পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দিন যতই যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সামনে কঠিন পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে। বিশ্লেষকরাও বলছেন, এ মাসটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, চিকিৎসা ব্যবস্থা স¤প্রসারিত করা না হলে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম গতিশীল করার বিকল্প নেই। দুঃখের বিষয়, করোনা পরিস্থিতির এক মাস হয়ে গেলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো এ চিকিৎসায় এগিয়ে আসেনি। এমনকি করোনা বহির্ভূত রোগের চিকিৎসাও বন্ধ বা স্থগিত। হাসপাতালগুলোর নামকরা চিকিৎসকরা চেম্বার বন্ধ করে বাসায় ঢুকে আছে। অর্থাৎ, রোগ নিরাময় এবং রোগীর সেবা নিয়ে যে হাসপাতাল ও চিকিৎসক, তারা এ আদর্শ দূরে ঠেলে চলে গেছে।
আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলো যতটা না চিকিৎসা সেবার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে, তার চেয়ে বেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাদের এই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির অনেক নজির দেশের মানুষের জানা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশের ক্রান্তিকালে এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং তাদের চিকিৎসক হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী দেখলেই চিকিৎসা দিতে অপারগতা দেখিয়ে যাচ্ছে, না হয় কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চিকিৎসকদের এমন সুবিধাবাদী আচরণে যৌক্তিক কারণেই প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন এবং এমন চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উষ্মা প্রকাশের পর বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনর চিকিৎসা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী এই উষ্মা প্রকাশ না করলে তারা করোনা চিকিৎসার ঘোষণা দিত না। প্রশ্ন হচ্ছে, অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কেন চিকিৎসার কথা বলতে হবে? দেশ এবং দেশের মানুষের দুঃসময়ে তাদের এভাবে গুটিয়ে থাকা কি চরম অমানবিকতা নয়? অথচ চিকিৎসা সেবা মানে মানব সেবায় ব্রতী হওয়া। আমাদের দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক এখন আর এই আদর্শ ধারণ করে না। তাদের লক্ষ্যই হয়ে পড়েছে এ পেশার মাধ্যমে ব্যবসা করা। যার প্রমাণ দিয়েছে করোনা চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে। এ ক্ষেত্রে তাদের মানবিকতার কোনো প্রকাশ ঘটেনি। অথচ আমরা দেখেছি, ইটালিতে করোনা চিকিৎসা করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অন্তত ১০০ জন চিকিৎসক নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে। এক চিকিৎসক দম্পতি রোগীর চিকিৎসা দিতে দিতে একই দিনে মৃত্যুবরণ করে মানুষের মনে ভাস্বর হয়ে রয়েছে। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকায় অবসরে চলে যাওয়া অনেক চিকিৎসক নিজেদের এ পেশায় ফিরিয়ে এনে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছে। তাদের কেউ জোরও করেনি কিংবা আহবান জানায়নি। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে মানবতার সেবায় তারা আত্মনিয়োগ করেছে। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় আমাদের দেশে। আমাদের বেসরকারি হাসপাতাল এবং অধিকাংশ চিকিৎসক ব্যবসা বুঝলেও মানবতা বোঝে না। করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির আগেই আমরা করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করার কথা বলেছি। কারণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাতে না পারলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পিপিইসহ সনাক্তকরণ কিট দেয়া হয়েছে। তারপরও অনেক চিকিৎসকের মধ্যে অনীহার প্রবণতা রয়েছে। অথচ মানবতার সেবায় নিজের পেশার যথার্থতা প্রমাণের এটাই উত্তম সুযোগ। এ পেশায় ঝুঁকি থাকা স্বাভাবিক। তাই বলে দেশ ও জাতির সংকটকালে পিছিয়ে থাকা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। চীনের চিকিৎসকরা যদি পিছিয়ে থাকত, তাহলে দেশটির মহামারী কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কি কল্পনা করা যায়?
বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসা দেয়ার ঘোষণা দিলেও এর জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেয়া দরকার তার কিছুই এখন পর্যন্ত নেয়নি। তাদেরই প্রমাণ করতে হবে, এ ঘোষণা দায় সারার জন্য দেয়া নয়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালগুলো এই দু’দিনে মানব সেবায় সর্বোচ্চ অবদান রাখতে এটাই সকলের কামনা। বলা বাহুল্য, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো এগিয়ে এলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসত। চিকিৎসকদেরও উচিৎ করোনা মহামারী বিস্তার ঠেকাতে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা। সাধারণ মানুষের পক্ষে করোনা প্রতিরোধ কি সম্ভব? সারাবিশ্বে করোনা প্রতিরোধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরাই। যুদ্ধটা একার্থে তাদেরই। তারা জান বাজি করেই লড়ে যাচ্ছে। তারা ভালো করেই জানে, করোনা প্রতিরোধ করতে না পারলে এ থেক কেউই রক্ষা পাবে না। আমরা আশা করব, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চিকিৎসক সকলেই করোনা চিকিৎসায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবে। সরকারের উচিত হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কার্যকরভাবে করোনা চিকিৎসা ও অন্যান্য চিকিৎসা দিচ্ছে কিনা তা মনিটর করা। যারা চিকিৎসা দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।