Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠান্ডা-কাশি ফ্লু করোনা

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা সহ আরও কিছু উপসর্গ ঠান্ডা-কাশি, ফ্লু ও করোনার যে কোনটাতেই থাকতে পারে। তাহলে অধুনা যে করোনা মহামারিতে নাকাল হচ্ছে বিশ্ব তাকে কিভাবে আলাদা করব? এই মিলে যাওয়া উপসর্গের কারনেই আজকাল কারও মধ্যে এই লক্ষণগুলি প্রকাশ পেলেই সবাই আতংকিত হয়ে পড়ছেন। এই লক্ষণগুলি এক হলেও কিছু অমিলও আছে এদের মধ্যে যা দিয়ে এদের আলাদা করতে পারে বিজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সাধারণ ঠান্ডা-কাশি-
ছোট বড় সবাই জীবনের কোন না কোন সময় এই ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। এই ঠান্ডা-কাশির জন্যেও দায়ি করা যায় কিছু নামি ও অনেক স্বল্প পরিচিত প্রায় ২০০ ভাইরাসকে। এদের মধ্যে উল্লেখ করলে নাম আসবে- হিউম্যান রাইনো ভাইরাস, করোনা ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এডেনো ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইসিয়াল ভাইরাস ইত্যাদি। দেখলেনত এই করোনা ভাইরাস আগে থেকেই আমাদের ঠান্ডা-কাশি করে আসছিল। তবে এখনকার এই কোভিড ১৯ রোগ সৃষ্টিকারি করোনা স্ট্রেইন আগে কখনওই মানুষকে সংক্রমিত করেনি।
লক্ষণ:
নাকদিয়ে পানি পরা বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
সামান্য কাশিও থাকতে পারে
কখনও কখনও শরীর দূর্বল লাগে
হাঁচি হয়
চোখ দিয়ে পানি পরে বা চোখ চুলকায়
গলায় অস্বস্থি লাগে
শরীর হালকা জ্বর জ্বর ও ব্যথা কারও কারও হতে পারে
মাথা ব্যথা হয়না বললেই চলে
সাধারন ওষুধেই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই ঠান্ডা-কাশি একদম ভাল হয়ে যায়। এই লক্ষনগুলি কিন্তু সরাসরি ভাইরাস ইনফেকশনের কারনে হচ্ছে তা নয়। আমাদের ইমিউন সিস্টেম এদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েই এই উপসর্গ গুলি শরীরে প্রকাশ পাচ্ছে। তাই অপেক্ষা করে শরীরকে এ থেকে মুক্তি দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশ্রাম নিন, প্রচুর তরল খাবার খান আর সাধারন জ্বর ঠান্ডার ওষুধ ব্যবহার করুন।
ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা-
প্রতি বছরের আবর্তনেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমনের কারনে এই ফ্লু-এর প্রাদুর্ভাব হয়। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এর একটি ভাল দিক হল ইতোমধ্যেই এর টিকা আবিষ্কার হয়েছে। প্রতি বছরই এটি নিয়ে রাখতে হবে। টিকা নেয়ার পরও যদি সংক্রমন হয় তবে শরীরে এর প্রকোপ কম হয়।
লক্ষণ:
জ্বর জ্বর বা শীত শীত অনুভ’তি
শুকনা কাশি
শরীর দূর্বল লাগা
শরীর ব্যথা
নাক দিয়ে পানি পরা বা নাক বন্ধ হওয়া
কখনও কখনও গলায় অস্বস্থি বা পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
এটি মানুষকে আক্রমন করার পর খুব তাড়াতাড়িই নাক, গলা ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে ফেলে। ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই এটি ভাল হয়ে যায় । তবে জ্বর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে, আর প্রচুর তরল খাবার খেয়ে এ সময়টা বিশ্রামে থাকলে দ্রæত আরোগ্য হবে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমন-
এ যাবত অনেক অনেক করোনা ভাইরাসই পশু পাখিকে আক্রান্ত করছে। তবে মাত্র ৬ টি করোনা ভাইরাসই মানুষকে সংক্রমিত করতে পারছে। এই করোনা ভাইরাসগুলি মানুষের শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশকে মৃদু বা মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত করে। অধুনা করোনা ভাইরাস কোভিড ১৯ এর আগে কখনওই মানুষ দেখেনি। এই ভাইরাস দ্রুতই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরছে। ইতোমধ্যেই এটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ছাড়িয়ে পরেছে। আক্রান্ত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এটি সবাইকে সংক্রমিত করলেও কিছু সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে যাদের বয়স বেশী ও যে কোন বয়সি যাদের আগেই শারীরিক সমস্যা আছে- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাপানি, ফুসফুসের অন্য কোন সমস্যা ইত্যাদি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আজও এর কোন ভাল ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই সাথে চলমান রোগগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও লক্ষণ মত রোগিকে চিকিৎসা সহায়তা করাই এখন ডাক্তারদের কাজ। লক্ষণ:
জ্বর ও শীত শীত লাগা
শুকনা কাশি
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
কখনও কখনও শরীর দূর্বল লাগা
কখনও কখনও শরীর ব্যথা হতে পারে
মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হতে পারে
গলা ব্যথার অনুভ’তি হতে পারে
সংক্রমিত হওয়ার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই মানুষ আক্রান্ত হয়। তবে ৫ থেকে ৬ দিনেই বেশীর ভাগ মানুষে লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলি দেখা দিলেই রুগী খারাপের দিকে চলে গিয়ে শ্বাস কষ্ট শুরু হবে তা নয়।
তাই বলা যায় যার নাক দিয়ে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, চোখ চুলকাচ্ছে তার করোনা সংক্রমনের কারণে এমনটা হয়নি। আবার যার জ্বর, শুকনা কাশি, দূর্বলতা আর শ্বাস কষ্ট হচ্ছে তার এখন পরীক্ষা করে করোনা নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরী। এই লক্ষনগুলি ইনফ্লুয়েঞ্জায়ও হয়, তাই এখন নিশ্চিত হতেই হবে। নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধরনের রুগীকে আলাদা রাখতে হবে। প্রতি উপজেলাতেই এখন পরীক্ষা করার জন্য যোগাযোগ করার ও নমুনা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে দ্রæত সরকারের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা করান, নিজে নিশ্চিত হউন অন্যকেও সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করুন।
ডা. জহুরুল হক সাগর
নকজাতক ও শিশু মেডিসিন বিশেষজ্ঞ,
লাইফ হাসপাতাল, শনির আখরা,
যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
মেইল: [email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন