পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ প্রস্তুতি যে ছিল না, তা এখন অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা ও হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অথচ জানুয়ারিতে চীনের উহানে করোনা যখন মহামারী আকার ধারণ করে ও তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে বলে বলা হচ্ছিল, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ব্যাপক ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলেছিলেন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা কাজ করছি, কাজেই করোনা দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে আমরা সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এমনকি এ ভাইরাস যদি এসেও পড়ে, আমরা তা মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত। শুধু স্বস্থ্যমন্ত্রী নন, অন্যান্য মন্ত্রীও করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলেছিলেন। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের পরিস্থিতি ভালো। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী তো বলেই ফেলেন, করোনার চেয়েও আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। এখন করোনার সার্বিক পরিস্থিতি যখন অবনতির দিকে যাচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে, প্রস্তুতি বলতে তেমন কিছু নেই। মন্ত্রীদের প্রস্তুতির কথাবার্তা বোলচালে পরিণত হয়েছে। তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল বা সঙ্গতি নেই।
করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমিত হতে পারে এমন ধারণা শুরুতেই করা হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। এক ধরনের ঢিলেমি ভাব ছিল। প্রস্তুতির বিষয়টি বাতকে বাত ছিল। সরকার যখন পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি টের পায়, ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। মূলত সরকারের প্রস্তুতি শুরু হয় অবনতি বুঝে। অর্থাৎ, যেখানে করোনার ভয়াবহতার বিষয়টি দূরদৃষ্টির মাধ্যমে অনুধাবন করে আগেভাগে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। এখন পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করার পর করোনার পেছনে দৌড়েও কূল পাচ্ছে না। অথচ আমরা করোনার আগে থাকতে পারতাম। খরগোশের মতো দৌড়েও কচ্ছপকে ধরতে না পারার মতো অবস্থা হতো না। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া করোনার ভয়াবহতা আগেভাগে উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই দেশগুলো সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা করতে পেরেছে। আমাদের দেশে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখানে করোনা পরিস্থিতির পিক পয়েন্টে থেকেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত নয়। যে কয়টি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেগুলোতেও অপ্রতুলতা রয়েছে। করোনা চিকিৎসা শুরুর প্রাক্কালে চিকিৎসকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামাদির (পিপিই) অভাবে তারা চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। সরকারের তরফ থেকে তাদের প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়। পরবর্তীতে সরকার পিপিই’র ব্যবস্থা করলে চিকিৎসা কযর্ক্রম শুরু হয়। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের চাপে পড়ে করোনার চিকিৎসার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তাদের ঘোষণা কার্যকর হয়নি। আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটকে করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরাও সংক্রমিত হচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েক জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। করোনার অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সরকার তাদের বরখাস্ত করেছে। তবে কেন ও কী করণে এই চিকিৎসকরা অপারগতা প্রকাশ করেছে, তা বলা হয়নি। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট এসব আলামত থেকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, এ চিকিৎসার প্রস্তুতিতে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল এবং এখনো আছে। এ পরিস্থিতিতে করোনার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা মোকাবেলার একমাত্র ফ্রন্ট লাইনার আমাদের চিকিৎসকরা। করোনা নির্মূলে সবার আগে তাদের প্রস্তুত করতে হবে। এ জন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সবার আগে প্রয়োজন। একের পর এক তারাই যদি আক্রান্ত হতে থাকেন তবে করোনা মোকাবেলা করার আর কোনো পথ থাকবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, অল্প সময়ে চিকিৎসকের করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকেই প্রতীয়মান হয়, তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি। চিকিৎসকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং ছয় চিকিৎসকের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশের ঘটনার প্রতিক্রিয়া অন্যান্য চিকিৎসকদের ওপর পড়া অস্বাভাবিক নয়। আমরা মনে করি, চিকিৎসকরা যাতে নির্ভয়ে এবং নিঃসংকোচে করোনা চিকিৎসায় আত্মনিবেদিত হতে পারে, এজন্য তাদের সব ধরনের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা এখনই নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য নির্ভয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে যা দেরি হওয়ার, তা হয়ে গেছে। এখন চলমান পরিস্থিতির আর যাতে অবনমন না হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। গাফিলতি হলে তার দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ পুরো সরকারকেই নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।