Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘের গর্জন, করোনার রাজত্বে সুনামগঞ্জ হাওরে সোনালী ধানের ভবিষ্যত সংকটে

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ৮:১৯ পিএম

সোনালী ধানে ভরপুর সুনামগঞ্জের হাওর। আনন্দ মাতোয়ারা কৃষকের মন, কিন্তু শঙ্কা ভারী বৃষ্টিপাতের। করোনার প্রাদুর্ভাবে গৃহবন্দি শ্রমিকও। তীরে এসে যেন তরী ডুবার আংশকা। ফুরফুরে মনে বিষাদের ছায়া গ্রাস করছে কৃষকদের। এমনিতেই হাওরের পানি দেরীতে নামায় বেরো ধানের চাষাবাদও শুরু হয় কিছুটা বিলম্বে। প্রকৃতি অনুকূল হওয়ায় ফলনে ভূলিয়েছে অতীত দূভোর্গ। কিন্তু সব সম্ভাবনা এখন করোনা ্ও বৃষ্টির পূর্বাভাস কেড়ে নিয়েছে। সরকার থেকে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার জন্য যন্ত্রপাতি দিলেও সেটা জুটি না সবার কপালে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ধান কাটার শ্রমিক আনতে কয়েকটি জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা। ইতিমধ্যে শ্রমিকও আসতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জে। জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, এবছর জেলায় ১১টি উপজেলা ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে দুই লাখ ২০ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ১৬২ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেরায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর, ধর্মপাশা উপজেলায় ৩১ হাজার ৭২০ হেক্টর, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৪৬৫ হেক্টর, তাহিরপুর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫২৭ হেক্টর, দিরাই উপজেলায় ২৭ হাজার ৭৭৬ হেক্টর, শাল্লা উপজেলায় ২১ হাজার ৮৮২ হেক্টর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২২ হাজার ৩৩৯ হেক্টর, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৬১০ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১২ হাজার ৯৬০ হেক্টর এবং ছাতক উপজেলায় ১৪ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিনের আবাদ হয়েছে বোরো ধান। সেখানে ধানের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি সংশ্লিষ্ট সূত্রে, বাংলাদেশের তিন মাসের খাদ্য যোগান দেয় এ জেলা থেকে উৎপাদিত ধান। কিন্তু মাঠে ধান থাকলেও একার পক্ষে ধান কাটার সামর্থ্য নেই কৃষকদের। প্রতিবছর বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়ে আসলেও এবার অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক যার কারণে কৃষকদের মাঠের ধান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৪.০৩ শতাংশ কাটা হয়েছে।

কৃষকদের দাবি, ধান কাটার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি যদি দেওয়া হয় তাদের, তাহলে দ্রুতই মাঠ থেকে ধান ঘরে নিয়ে আসতে পারবেন তারা। তা না হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেওয়া ১৭-২০ এপ্রিলের মধ্যে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের আগাম সর্তকবার্তা সব ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার একটি বড় ধরনের আশঙ্কা করছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা।


অন্যদিকে ধান কাটার শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসনও। বালু শ্রমিক, পাথর শ্রমিকসহ যারা লক ডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের ধান কাটার আহবান জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। যারা ক্ষেতে ধান কাটতে যাবেন তাদের সরকারি রিলিফ দেয়া হবে। রাতে থাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ব্যবস্থা করবে জেলা প্রশাসন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক সুনামগঞ্জে ধান কাটতে আসতো প্রতি বছর । করোনা থামিয়ে দিয়েছে সেই যাত্রা। তবে স্থানীয়ভাবে শ্রমিক সংকট উত্তরণের ব্যবস্থা চলছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের ৯২টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ১৯টি রিপার সচল আছে। নতুন করে সরকার থেকে নতুন ৪০টি হার্ভেস্টার ও ২৭টি রিপার বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এগুলো ধান কাটা ও মারাইয়ের কাজে লাগানো হবে।
জেলা সির্ভিল সার্জন ডা. মো. শাসম উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে প্রতি উপজেলায় শ্রমিকদের জন্য ১টি করে মেডিকেল টিম গঠন করেছি।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, অন্য পেশার শ্রমিকদের ধান কাটায় আনার জন্য আমরা উৎসাহ প্রদান করছি। শ্রমিক প্রনোদনা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০হাজার পিস সাবান, ১০হাজার পিস বিস্কুট বিতরণ করা হবে। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। আমরা চাই আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে হাওরের ফসল কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দেওয়ার রয়েছে পরিকল্পনা ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংকট

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ