পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ ফেইসবুকে এ সময়ের বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন, যাদের বয়স ষাটের নিচে। এই তালিকা নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
‘এ সময়ের বুদ্ধিজীবীদের তালিকা : ষাটের নিচে বয়স যাদের’ শিরোনামে মাহবুব মোর্শেদ তার ফেইসবুকে লিখেন, ‘বুদ্ধিজীবীতার ধরন পাল্টাচ্ছে। নিউ মিডিয়ার যুগে ওল্ড মিডিয়ায় বুদ্ধিজীবী খুঁজতে গেলে খুব বেশি পাওয়া যাবে না। ওল্ড মিডিয়া নতুন চিন্তা ও বুদ্ধিজীবীতাকে ধারণ করার মতো অবস্থায় পৌঁছাতেও পারেনি। তবু ওল্ড মিডিয়ায় কাজ করেও অনেকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। আরেকটা লক্ষণীয় দিক হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মধ্যেও বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কমে এসেছে। ’
তিনি আরও লিখেন, ‘ইন্টেলেকচুয়াল ও এক্টিভিস্টের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিস্তর। কিন্তু, বুদ্ধিজীবিতা নিজস্ব ধরনে কিছুটা একটিভিজম দাবি করে। নিজের বক্তব্য প্রচারের একটিভিজম হলেও। এই তালিকায় কেউ হয়তো কম বুদ্ধিজীবী বেশি একটিভিস্ট আবার কেউ বেশি বুদ্ধিজীবী কম একটিভিস্ট। কেউ কেউ মোটেও একটিভিস্ট নন। তবে বুদ্ধিজীবী চেনার বেলায় নানা বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বেছে নেবার সক্ষমতা ও নিজের অবস্থান থেকে সে পজিশনকে ব্যাখ্যা করতে পারা একটা বড় বিবেচনা। কথার ইমপ্যাক্ট ও কাজের ধরনও বিবেচনায় নিয়েছি। ’
ইসলামপন্থীদের সম্পর্কে তিনি লিখেন, ‘ইসলামপন্থীদের কাউকে বুদ্ধিজীবী তালিকায় নেওয়া যায় কি না এটা আমি সক্রিয়ভাবে ভেবেছি। এখানে মূল সমস্যা হলো, ইসলামপন্থীরা যে বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তা থেকে নিজেদের পজিশন আলাদা করতে পারেন না। যা বলছেন তার ক্রিটিক করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। ইসলামের ন্যারেটিভ তারা রিপ্রোডিউস করতে থাকেন। ফলে ইসলামপন্থীরা মোটামুটিভাবে প্রচারকের ভূমিকাই পালন করেন। একই কথা অনেক বামপন্থী বা নারীবাদীদের বেলাতেও খাটে। অবশ্য একজন ইসলামপন্থী, নারীবাদী বা বামপন্থী তার বিষয়ের বাইরে গিয়ে কোনো বিষয়ে পজিশন নিতে পারেন। তা থেকে তাকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে চিহ্নিত করতে আপত্তি থাকার কথা না। ’
সবশেষে লিখেন, ‘মোটাদাগে বুদ্ধিজীবিতার ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করছেন এমন কয়েকজনের তালিকা এখানে দিলাম। অনেকে হয়তো একমত হবেন না। কিন্তু আমার মনে হয়, দলমত নির্বিশেষে এদেশে যারা বুদ্ধিজীবিতার চর্চা করছেন তাদের সম্পর্কে একটা ধারণা এ তালিকা থেকে পাওয়া যাবে।’
৬১ জনের এই তালিকায় যারা রয়েছেন, তারা হলেন, ১. আজফার হোসেন, ২. আলতাফ পারভেজ, ৩. ব্রাত্য রাইসু, ৪. পিনাকী ভট্টাচার্য, ৫. ফাহাম আব্দুস সালাম, ৬. রিফাত হাসান, ৭. ইমরুল হাসান, ৮. মানস চৌধুরী, ৯. ফারুক ওয়াসিফ, ১০. ফিরোজ আহমেদ, ১১. রেজাউল করিম রনি, ১২. সালাহ উদ্দিন শুভ্র, ১৩. জিয়া হাসান, ১৪. পারভেজ আলম, ১৫. রায়হান রাইন, ১৬. সেলিম রেজা নিউটন, ১৭. নাহিদ হাসান নলেজ, ১৮. নাদিয়া ইসলাম, ১৯. সুমন রহমান, ২০. মোহাম্মদ আজম, ২১. মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ২২. আশফাক নিপুন, ২৩. এবাদুর রহমান, ২৪. রেজাউল করিম মনু (রক মনু), ২৫. মাহবুব মোর্শেদ, ২৬. আরিফুজ্জামান তুহিন, ২৭. আসিফ মহিউদ্দীন, ২৮. কাবেরী গায়েন, ২৯. আরিফ জেবতিক, ৩০. খালেদ মুহিউদ্দিন, ৩১. সাখাওয়াত টিপু, ৩২. মোশাহিদা সুলতানা, ৩৩. কল্লোল মোস্তফা, ৩৪. গোলাম মোর্তোজা, ৩৫. সাঈদ ফেরদৌস, ৩৬. স্বাধীন সেন, ৩৭. তাসনিম খলিল, ৩৮. অরূপ রাহী, ৩৯. ফাহমিদুল হক, ৪০. জাকির তালুকদার, ৪১. মাহা মির্জা, ৪২. সায়দিয়া গুলরুখ, ৪৩. আ-আল মামুন, ৪৪. মাহরুখ মহিউদ্দিন, ৪৫. পাভেল পার্থ, ৪৬. দীপায়ন খীসা, ৪৭. শুভাশিস সিনহা, ৪৮. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ৪৯. মাসকাওয়াথ আহসান, ৫০. ইমতিয়াজ মাহমুদ (ব্যারিস্টার), ৫১. আহমেদ শামীম, ৫২. রাখাল রাহা, ৫৩. জাভেদ হুসেন, ৫৪. গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ, ৫৫. মৃদুল মাহবুব, ৫৬. বাকী বিল্লাহ, ৫৭. জগলুল আসাদ, ৫৮. মাকসুদুল হক (ম্যাক), ৫৯. আসিফ সালেহ, ৬০. আনিসুল হক ও ৬১. আসিফ নজরুল।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেন, ‘‘বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে, বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ।’ রুদ্র দা কইছে। আমি কিন্তু কিছু কই নাই। রেগেমেগে কেউ আবার আমার নাম ঢুকিয়ে দিয়েন না তালিকায়!’’
নাজমুল আহসান লিখেন, ‘আমি একটা জিনিস বুঝলাম না। আপনারা আজহারিরে লিস্টে রাখতেছেন না কেন! তার মতো ইম্প্যাক্ট কন্টেম্পোরারি সময়ে খুব কম মানুষই রাখছে। এদেরকে অ্যাভয়েড করতে চাইলে আরেক কথা, কিন্তু যারা ইনক্লুসিভ লিস্ট করতেছেন, তারা আজহারিকে বিবেচনা কইরেন। আমার এক বন্ধু যার হাতে লোকজনের অনলাইন ইম্প্যাক্ট মেজার করার বিভিন্ন টুলস ও ডেটায় অ্যাকসেস আছে, তিনি আজহারিকে নিয়ে ভীষণ ইম্প্রেসড। আমার মনে হলো, তাই তো! কিন্তু আশ্চর্য্য হলাম যে কারও তালিকাতেই তার ঠাঁই হলো না।......’
সমালোচনা করে সালাহ উদ্দিন শুভ্র লিখেন, ‘ইসলামী বুদ্ধিজীবী বলে কিছু হয় না। কারণ বুদ্ধিজীবী মানে বুদ্ধিজীবী। একজন ইসলামিস্ট বুদ্ধিজীবী হইতে পারেন না। কারণ ধর্মের বাইরে যাওয়া যায় না। হিন্দু বা বৌদ্ধ বুদ্ধিজীবীও যে কারণে হওয়া যায় না। আমাদের ফরহাদ মজহার ইসলাম নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু তিনি ইসলামী বুদ্ধিজীবী না। ধর্ম নিয়ে বুদ্ধিজীবিতা করা যায় না। তাফসির বা বয়ান করা যায়। আলেম, ওলামা, মওলানা এসব তাদের পরিচয়। তারা সমাজের শিক্ষক। কিন্তু বুদ্ধিজীবী না। বুদ্ধিজীবী মানে ক্রিটিক, অবস্থার পরিবর্তন, নিজেকে ক্রমে জাস্টিফাই করা-ধর্ম এসবের ঊর্ধে।
নতুন এক তালিকা দিয়ে আহমেদি হোসাইন লিখেন, ‘বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা (কাজের ধরণ, ক্ষেত্র ও কারণসহ। পরিমার্জিত ও সংশোধিত) : ১। কেকা ফেরদৌসি। বাংলাদেশের রন্ধনশিল্পে যাদু বাস্তবতার (Magic Realism) প্রবর্তক। ২। রিপন ভিডিও। কবিতা ও দর্শন। বাংলা কবিতায় যৌক্তিক ইতিবাচকতার (Logical Positivism) জনক। ৩। হিরো আলম। গান। বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিকতাবাদী গায়ক। ওনার উগান্ডা গানটি পৃথিবীর সব মেহনতি মানুষের দ্রোহের আগুন। গানে হোক্কা হুয়া সংযোজন আমাদের প্রকৃতিবাদের দিকে ইশারা দেয়। ৪। মাহফুজুর রহমান। বাংলা সঙ্গীতে অস্তিত্ববাদী (Existentialism) ডিসকোর্সের উদ্ভাবক। ৫। সেফায়তুল্লাহ সেফুদা। নতুন মিডিয়ার আকর্ষণ। কাজের ক্ষেত্র: বিশ্লেষণমূলক দর্শন (Analytic Philosophy)। সবাই ওনার মতোই হতে চায়। ৪। কাজী ইব্রাহিম হুজুর। বিকল্প বিজ্ঞান (Alternate Science)। জাতি মামুন মারুফ, সাম্ভালা আর হুজুরের নতুন ব্যাখা জন্য অপেক্ষা করছে। ৫। ডাক্তার আপা। জার্মান আদর্শবাদ (German Idealism)। ইমানুয়েল কান্টের বিশুদ্ধবাদের সমালোচনা হিসাবে জার্মান আদর্শবাদের জন্ম। আর পুলিশের মুভমেন্ট পাশের বিরুদ্ধে আপার আদর্শ নতুন দর্শনের রাস্তা খুলে যায়। ৬। করোনা সার্টিফিকেট/ শাহেদ আলম। বাস্তববাদ। (Pragmatism)।আমরা জানি পোস্ট ট্রুথ বিশ্বে সংখ্যা, পরিসংখ্যান এগুলো সমাজের শক্তি সম্পর্কের (power relationship) বহিঃপ্রকাশ। যা করতে হবে তা করতে হবে— এ দর্শনের বাস্তব রুপ গিয়েছেন তিনি। ৭। ডাক্তার জাকির (Phenomenology and hermeneutics)। তাপমাত্রা, অনুজীববিজ্ঞান, জৈব ও প্রাণরসায়নের বাংলাদেশী মেলবন্ধন ঘটানোর অগ্রদূত। এবং ৮। ইতালিয়ান পার্সপোর্টধারী ভাই। নৈরাজ্যবাদী-ধ্বংসবাদ। (Anarcho-nihilism)। ভাই গ্রামসীর দেশে থেকেও নৈরাজ্যবাদে বিশ্বাসী। উনি দেশের সিস্টেমকে ধ্বংস করতে চান।’
জান্নাতুন নাঈম প্রিতি লিখেন, ‘একবার সাতজন বেকুব কিসিমের লোক এক এলাকায় ঘুরতে গেছে। একটু পরেই এক বেকুব বললো- আচ্ছা, অনেক ঘোরাঘুরি হইছে। আয় গুনে দেখি, আমরা এখন কয়জন আছি! এরপর এদের মধ্যে যেইই গুনতে যায়, গুনে দেখে ছয়জন আছে। তাহলে একজন হারাইলো কই? ফেসবুকে এক ভদ্রলোক একটা বুদ্ধিজীবীর তালিকা দিয়েছেন। সেই তালিকা দেখে আমার মনে পড়লো- এই তালিকায় একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী নাই! সেই লোকটা আছে তালিকা লেখার দায়িত্বে। বিদ্র- অগোপন সূত্রে খবর পেলাম তালিকাওয়ালা নিজেকেও তালিকায় রেখেছেন। এই উপলক্ষে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর সিনেমা দেখা যেতে পারে। সিনেমার নাম- তুমি আছো, তুমি নেই।’
মাহবুব মোর্শেদের দেয়া স্টাট্যাসের নিচে কমেন্টে নুরুল আনোয়ার লিখে, ‘এত বুদ্ধিজীবী থাকতে জাতির এত দুর্দশা ভাবাই যায় না।’ আরাফাত রিলকের মন্তব্য, ‘শ্রদ্ধেয় লেখক মনে হয়, বুদ্ধিজীবী বানানোর ঠিকাদারি পাইছেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।