Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্রুনো লাটুরের প্রশ্ন এবং করোনা পরবর্তী জনস্বাস্থ্য

ড. মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ব্রুনো লাটুর একাধারে একজন ফরাসি দার্শনিক, নৃবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী। ‘উই হ্যাভ নেভার বিন মডার্ন’ (১৯৯১) গ্রন্থটির জন্য তিনি সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ও সমাজ চিন্তুকদের নিকট অতি পরিচিত। সম্প্রতি লাটুর তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে বৈশি^ক কোভিড-১৯ মহামারী সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে চিন্তা (বা হোমওয়ার্ক) করার জন্য ছয়টি প্রশ্ন রেখেছেন। প্রবন্ধটি ফরাসি থেকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন স্টিফেন মুউকে। প্রবন্ধটির শিরোনাম হলো: ‘আপনি কী সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের কথা ভাবতে পারেন, যাতে আমরা প্রাক-সঙ্কট উৎপাদন মডেলে আর ফেরত না যাই।’ উৎপাদন মডেল বলতে লাটুর উদারনৈতিক অর্থব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কারণ, উদারনৈতিক ভাবাদর্শ পুঁজিবাদ ও বিশ্বায়নকে সমর্থন করে। এটি সকল দেশের অর্থনীতিকে সমরূপ কাঠামোর অধীনে পরিচালিত করতে চায়। বলা বাহুল্য, পুঁজিবাদ বেশি উৎপাদন, অধিক মুনাফা, অধিক বিনিয়োগ, অধিক শ্রমিক নিয়োগ, অধিক ভোগ, অধিক প্রযুক্তির ব্যবহারও সর্বোচ্চ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে সমর্থন করে। একজন সাধারণ বোধসম্পন্ন ব্যক্তিও বুঝে যে অতিমাত্রার উৎপাদনে অতিমাত্রায় প্রাকৃতিক সম্পদকে শোষণ করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন, বন হতে গাছ কাটা ও নদীর পানিতে শিল্পের বর্জ্য ফেলা। অতি উৎপাদন শিল্প-কারখানার প্রসার ঘটিয়েছে এবং বহু লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে, এটি যেমন সত্যি তেমনি মানবের জন্য সঙ্কটও সৃষ্টি করেছে। যেমন, অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণের ফলে বৈশ্বিক জলবায়ুতে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, যার ক্ষতিকর প্রভাব (বন্যা, খরা, উষ্ণতা, শৈত্য প্রবাহ) আজ আর কারো অজানা নয়। উৎপাদন তথা বৈশ্বিক পুঁজিবাদ মডেল দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটগুলি বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে। জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত খাতগুলিতে সবচেয়ে বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খাতগুলি করোনা আক্রান্ত রোগীদের যথোপোযুক্ত চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পৃথিবীকে এই সঙ্কটের মুখোমুখি যেন আর না হতে হয় সেই জন্য লাটুর বিশ্ববাসীকে হোমওয়ার্কের জন্য নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি রচনা করেছেন। প্রশ্নগুলি বিচ্ছিন্ন নয়, বরং আন্তঃসম্পর্কিত। প্রশ্নগুলির প্রতি আমি আমার সাড়া জানাচ্ছি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতকে মাথায় রেখে।

প্রথম প্রশ্ন: করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কী কী স্থগিত কার্যক্রমগুলিকে আপনি ভবিষ্যতে আর দেখতে চান না? করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেহেতু বিশ্বব্যাপী এখন কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে; লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক বহু ক্রিয়াকলাপ স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে যে, কিছু মাত্রাতিরিক্ত চর্চা ছিল যেগুলি পরিবর্তিত হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি রাষ্ট্রের মনোযোগ প্রশংসাজনক পর্যায়ে ছিল না, বর্তমানে করোনাকালে রাষ্ট্র বেশ প্রবল গতিতে কাজ করছে, যা প্রশংসাজনক। যেমন, স্বাস্থ্যখাতের কাজের গতি বেড়েছে। যে বিষয়গুলি আপাতত স্থগিত আছে সেগিুলি হলো: আন্তরিকতাহীন জনস্বাস্থ্য, রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নত চিকিৎসা, আয় বৈষম্য, মাত্রাতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, অনিয়ন্ত্রিত ও অশৃঙ্খল সড়ক ও নৌপথ, বায়ু ও পানি দূষণ, জবাবদিহিতাহীন প্রশাসনিক আচরণ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সিন্ডিকেটদের প্রভাব, বন নিধন, বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা, দেশীয় পণ্যের প্রতি অবহেলা, দুর্নীতিপরায়ণ জনপ্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের প্রতি অসচেতনতা।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: আপনার পছন্দ মতো একটি কার্যক্রমকে নির্বাচন করুন এবং ভাবুন কেন সেটি আপনার কাছে মনে হচ্ছে অনিষ্টকর বা প্রয়োজনাতিরিক্ত বা বিপজ্জনক বা অসংলগ্ন এবং এটি যদি আর ফিরে না আসে তাহলে সেই কার্যক্রমটি কীভাবে আরও সহজতর ও সংলগ্ন হবে বলে আপনি মনে করেন? আমি মনে করি, জনস্বাস্থ্য খাতকে গুরুতররূপে, আন্তরিকভাবে এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে না নেওয়াটা ছিল খুবই বিপজ্জনক। করোনাভাইরাসের আক্রমণ মোকাবেলায় সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি এখন খুবই তৎপর আছে। ডাক্তার, নার্স এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগণ এখন স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (যেমন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পিপিই) ও অবকাঠামো (যেমন, আইসিইউ) পর্যাপ্ত নেই। যদিওবা থাকে সেগুলি কিন্তু সকল চিকিৎসা কেন্দ্রে নেই। খুব স্বাভাবিক যে, মহামারীর সময় সবক্ষেত্রেই সংকটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু, রাষ্ট্র যদি জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতগুলিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতো তাহলে এটি অনুমান করা যায় যে, বর্তমান সংকট মোকাবেলা আরও সহজতর হতো। প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার এবং দক্ষ চিকিৎসক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার। প্রায়ই খবরের কাগজে দেখেছি বিত্তবান ও জনপ্রতিনিধিগণ চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে যাচ্ছেন। কখনও শুনিনি লন্ডন থেকে কেউ চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশে এসেছে। জনস্বাস্থ্যের প্রতি কাঠামোগত উদাসীনতা স্পষ্ট হবে নিম্নােক্ত কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে। ঢাকা শহরের ফার্মগেইটকে একটি কেইস হিসেবে নেই। এই স্থান দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করে। সেখানে কয়টি পাবলিক টয়লেট আছে? বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য পাবলিকের জন্য কয়টি পানির কল আছে? সেখানে একটি পার্ক আছে, কিন্তু আপনি কয়েক মিনিটি পার্কের বেঞ্চেতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কি বসতে পারবেন? বসার পরিবেশ কি আছে? পার্কটি কাদের দখলে? সিনেমা হলের গেইটের সামনে ও ফুটপাথে খাবার বিক্রি হচ্ছে। খাবারগুলি কি স্বাস্থ্যকর? ফার্মগেইটের ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় এক সেকেন্ডে আপনার শরীরের সাথে কতজনের ধাক্কা লাগে। এরূপ ধাক্কাধাক্কি কি অস্বস্তিকর এবং অস্বাস্থ্যকর নয়? রাষ্ট্র থেকে কি এর কোনো সমাধান নেই? জসস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশাসনিক কাঠামো প্রণয়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি যদি গুরুতররূপে আন্তরিকতা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সমাধানের উপায়গুলি দেখা দেবে। করোনা মহামারীর পর এই উদাসীনতা আর ফিরে আসবে না বলে আমি আশা করছি।
তৃতীয় প্রশ্ন: কী ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আপনি অ্যাডভোকেসি করতে চান, যাতে করে আপনার বাতিলকৃত কার্যক্রমের সাথে কর্মীদের বা মালিকদের বা উদ্যেক্তাদের আর কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না এবং সেই পদক্ষেপটি অন্যান্য সম্পর্কিত কার্যক্রম চালু রাখতে সহজতর করবে?
স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতগুলিকে শক্তিশালী করতে হবে। এই খাতগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে, এগুলির উপর নিয়মিত গবেষণা করার ব্যবস্থা চালু রাখা। রাষ্ট্রের উচিৎ এই খাত-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির (যেমন, মেডিকেল কলেজ, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর) মান উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। তাদের গবেষণার ফলাফল সরল ভাষায় সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে যাতে স্বাস্থ্য-সচেতনতা বিষয়টি বাঙালি সংস্কৃতির একটি উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকা শহরে জনস্বাস্থ্যের কী নাজুক অবস্থা সে সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেই। মনে করুন, আপনি ফার্মগেইট থেকে একটি বাসে উঠেছেন মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাসটি বাংলামটর এসেছে। ঠিক এমন সময় আপনার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো। আপনার কাছে কি উপায় আছে? আর যদি আপনি ডায়াবেটিসে ভুগেন তাহলে আপনার অবস্থা কী করুণ, তা সহজেই কল্পনা করা যায়। ধরা যাক, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে পৌঁছেছেন। তখনই বা আপনার কী করার আছে? বহু মানুষ এমন কষ্টকর পরিস্থিতিতে উপায় না পেয়ে দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে যেখানে চিপা গলি রয়েছে সেখানে যায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। এ ধরনের জায়গাগুলি খুবই নোংরা ও দুর্গন্ধময়। এসব জায়গা থেকে যে জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ করেনি তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। রাষ্ট্রের অর্থায়নে মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। যেমন, মেট্রোরেল, চওড়া সড়ক ও সেতু। এগুলির যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি প্রয়োজন আছে মানুষের সুস্থ শরীরের। মানুষের অধিকার আছে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থভাবে বাঁচবার। তাই, যে অবকাঠামোগুলি সর্বাগ্রে প্রয়োজন (হাসপাতাল, পাবলিক টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি, নির্মল বাতাস, সবুজ পরিবেশ) সেগুলির প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া।
চতুর্থ প্রশ্ন: কী কী কার্যক্রম আছে, যেগুলি বর্তমানে স্থগিত আছে, সেগুলি হয়তোবা আবার ফিরে আসবে বলে আপনি অনুমান করছেন?
স্থগিত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সীমিত যাতায়াত। ফলে, পূর্বেকার মতো এখন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার খবর নেই। করোনা দুর্যোগের আগে প্রায় প্রতিদিনই সড়কে দুর্ঘটনার খবর শুনতাম। এগুলোকে আমি দুর্ঘটনা বলতে নারাজ। যেহেতু এগুলি নিয়মিত ও কাঠামোগত কারণে ঘটে, সেহেতু এগুলোকে বলা যেতে পারে ব্যবস্থাগত ঘটনা। হতাহতের ঘটনা শোনার পর আমাদের রাগ ও অভিযোগ গিয়ে পড়ে গাড়ির চালকের উপর। কিন্তু, তারা নিজেরাও তো আহত কিংবা নিহত হয়। তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রু টিপূর্ণ গাড়ি চালাতে বাধ্য হয়। তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। সড়কে রয়েছে প্রভাবশালীদের শক্তিশালী চাঁদাবাজি। বাসস্ট্যান্ডের অবস্থান অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত। আমরা ভুলে যাই যে এই অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং অশৃঙ্খলিত অবস্থার প্রথম ভিকটিম হলেন গাড়ির চালক ও তাদের সহযোগীরা। করোনাকাল পেরিয়ে গেলে, আবার অনিয়ন্ত্রিতভাবে সড়কে গাড়ি চলবে এবং প্রাণ যাবে। মনে রাখা জরুরি যে, সড়কে নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করাটাও জনস্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত।
পঞ্চম প্রশ্ন: এই কার্যক্রমটি কেন আপনার কাছে ইতিবাচক মনে হচ্ছে এবং সেটি কীভাবে অন্যান্য কার্যক্রমকে আরও সহজতর বা অর্থবোধক বা সংলগ্ন করবে এবং কীভাবে আপনার পছন্দকৃত কার্যক্রম অপ্রত্যাশিত বা অনুপযুক্ত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে? সড়কের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি, যেমন, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্ট্যান্ড, নিরাপদ সড়ক ও প্রশিক্ষিত গাড়ি চালক নিশ্চিত করা গেলে জনস্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটবে। ফার্মগেইট বাসস্ট্যান্ডকে আবারও উদাহরণ হিসেবে নিচ্ছি। মনে করুন, একজন বাস চালক মতিঝিল থেকে গাবতলীর উদ্দেশ্যে যাত্রীসহ বাস চালিয়ে যাচ্ছেন। ফার্মগেইটে আসার পর তার টয়লেটের প্রয়োজন হলো। তিনি সিনেমা হলের সামনে যাত্রী নামাচ্ছেন। এই সময় তার কাছে কি সুযোগ আছে টয়লেটে যাওয়ার জন্য? সহজ উত্তর: নেই। এমন অবস্থায় তার শরীরে অস্বস্তি ও মানসিক উদ্বেগের সৃষ্টি হবে। সে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে গাবতলী পৌঁছাতে চাইবে। ফলে, দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। আমার দেখা অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা শহরের একটি স্বাস্থ্যসম্মত বাস স্ট্যান্ডের কথা বলি। একটি বড় বিল্ডিংয়ের নিচে বাস স্ট্যান্ড। সেখানে আছে টিকিট কাউন্টার, পত্রিকার স্ট্যান্ড, চা ও কফি শপ, টয়লেট, বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আসন, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান ও ট্যুরিস্টদের জন্য পৃথক কাউন্টার। উন্নত রাষ্ট্রগুলি গুরুত্ব দিয়ে ভাবে যে এই বিষয়গুলি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্যের উপর কতখানি গুরুত্ব দেয় তা একটি বাস স্ট্যান্ডকে প্রতীক হিসেব বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারা যায়। সুতরাং, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে ও যাতায়াতের সময় মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
ষষ্ঠ প্রশ্ন: আপনি কী ধরনের পদক্ষেপের প্রতি অ্যাডভোকেসি করবেন, যা কর্মী বা শ্রমিক বা মালিক বা এজেন্ট বা উদ্যোক্তাদের স্বক্ষমতা বা উপায় বা সরঞ্জাম বা অর্থ অর্জনে ভূমিকা রাখবে এবং চূড়ান্তভাবে সেগুলি আপনার প্রস্তাবিত পদক্ষেপকে বিকশিত হতে সহায়তা করবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতগুলির উপর সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য পাবলিক স্থানগুলিতে যেন মানুষ বিনা পয়সায় বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে পারে। ফলে, মানুষ জীবাণুমুক্ত থাকতে পারবে। এই খাতগুলির উন্নতি এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যেন অদূর ভবিষ্যতে আমরা শুনতে পাই যে ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকা হতে মানুষ চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশে এসেছে। এই অবস্থা যদি অর্জন না করা যেতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে যদি আবারও কোনো অজানা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আবারও ভীষণ সংকটের মুখোমুখি হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, এই স্বাস্থ্য খাত উন্নত হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও বেগবান হবে। কারণ, সুস্থ শরীরের ও মনের একজন নাগরিক যেকোনো দেশের জন্য অমূল্য মানব সম্পদ।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন