মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রবল রাজনৈতিক হানাহানি ও কোন্দলের মধ্যে আফগানিস্তানে কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের বিস্তার দেশটির সামনে যুদ্ধের আরেকটি ফ্রন্ট খুলে দিয়েছে। এই যুদ্ধ মোকাবেলার অস্ত্র - মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে সেখানে।
ভাইরাসটি মোকাবেলায় দেশটির স্বাস্থ্য খাতের যেমন পর্যাপ্ত সম্পদ নেই তেমনি তারা পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তাও পায়নি, যেমনটা পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নেতৃত্বাধিন কাবুল প্রশাসনের সঙ্গে তালেবানের রাজনৈতিক সংঘাত; ঘানি ও তার সিইও আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর মধ্যে তীব্র ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ইতোমধ্যে করুণ হয়ে পড়া পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থতা যেমন প্রেসিডেন্ট ঘানির সমস্যা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে তেমনি তালেবানসহ তার প্রতিপক্ষরাও সমস্যায় পড়বে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে আফগান জনগণের ৭৫% এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং এতে মারা যেতে পারে ১০০,০০০ মানুষ। এরই মধ্যে আক্রান্ত সংখ্যা হাজার ছুইঁ ছুঁই করছে। এটা শুধু সরকারি হিসাব। হিসাবের বাইরে থাকা আক্রান্তের সংখ্যা আরো কয়েকগুণ হতে পারে। কারণ করোনাভাইরাসের আরেক উর্বর কেন্দ্র ইরান থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারির পর প্রায় ১১৫,০০০ আফগান দেশে ফিরেছে।
এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজনৈতিক এলিটরা ক্ষমতা নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন ভাইরাস নিয়ে ততটা নয়। ঘানির প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহকে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় কিছুটা নমনীয় দেখা গেলেও নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর ঘানি যেন আরো জিদপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। কারো সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার মনোভাবে নেই তিনি। এমন কি তালেবানের সঙ্গেও নয়। আর সে কারণেই তিনি বন্দি বিনিময় নিয়ে এত টালবাহানা করছেন। তিনি সিনিয়র তালেবান কমান্ডারদের দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে নিজের কব্জায় রেখে দিতে চান।
এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের আলোচনায় সমাপ্তি টানতে হলে ঘানিকে শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহর সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে কাবুল বা তালেবান কারোরই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। সমঝোতা না হলে এবং হামলা চলতে থাকলে দুই পক্ষের জন্যই পরিস্থিতি খারাপ হবে। ২০১৯ সালের নাজুক রাষ্ট্র সূচকে দেখা যায়, স্বাস্থ্য সেবা ও স্যানিটেশনের মতো জরুরি পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের ক্ষমতা বিশ্বের দেশগুলোর তালিকায় একেবারে নিচের দিকে।
ভাইরাস ছড়াতে থাকলে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন/ন্যাটো বাহিনীকেও তা সংক্রামিত করতে পারে। ফলে এই বাহিনীর সেনা প্রত্যাহার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। সম্প্রতি সাবেক মার্কিন দূত রিচার্ড ওলসন বলেছেন যে আফগানিস্তানে করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটলে তা মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ত্বরান্বিত করতে পারে। এর মানে হলো যে কোন বাস্তব বিবেচনায় তালেবান এখন আর যুদ্ধক্ষেত্রে কোন গুরুতর প্রতিপক্ষ নয়।
মার্কিন নৌবহর ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিমানবাহী রণতরী থিওডোর রুজভেল্ট গুয়ামে আটকা পড়েছে। এর শত শত নাবিকের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় সব ক্রুকে কোয়ারেন্টিনের পাঠানো হয়েছে। অন্য তিনটি ক্যারিয়ার নিমিজ, রোনাল্ড রেগ্যান ও কার্ল ভিনসেনকেও বন্দরে বসিয়ে রাখা হযেছে। কারণ এগুলোর নাবিকদের পরীক্ষাতেও ফলাফল পজিটিভ এসেছে। আর চতুর্থটি ট্রুম্যানকে সাগরে দৌড়ের উপর রাখা হয়েছে কারণ এটি বন্দরে ভিড়লে এর ক্রুরাও করোনায় সংক্রামিত হতে পারে।
যেসব দেশে ভাইরাস মোকাবেলোর তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সেগুলো থেকে সেনা দল ফিরিয়ে আনার দাবি ট্রাম্পের জন্য কেবল সমস্যাই তৈরি করবে। কারণ তিনি আবারো নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ খুঁজছেন।
তবে তালেবান-মার্কিন চুক্তি বহাল থাকলে, এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে চাইলে নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য তালেবানদের উপর মার্কিনীদের নির্ভরতা আরো বেড়ে যাবে। কাবুলের দুর্বল সরকারের অস্তিত্বের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। অথবা বলা যায়, কোন অস্থিতিশীল রাজনৈতিক কোয়ালিশনের পক্ষে জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা সমাল দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ যোগান দিতে কোন জাতীয় কৌশল প্রণয়ন সম্ভব হবে না।
তালেবান ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ এই যুদ্ধে প্রতিবছর হাজার হাজার সেনা আহত হয়েছে। এতে হাসপাতালগুলোর উপর চাপ আরো বেড়ে যাবে। আফগানিস্তানে বিবদমান উভয় পক্ষের এলিটদের বুঝতে হবে যে দেশটির সম্পদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, যার বেশির আসে বিদেশী সাহায্যের আকারে।
আফগানিস্তানের বাজেটের ৭৫ ভাগের বেশি থাকে উন্নত দেশগুলোর সাহায্য। কোভিড-১৯-এর কারণে এসব দেশের অর্থনীতিই এখন নিম্নমুখি। ফলে অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়া রোধ করার জন্য এসব দেশের সরকার বাড়তি সম্পদ সৃষ্টি করতে বাধ্য হচ্ছে। কিছু হিসাবে বলা হয়েছে যে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিরই অবনতি ঘটতে পারে ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতা দেশগুলো বিদেশী সহায়তা কমানোর জন্য অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানে ক্ষমতার লড়াই চলতে থাকলে তা দাতাদের শুধু নিরুৎসাহিত করবে। আর তখন বিপদে পড়ে যাবে আফগানিস্তান।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক সমঝোতা ও নিস্পত্তির জন্য মাঝামাঝি পন্থা খুঁজে নিতে পারলে শুধু বাইরের দেশগুলোই জড়িত হতে আগ্রহী হবে না তাতে আফগানরা এখন যে দুটি যুদ্ধ লড়ছে তার একটির অবসান ঘটবে। কোভিড-১৯ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সঙ্কট বটে। তবে এটা আফগান এলিটদের জন্য নিজেদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার সুযোগও সৃষ্টি করেছে। সূত্র: এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।