Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ ২০ লাখ : ওএমএসের চাল বিতরণের তালিকা ১২ হাজার!

বিব্রত নাসিক কাউন্সিলররা

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ৩:১৮ পিএম

২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর বিপরীতে চলমান করোনা সঙ্কটে কর্মহীন হয়ে পড়া নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে বিশেষ ওএমএস’র চাল বিতরণের জন্য তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা কার্য পাবেন। এই কার্ডের মাধ্যমে একটি পরিবার ১০টাকা কেজি দরে মাসে ২০ কেজি চাল পাবেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য মাত্র ১২ হাজার জনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যা বিশাল এই জনগোষ্ঠির তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। জনসংখ্যার তুলনায় প্রতি ১৬৬ জনের মধ্যে একজন এই তালিকাভুক্ত হবেন। এতে করে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যার অনুপাতে এই তালিকা করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকারও বিশাল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫০ লাখ পরিবারকে বিশেষ ওএমএস’র মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি ফলাও করে প্রচারও করা হচ্ছে। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরী হয়েছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী দেড়শ থেকে সর্বোচ্চ চারশতাধিক তালিকা চাওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে। গত একমাস যাবৎ সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকারও অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব কর্মহীন মানুষদের সরকারের পাশাপাশি সমাজের সামর্থ্যবানরা নিজ উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছেন। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যে কারণে লকডাউনের মধ্যেও সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। খাবারের খোঁজে প্রতিদিনই মানুষ পথে নামছে। খাদ্য সহায়তা না পেয়ে ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের পাশাপাশি নাসিকের অনেক ওয়ার্ডে বিক্ষোভ করেছে কর্মহীন মানুষ।

যোগাযোগ করা হলে, নাসিকের প্যানেল মেয়র-২ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউ রহমান মতি বলেন, আমার ওয়ার্ড থেকে ২২১ জনের তালিকা চেয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: ইকবাল হোসেন বলেন, তার ওয়ার্ড থেকে ২৪৬ জনের, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসানের কাছ থেকে ১৯০ জনে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের কাছ থেকে ৪৩৯ জনের, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেস শকুর কাছ থেকে ৩৫০ জনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এভাবে প্রত্যেক কাউন্সিলরের কাছ থেকেই তাদের ওয়ার্ডের ভোটার অনুযায়ী তালিকা চাওয়া হয়েছে।
প্রত্যেক কাউন্সিলর বলেন, সরকারকে এজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমরা বিব্রত এই কারণে যে বিশাল জনগোষ্ঠীর তুলনায় এই সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। অন্য সময় হলে এই কাজ সহজ হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দৈনিক আয়ের মানুষ যারা আছেন তারা সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন মানুষের জন্য। সামনের দিনগুলোতে মানুষের জন্য খাদ্য সংকট হতে পারে। তাই করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে যাতে খাদ্য ঘাটতি না হয় সেজন্য ৫০ লাখ মানুষের তালিকা তৈরী করে রেশন কার্ড দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যারা ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ২০ কেজি করে চাল পাবেন।
শামীম ওসমান বলেন, যারা রেশন কার্ড প্রাপ্যদের তালিকা করবেন তারা হলেন, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে মেম্বার পর্যন্ত অথবা সংসদ সদস্য, মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর পর্যন্ত। সঙ্গে যোগ হবেন, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষক। যদি সিটি করপোরেশন এলাকা হয় তাহলে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একটি মানবিক কমিটি হবে। একজন শিক্ষক, দুইজন করে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ (একজন পুরুষ ও একজন মহিলা)। এই কমিটি চিহ্নিত করবে কারা করা এলাকায় রেশন কার্ডটি পাওয়ার উপযুক্ত। কার এটা প্রয়োজন। এখানে কোন দল মত দেখা হবে না। শুধু দেখা হবে যে প্রাপ্য তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার জন্য।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৪। এর ৭০ ভাগ পড়েছে ফতুল্লায় আর ৩০ ভাগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা। সিদ্ধিরগঞ্জ হচ্ছে একটা শিল্প এলাকা। ফলে এখানে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাও বেশি। যেহেতু শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যা বেশী সেই কারণে রেশন কার্ডের সংখ্যাটা বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফতুল্লাতেও কার্ডের সংখ্যা বেশী হবে। সেখানে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত। যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ সেহেতু সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের অনেক কাউন্সিলর আমাকে ফোন করেছে। আমি জানতে পারলাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কাউন্সিলরদের কার্ডের সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। অর্থাৎ কাউকে দেড়শত, কাউকে ২০০, কাউকে ৩০০, কাউকে ৪০০। এই যে সংখ্যা বেঁধে দেয়া এই ধরনের কোন নিয়ম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোন নির্দেশনায় নাই। নির্দেশনায় আছে যতজন মানুষের প্রয়োজন ততজন মানুষের নাম পাঠানো এবং এই নাম পাঠানোর মধ্যে আইডেনটিফিকেশন করে দিবেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরমধ্যে কয়জন বিধবা ভাতা, কয়জন বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা পাচ্ছেন এ বিষয়টি দেখার জন্য একজন সচিবও নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

তাই আমি মনে করি সিটি করপোরেশনের কাছে আমার জানার অধিকার আছে যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। কোনভাবেই যাতে আমার সিদ্ধিরগঞ্জের অসহায় সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা থেকে বাদ না পড়ে। এ নিয়ে এমন কিছু করা যাবে না যেটাতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্দেশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাহলে ওই এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোনভাবেই আমি এটা বরদাস্ত করবো না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি সে বিষয়টা জানাবো।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার সিটি করপোরেশনের সিইও আবুল আমিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে সিটি করপোরেশনের অপর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এটি প্রথম পর্যায়ের তালিকা। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালিকা

৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ