Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাস্তায় গড়ানো দুধ ভাগ করে খাচ্ছে মানুষ ও কুকুর!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১১ এএম

এখন তো যুদ্ধ চলছে ৬০ ন্যানোমিটারের একটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। যে যুদ্ধ জিততে হলে ঘরে থাকতে হবে, পকেটে পয়সা না থাকলে খাবার জুটবে কিনা তা নিয়েও ঘোর অনিশ্চিয়তা। হয়ত জুটবেই না। করোনা সামলাতে তৎপর সরকার কি ১৩০ কোটি পেটের হিসেব রাখতে পারে এখন!

'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি'! করোনার কালবেলায় কবিতার লাইনও এসে পড়েছে বাস্তবের পথেঘাটে। ক্রমাগত লকডাউনকরোনা হয়ত রুখে যাবে একদিন, কিন্তু ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে পেটের খিদে? ততদিন পর্যন্ত পাকস্থলিকে বোঝানো যাবে, 'ভাইরাসের আক্রমণ রুখতে এসো সমঝোতা করি দু'তরফে?' উত্তরটা দিতে কোন রকেট সায়েন্স জানবার দরকার পড়ে না। খিদে মানে না ভাইরাসের সাতকাহন। তাই কখনও সন্তানদের নিয়ে মা'কে ঝাঁপ দিতে হয় গঙ্গায়, কখনও বা সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলে পড়ে যুবকের দেহ! এবার যেমন রাস্তায় গড়ানো দুধ ভাগ করে খেতে দেখা গেল মানুষ আর পথকুকুরকে। খিদের আবার বিভাজন কী!

ঘটনা ভারতের আগ্রার। ভালোবাসার সৌধ তাজমহল থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরের এক রাস্তায় হঠাতই উল্টে গেল দুধ বোঝাই গাড়ি। রাস্তায় গড়িয়ে গেল অনেকটা দুধ। অন্য সময় হলে কী হত বলা মুশকিল, কিন্তু এখন তো যুদ্ধ চলছে ৬০ ন্যানোমিটারের একটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। যে যুদ্ধ জিততে হলে ঘরে থাকতে হবে, পকেটে পয়সা না থাকলে খাবার জুটবে কিনা তা নিয়েও ঘোর অনিশ্চিয়তা। হয়ত জুটবেই না। করোনা সামলাতে তৎপর সরকার কি ১৩০ কোটি পেটের হিসেব রাখতে পারে এখন!

কিন্তু খিদে পাবে। যেমন লকডাউনের আগেও পেত। আর খিদে মেটাতে প্রয়োজনে রাস্তায় গড়ানো দুধের পাশেই বসে পড়তে হবে। পথকুকুরদের দলের সঙ্গেই ভাগ করে নিতে হবে সেই দুধ। হাতের তালুতে দুধ তুলেই চালান করে দিতে হবে পেটের ভিতর। বলতে হবে, 'এই পেয়েছি, আবার কত!' ভিডিয়োতে অবশ্য এই ভদ্রলোক একটি পাত্রে তুলে নিচ্ছেন দুধ। বাড়িতে হয়ত অপেক্ষা করছে ফুটফুটে একটা ছোট্ট সন্তান। খাবার ভাগ হয়ে যাচ্ছে দেখে কুকুরদলের চিৎকারেও অবিচল সেই মানুষটা। দু'তরফই যেন বলছে, 'অল্পেতে স্বাদ মেটে না, এ স্বাদের ভাগ হবে না'!আগ্রার রামবাগ চৌরাহার এই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। চোখে জল আসছে অনেকের, কেউ বা স্ক্রল করে চলে যাচ্ছেন পরের পোস্ট বা ছবি দেখতে। আবার অনেকেই হয়ত সেই ছবি দেখেই ভাবছেন, 'ছেলেমেয়েটার মুখে কাল কী তুলে দেব?'

ভাইরাস এসেছে, ভাইরাস চলেও যাবে একদিন। বেঁচে থাকতে খিদে যাবে না। খিদে যায় না আসলে। তাই মানুষ-কুকুর ভাগ করে খাবার। মায়ের সঙ্গেই জলের অতলে তলিয়ে যায় সন্তানরা। সিলিং ফ্যান থেকে ঝোলে বন্ধ কারখানার কোন শ্রমিক, চাষির নিথর দেহের পাশে পড়ে থাকে ফলিডলের শিশি। করোনাভাইরাস সেই সত্যিটাই আরেকবার চোখের সামনে মেলে ধরছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ