Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় ৯১ শতাংশ শিশু মানসিক চাপে : ওয়ার্ল্ড ভিশনের জরিপ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ৭:০৩ পিএম

মহামারী করোনার সংক্রমণে শিশু ও তরুণরা মানসিক বেদনা ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তবে বৈশ্বিক এই মহামারী প্রতিরোধে তারাও ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। শিশু ও তরুনদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে তা জানতে বিগত ২ মাসে উন্নয়নশীল ১৩ টি দেশে একটি জরিপ পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক শিশুকেন্দ্রিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন। শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহনে ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্যা টাইম অফ কোভিড-১৯’ শিরোনামে পরিচালিত এই জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে।

মহামারীর সময়ে জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণকে উল্লেখ করেছে জরিপে অংশ নেয়া শিশুরা। কারনগুলো হলো- শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দুরত্বের কারনে মানসিক বেদনা এবং পরিবারে দারিদ্র বেড়ে যাওয়া। শতকরা ৭১ ভাগ শিশু ও তরণরা বলছে স্কুল বন্ধের কারনে তারা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে।

করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচীর সুবিধা হারিয়ে ফেলায় শিশু ও তরুনরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। লকডাউন প্রসারিত ও দীর্ঘায়িত হওয়ার কারনে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা বঞ্চিত ঝুকিপুর্ণ শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না যা তাদের অনেক সহপাঠীরা করছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিশু স্কুল মিল থেকে এখন বঞ্চিত, অভিভাবকরা চাকরী এবং জীবিকা হারিয়ে সন্তানদের খাবার জোগাড়ে অক্ষম। শিশুরা বলেছে, এ পরিস্থিতে দ্বিধা, ভয় এবং হতাশা থেকে তারা বন্ধু এবং স্বজনদের সাথে যোগাযোগও করতে পারছে না। উল্লেখ করেছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন পার্টনারশীপের এডভোকেসি ও এক্সটার্নাল এনগেজমেন্ট প্রধান ডানা বুজডুসিয়ে।

যেসব দেশে জরিপ পরিচালিত হয়েছে সেখানে দারিদ্র ও বিশুদ্ধ পানির অভাব বিদ্যমান যা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে শিশুদের মনেও উদ্বেগ বাড়ছে। জরিপে অংশ নেয়া ৯১ ভাগ শিশু স্বীকার করেছে এই অনিশ্চয়তা এবং বিচ্ছিন্নতা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারনে তারা উদ্বেগ, রাগ ও শঙ্কা সহ নানা ধরনের মানসিক চাপে রয়েছে।

ইবোলা ক্ষতিগ্রস্থ কঙ্গোর ১৬ বছর বয়সী অনিতা বলছে, ‘এমন পরিস্থিতি মোটেও ভালো লাগার কিছু নয়। ইবোলা শেষে আমার এমন সময়টা শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে। যদিও বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরে সে থাকলে ভাইরাসের হাত থেকে হয়তো আমরা রক্ষা পাবো কিন্তু খাবারের অভাবে আমরা মরেও যেতে পারি।’

ব্রাজিলের ৭ বছর বয়সী লারা বলছে, ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের মধ্যে হাত-ধোয়া অন্যতম, কিন্তু যেখানে আমরা থাকি, সেখানে আমাদের কাছে পানি নেই। অনেক পরিবার সপ্তাহে একবার পানি পায়; তাহলে কিভাবে তারা স্বাস্থ্যবিধি পালন করার সুযোগ পাবে? তারা তা করতে পারবে না। ফলে সংক্রমণ বাড়বে।

এই মানসিক চাপের অনুভূতি সত্ত্বেও শিশু এবং তরুণরা নিজেদের কমিউনিটিতে কোভিড-১৯ এর বিস্কার প্রতিরোধের লড়াইয়ে অবদান রাখার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তারা বলেছে, অনলাইন এবং অন্যান্য দূরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যম ব্যবহার করে, ভাইরাসের বিস্তার থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে সচেতন করতে শিশুদের সম্পৃক্ত করা খুবই প্রয়োজন ছিল।

‘শিশুরা অসহায় নয়, তারা এই মহামারির অদৃশ্য শিকার। তার পরিবর্তনের শক্তিশালী অনুঘটক, শিশুরা সবার সাথে মিলেমিশে তাদের সমাজের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের অংশগ্রহনের অধিকার যে কোন বিষয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে। সামাজিক পরিবর্তনে শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহন তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, এবং তারা অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এই বোধ তাদেরকে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে উল্লেখ করেছেন মিস বুজডুসিয়ে ।

জরিপে দেখা যায়, করোনা শিশুদের মধ্যে কমিউনটিকে সাহায্য করার আকাঙ্খা বা ক্ষমতা কোনটাই কমাতে পারেনি। তাই সমাজের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য শিশুর ক্ষমতায়ন বিশেষ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন জরিপ সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ