পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামিক সহযোগিতা সংগঠনের মানবাধিকার সংস্থা দেশটিতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত রোববার ‘ভারতে ইসলামোফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান জোয়ার’ এবং ‘মুসলিম নির্যাতন’ বন্ধের আহŸান জানিয়ে একাধিক টুইট করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত মাসে নয়াদিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সমাবেশ থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হওয়ার পরে এ রোগটি ইতিমধ্যে দেশটির হিন্দু এবং ২০ কোটি শক্তিশালী মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে উত্তেজনা -বিভক্তিকে সঞ্চারিত করেছে। তাবলিগ জামাতের চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রচারের মধ্যে এবং কিছু হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টিকে ‘করোনজিহাদ’ বলে উত্তেজনা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলমানদের উপর সহিংস হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ওআইসির স্বাধীন স্থায়ী মানবাধিকার কমিশন তার অফিসিয়াল টুইটার পেজে বলেছে, ‘ওআইসিসি-আইপিএইচআরসি ভারত সরকারকে ভারতে ইসলামোফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান জোয়ার বন্ধে এবং অত্যাচারিত মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকারকে এইচআরআর আইনের আওতাধীন বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহŸান জানিয়েছে’।
একটি পৃথক টুইট বার্তায় অধিকার সংস্থা জানিয়েছে যে, তারা ভারতে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মুসলমানদের দোষারোপ করার প্রচারণার পাশাপাশি মিডিয়ায় তাদের নেতিবাচক প্রোফাইলিংয়ের নিন্দা করছে। সহিংসতার সর্বশেষতম ঘটনাটি ঘটেছে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কয়েক মাস বিক্ষোভের পরে যেটি মুসলমানদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র সাংবাদিকদের সাথে এক বৈঠকে বলেছেন যে, নয়াদিল্লির উচিত সংখ্যালঘু অধিকার সম্পর্কিত দেশীয় বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করা। শুক্রবার ঝড়ের জেরে কার্তারপুর শহরে একটি বড় শিখ মন্দিরের দুটি গম্বুজ পড়ার বিষয়ে ভারতের সমালোচনার জবাবে এই মন্তব্য করা হয়।
শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মারা যান এমন মন্দিরটি গত বছর পাকিস্তানি শহরে সংস্কার করা হয়েছিল এবং ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ ভিসা-মুক্ত সীমান্ত পারাপারের মাধ্যমে উন্মুক্ত করা হয়েছিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই অঞ্চলে শান্তির বিষয়ে তার দেশের প্রতিশ্রæতিবদ্ধতার জন্য এই করিডোরটিকে খুলে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ভারতীয় মিডিয়া জানিয়েছে, শনিবার ভারত সরকার পাকিস্তানকে জানিয়েছিল যে, মন্দিরের ক্ষয়ক্ষতি শিখ স¤প্রদায়ের মধ্যে ‘বিরাট আতঙ্ক’ সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আয়েশা ফারুকী বলেছেন, ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা ও ব্যাপক নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগকে আড়াল না করে ভারতের নিজের সংখ্যালঘু ইস্যুতে মনোনিবেশ করা ভাল।
রোববার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ফারুকী বলেন, ‘পাকিস্তান তাদের সংখ্যালঘুদের, তাদের সাইটগুলোকে রক্ষা করতে জানে এবং দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে’।
ভারতে মুসলিমদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন বেড়েছে : কাটজু
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান মার্কেন্ডেয় কাটজু বলেছেন, ভারতে মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন স¤প্রতি বেড়েছে এবং গণমাধ্যমের কিছু ব্যক্তি মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী ও দেশবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করছে। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি এ সংক্রান্ত মন্তব্য করেন। গত রোববার গণমাধ্যমে তার এ সংক্রান্ত মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে।
বিচারপতি কাটজু তার মন্তব্যের সপক্ষে উদাহরণ দিয়ে বলেন, মারকাজের তাবলিগ জামায়াতের প্রধান মাওলানা সা’দকে অনেক মিডিয়াওয়ালা ‘শয়তান’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তার বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারা আইপিসির অধীনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং তার বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগটি নিছক মিথ্যা এবং হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন।
বিচারপতি কাটজু বলেন, ‘মুসলিমরা কয়েক দশক ধরে নিজামুদ্দিনের মারকাজে জড়ো হচ্ছে এবং এজন্য তারা মার্চেও তাই করেছিল। মারকাজের অনেক লোক বিদেশ যেমন- মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজস্তান ইত্যাদি থেকে এসেছিল এবং সম্ভবত কিছু লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল, যারা অজান্তেই জামায়াতে অন্যদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল তা বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সেজন্য মাওলানার বিরুদ্ধে এফআইআর সম্পূর্ণ অন্যায় ও ভিত্তিহীন।’
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক জিজ্ঞেস করেন কেন মাওলানা পুলিশে আত্মসমর্পণ করছেন না? কেউ এর সঠিক কারণটি অনুমান করতে পারে না, তবে খুব সম্ভবত তিনি আশঙ্কা করতে পারেন যে, পুলিশের পক্ষ থেকে থার্ড ডিগ্রি (নির্যাতন) প্রয়োগ করা হতে পারে।’
বিচারপতি কাটজু বলেন, ‘সা¤প্রতিক দিল্লির দাঙ্গায় (ফেব্রæয়ারি, ২০২০), মুসলিমরা বাছাই করা গুÐা এবং অসামাজিক কার্যকলাপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। পুলিশ এক্ষেত্রে নির্বাক দর্শক হয়ে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘রাজস্থানের ভরতপুরের এক সরকারি হাসপাতালে একজন গর্ভবতী নারীকে ভর্তি করতে অস্বীকার করা হয়েছিল, কারণ তিনি একজন মুসলিম ছিলেন এবং ফলস্বরূপ তার সন্তান মারা গিয়েছিল।’
বিচারপতি কাটজু বলেন, ‘গণমাধ্যমের কিছু ব্যক্তি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় মুসলিমদের দোষারোপ করছেন, বিশেষত তাবলিগ জামাতের সাথে যারা যুক্ত তারা এই রোগ ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।’ তিনি এ ব্যাপারে টুইটারে ‘করোনা জিহাদ’, ‘করোনা টেরোরিজম’ ‘করোনা তাবলিগ’ ইত্যাদি ট্রেন্ড করা হয়েছে এবং কয়েক কোটি মানুষ তা দেখেছে বলে মন্তব্য করেন।
বিচারপতি কাটজু আরও বলেন, ‘মূলধারার গণমাধ্যমগুলো বারবার জোর দিয়েছিল যে, তাবলিগ জামায়াতের সদস্যরা ‘সুপার স্প্রেডার’ এবং কেউ কেউ দাবি করেছিল যে, তাদের গুলি করে মারা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপরে থুথু দেয়া, হাসপাতালের ওয়ার্ডে মলত্যাগ করা, নার্সদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা, প্রস্রাবের বোতল নিক্ষেপ করা, মুরগির বিরিয়ানি দাবি করা ইত্যাদি অভিযোগ করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছে যে, তাবলিগিদের উদ্দেশ্য যথাসম্ভব মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়া।’
এ ধরনের অপ্রচারকে হিটলারের নাৎসি মন্ত্রী গোয়েবলসের মতবাদের সঙ্গে তুলনা করে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন বিচারপতি মার্কেÐেয় কাটজু। সূত্র : আরব নিউজ, পার্স টুডে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।