোর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে নানা নতুন করোনা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

এমনকি, পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারশর গবেষক আনিতা আফেল্ট তার গবেষণায় পরবর্তী মারাত্মক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এশিয়া মহাদেশ থেকে হবে বলে স্পষ্ট করে দেখিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গত ৪০ বছরে এশিয়া মহাদেশে মারাত্মকভাবে বন উজাড় করা হয়েছে।

২০১৮ সালে নিজের গবেষণাপত্রে আফেল্ট লিখেছিলেন, ‘দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (এসইএ) বিশ্বের ওইসব অঞ্চলের অন্যতম যেখানে উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক এবং যেখানে নির্বিচারে বন উজড় হচ্ছে। কোনো অঞ্চলে নতুন সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হওয়া বা পুরনো সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার সব রকম পূর্বশর্তই এসইএ অঞ্চলে স্পষ্ট।’ তোউরিনহো বলেন, ‘গভীর জঙ্গল আসলে এক ধরনের ঢালের মত। যেটা বাইরের মানুষদের বন্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বন্যপ্রাণী অনেক জীবাণু বহন করে যেগুলো নানা রোগব্যাধির কারণ। যখন আমরা বন টুকরো টুকরো করে ফেলি তখন সেটির গভীরে প্রবেশের রাস্তা তৈরি হয়। এটা টাইম বোমার মত। সময় শেষ হলেই বিস্ফোরণ ঘটে।’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ