গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ ভাইরাসে রাজধানী ঢাকাতে এখন পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এই রোগে দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ১৮ মার্চ। প্রথম মারা যাওয়া ব্যক্তিও রাজধানীর বাসিন্দা ছিলেন।
গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭৪ জন, যা মোট আক্রান্তের ৩৫ শতাংশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে লালবাগ বিভাগে (অপরাধ, তদন্ত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রাজধানীকে আটটি বিভাগে ভাগ করেছে পুলিশ)। এই বিভাগের বংশাল থানা এলাকায় তিনজন, লালবাগ থানা এলাকায় দুজন, চকবাজার থানা এলাকায় পাঁচজন, কোতোয়ালি থানা এলাকায় চারজন, সূত্রাপুর থানা এলাকায় তিনজন ও কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, লালবাগের কিছু এলাকা খুবই ঘিঞ্জি। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও কম। সামাজিক দূরত্ব সেভাবে না মানায় সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। লালবাগের পাশের ওয়ারী বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা ৭। এর মধ্যে ওয়ারী থানা এলাকায় ৪ জন, গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় ২ জন এবং যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ওয়ারী পুরান ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। এখনকার মানুষেরা তুলনামূলক সচেতন। এরপরও এ এলাকায় সংক্রমণের কারণ কী, তা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকে দেশের বাইরে নিয়মিত যাতায়াত করেন।
উদাহরণ হিসেবে সংক্রমিত হওয়া একটি পরিবারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই পরিবারের একজনের থাইল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। পরে পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। পরে একে একে ওই পরিবারের বাকি পাঁচ সদস্যও করোনায় সংক্রমিত হন।
মিরপুর বিভাগে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এর মধ্যে পল্লবী থানা এলাকাতেই ৭ জন। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ বয়স্ক পুরুষ। এ ছাড়া মিরপুর বিভাগের কাফরুল, মিরপুর মডেল থানা এবং শাহ আলী থানা এলাকায় একজন করে এবং দারুস সালাম থানা এলাকায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
গুলশান বিভাগের চারটি থানা এলাকায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বাড্ডা থানা এলাকায় দুজন এবং গুলশান, বনানী ও ভাটারা থানা এলাকায় একজন করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তারুজ্জামান বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একজনের মৃত্যুর পর ওই এলাকা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করা হয়েছিল। এরপর ওই এলাকায় আর কোনো সংক্রমণের খবর না পাওয়ায় ১৪ দিন পর লকডাউন তুলে দেওয়া হয়। রমনা বিভাগের কলাবাগান থানা এলাকায় তিনজন এবং রমনা থানা এলাকায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, মারা যাওয়ার তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ একজন মহিলা। সবাই পঞ্চাশোর্ধ্ব।
মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও, পল্টন ও মতিঝিল থানা এলাকায় একজন করে, তেজগাঁও বিভাগের আদাবর ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একজন করে এবং উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে কম মৃত্যু উত্তরা এলাকায়। উত্তরার অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান সরদার বলেন, এখানকার আবাসিক এলাকাগুলোকে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের বসবাস। আবাসস্থলগুলোও সুশৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্ন। করোনার সংক্রমণ না হওয়ার পেছনে এটি একটা কারণ।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ক্লাস্টার (একটি জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে অনেক রোগী) পাওয়া গেছে। এসব ক্লাস্টার থেকে কমিউনিটি সংক্রমণটা (জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া) বেশি হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী রাজধানীতে এসেছেন। যে কারণে রাজধানীতে সংক্রমণ বেশি হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।