Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ষণ-খুনের বর্ণনা দিলো গ্রেফকারকৃত ৫ জন

গাজীপুরে ফোর মার্ডার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঞ্চল্যকর মা ও তিন সন্তানকে গলাকেটে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ৫জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারকৃত পারভেজকে নিয়ে ওই চারজনকে হত্যা ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে র‌্যাব-১-এর কর্মকর্তাদের কাছে। গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রোববার ২৬ এপ্রিল রাতে শ্রীপুরের আদাবর এলাকা থেকে পারভেজ নামে একজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
র‌্যাব-১-এর একজন কর্মকর্তারা জানান, গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত শ্রীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-১ আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে কাজিম উদ্দিন (৫০), হানিফ (৩২), বশির (২৬), হেলাল (৩০) এবং এলাহি মিয়া (৩৫)কে গ্রেফতার করে। গ্র্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে ভিকটিমের বাড়ী থেকে লুটকৃত মালামাল ও আসামীদের পরিধেয় বস্ত্র (রক্তমাখা), নগদ ৩০ হাজার টাকা, ১টি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, ১টি জিন্স প্যান্ট, ৩টি লুঙ্গি এবং ১টি আংটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার স্বীকার করে।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা সবাই মাদক সেবী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কাজিম উদ্দিন পেশায় রিকশা চালক। হানিফ পেশায় শ্রমিক; বশির পেশায় অটো রিকশা চালক; হেলাল পেশায় ভাঙ্গারী বিক্রেতা এবং এলাহি মিয়া (৩৫) পেশায় শ্রমিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধের সাথে জড়িত। সকলেই জুয়াড়ী এবং ভিকটিমের বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মাদক সেবন ও আড্ডা দিত। এছাড়া ভিকটিমদের তারা নানাভাবে হয়রানী করত। গ্রেফতারকৃত কাজিমের ছেলে পারভেজ দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ীর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকত্রী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিল। সে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামী বলে জানা যায়।

ওই সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতরা কয়েকদিন আগে জানতে পারে যে, কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০/২২ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে। পরে ৫/৭ দিন আগে কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়ে কাজলের বাড়ীতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। অন্য আসামী বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে। এদের দলে কাজিম এর ছেলে পারভেজও অন্তভর্‚ক্ত ছিল। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই বাড়ীর পিছনের এলাকায় জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ীর পিছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পিছনের গেট দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে।

গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমা’কে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানায়। অতঃপর ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া টাকা (৩০ হাজার) বের করে দেয়। পরে ফাতেমার স্বর্ণালংকারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামী বশির, হানিফ ও এলাহিসহ আরও একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া আসামী বশির সহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিন’কে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। আসামী পারভেজও বর্ণিত হত্যাকান্ড ও ধর্ষণে অংশ নেয়। ফাতেমা ও তার মেয়েরা গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলাকেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।



 

Show all comments
  • Shaharia Hossain Rakib ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৫ এএম says : 0
    খুন করে সাধারণ ক্ষমায় বের হয়ে আসা আমাদের দেশের আইনে খুবই কেমন একটা বিষয়। এই ছেলের যে শরীর-স্বাস্থ্য দেখলাম তাতে সে যে একটা ঘরে ৫ ঘন্টা অবস্থান করে ৪ জনকে খুন ও ৩ জনকে ধর্ষণ করলো এবং সেটা একা একাই - এটা হজম করতে সমস্যা হচ্ছে। ঠিক যেন বছরের শুরুতে সেই কুর্মিটোলা কাণ্ডের মত। হয়ত তাকে সামনে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে অন্যদেরকে বাঁচিয়ে নেওয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Anisur ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৫ এএম says : 0
    Feeling bad for the father who is living in Malaysia, won't see their dead bodies and can't pray their janaja because of Covid-19.
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    প্রাথমিকভাবে তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এত বড় ভয়ংকর অপরাধ করার পরও হয়ত তার বিচার হবে শিশু আইনে। তাই কে শিশু আর কে নয় তা বয়স দিয়ে বিচার করা উচিত হবে না। ঠান্ডা মাথায় যে এই জঘন্য অপরাধ করতে পারে তার বয়স যাই হোক তাকে কোনভাবেই শিশু বলা যাবে না। প্রচলিত আইনেই তার বিচার হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    কয়দিন আগে দেখছিলাম, ফাঁসির আসামি ক্ষমা পেয়ে আবার খুনের আসামি হয়েছে। এখন দেখছি খুন, ধর্ষণের আসামি জামিন পেয়ে যাচ্ছে। জামিন পেয়ে আবার সেই খুন, ধর্ষণ করছে। এইদেশে জামিন, ক্ষমা - এই বিষয়গুলো আসলে কিভাবে নির্ধারিত হয়? আইনেই গন্ডগোল নাকি আমরাই কম বুঝি?
    Total Reply(0) Reply
  • alal ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৭ এএম says : 0
    কী কারণে তাকে ৯ মাসের জেল দিয়ে ছাড়া হয়েছিল? আবার কী কারণে তাকে আবার কিশোর সংসোধোনাগারে পাঠানো হল, রাস্ট্রের কাছে জানতে চাই
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৫৭ এএম says : 0
    ভারতে নির্ভয়া কাণ্ডের পর আইন চেঞ্জ করেছে ভারতীয় পার্লামেন্ট। এখন খুন ধর্ষণের মতো ক্ষেত্রে ১৫ বছর থেকে adult ক্রাইম হিসাবে গণ্য হয় বাংলাদেশে অবিলম্বে সেটা করা হোক নয়তো এই নরপশু ,রক্তলোভী পিচাশ আইনের ফাক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। যেমনটা আযে করেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rajib Hossain ২ মে, ২০২০, ২:৩৮ পিএম says : 0
    ওদেরকে আসলে প্রকাশ্যে ফাসি দেয়া উচি। তা-নাহলে সাধারণ জনগণ নির্যাতিত হতেই থাকবে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ