মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনা ভাইরাস সউদী আরবকে স্বাস্থ্য সংকটের বাইরে আরো দু’টি বড় সংকটে ফেলেছে। প্রথমত, জ্বালানি তেলের দামের পতন এবং দ্বিতীয়ত, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
নতুন করোনা ভাইরাসের বিস্তার নানাভাবে পর্যুদস্ত করছে সউদী আরবকে। এর একটি জ্বালানি তেলের পড়তি দাম। সেইসঙ্গে চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমাতে হয়েছে। সম্প্রতি ওপেক ও তার মিত্ররা প্রতিদিন ৯.৭ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন কমিয়েছে। তবে সমস্যা শুধু সেখানেই নয়। তাদের সামনে এখন সমস্যা নানাবিধ।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সউদী আরবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে দশ হাজার। মারা গেছেন ১০৩ জন। শঙ্কার কথা হলো, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যেখানে ১৭ এপ্রিল দেশটিতে কোভিড আক্রান্ত ছিলেন সাত হাজার ১৪২ জন, সেখানে পরের চারদিনে আক্রান্ত আরো এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৫০ জনই রাজপরিবারের সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, রাজপরিবার খুব দ্রুত আক্রান্ত হবার কারণেই দেশটিতে করোনাকালীন বিধিনিষেধ জলদি আরোপ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মক্কা ও মদিনা। এছাড়া হজ নিয়েও তাড়াহুড়ো না করতে সারাবিশ্বের মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
রিয়াদে ২৪ ঘন্টা আর সারাদেশে দুপুর তিনটা থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি আছে। বিশেষ কারণ ছাড়া এক শহর বা প্রদেশ থেকে অন্য শহর বা প্রদেশে যাতায়াতও বন্ধ। কিন্তু দেশটির প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক গাদাগাদি করে থাকেন। তারা সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন। অনেক সউদী কোম্পানি তাদের ছাঁটাই করে দিয়েছে কিংবা বেতন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসেবে, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি প্রবাসী শ্রমিক কাজ করেন। এরা করোনা সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সউদী রাজপুত্র ও সিংহাসনের উত্তরাধিকার মোহাম্মদ বিন সালমানের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংস্কারকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে করোনা। সম্প্রতি তিনি বেশ কিছু সংস্কার এনেছেন। নারীদের আরো বেশি অধিকার দিয়েছেন। তাঁর এসব উদ্যোগ পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করেন, এসব কারণে কট্টরপন্থিদের সঙ্গে সালমানের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
তবে এই সংকটের সময় মানুষ ওয়াহাবিদের প্রতি আরো বেশি ঝুঁকতে পারেন, বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে রাজপরিবারের সঙ্গে ওয়াহাবিদের খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। দীর্ঘ সময় রাজপরিবারের সঙ্গে সখ্যের কারণে রাজনৈতিকভাবেও প্রভাবশালী ওয়াহাবিরা। উলটো দিকে সউদী পরিবারের অনেক নীতিগত বিষয়ে জনমত গড়ার কাজে সাহায্য করেছেন এই ধর্মীয় নেতারা।
লন্ডন স্কুল অফ ইকনোমিক্সের ধর্মীয় নৃতত্ত্ববিদ মাদাউয়ি আল-রাশিদের মতে, শুধু বিশ শতকেই ৩০ হাজারের বেশি ফতোয়া জারি করা হয়েছে। এসব ফতোয়ার মাধ্যমে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের বিভিন্ন বিষয়ে একটি অবস্থান নেয়া হয়েছে বলে তাঁর ‘কনটেস্টিং দ্য সউদী স্টেট' বইয়ে লিখেছেন আল-রাশিদ।
রাজপুত্র সালমানের ভিশন ২০৩০-তে ওয়াহাবি মতবাদকে কিছুটা শিথিল করার পরিকল্পনা ছিল। রাজপুত্র জানেন, সুন্নি ইসলামের এই কট্টর মতবাদ নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশেই, বিশেষ করে সউদীর ব্যবসায়িক মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর আপত্তি আছে। একটি আধুনিক ও বিশ্বজনীন রাষ্ট্র তৈরি করতে পারলে শুধু ব্যবসায়িকই নয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কও আরো গভীর করা সম্ভব।
কিন্তু করোনা সংকট মোকাবিলায় আবারো সেই ধর্মীয় নেতাদের শরণাপন্নই হতে হচ্ছে রাজপরিবারকে। এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ধর্মীয় নেতা আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মেদ আল-মুতলাক করোনা বিষয়ে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। কেমন করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সেই বয়ানও দিচ্ছিলেন তারা। এমনকি কেমন করে হাত ধুতে হবে সরকারি সংস্থাগুলো এমন ভিডিওগুলোও বানাচ্ছে তাদের নিয়ে।
ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী, ওয়াহাবিদের প্রভাব ক্রমশই কমিয়ে আনা হচ্ছিলো। সালমানের এই পরিকল্পনা মূলত অর্থনৈতিক। আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ডের বলছে, আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে জ্বালানি তেলনির্ভর সউদী অর্থনীতির ইতি ঘটবে। তাই এ সময়ের মধ্যে তাদের বিকল্প উৎসব ভাবতে হবে।
বার্লিন সায়েন্স অ্যান্ড পলিটিক্স ফাউন্ডেশন (এসডাব্লিউপি)-এর গবেষক স্টেফান রল বলেন, করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে এই সংকটের স্বরূপ দেখিয়ে দিয়েছে। ‘‘এছাড়া আরামকো শেয়ারের দরপতনের কারণে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে। তারওপর হজ না হলে আরেকটি বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা খাবে, ''বলেন তিনি। দেশটির রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে আরো দুর্বল করবে বলে ধারণা স্টেফানের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।