Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়ে পালাল হোটেলের রাঁধুনি, বিপাকে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তাররা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৭ পিএম

ঢাকার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবস্থান করছিলেন এমন একটি আবাসিক হোটেল থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে রাঁধুনিসহ অনেক স্টাফ পালিয়ে গেছেন। ফলে, সেখানে অবস্থানরত ৫৬ জন চিকিৎসক খাবারের কষ্টে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন। খবর: বিবিসি বাংলা।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালটি বাংলাদেশে করোনাভাইরাস চিকিৎসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বলে পরিচিত। সে কারণে এই হাসপাতালটিতে কর্মরত চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীদের নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়ি না গিয়ে ভিন্ন একটি জায়গায় অবস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
কিন্তু হাসপাতালে নিয়মিত দায়িত্বের পর ফিরে এসে খাবারের ব্যবস্থা না থাকাকে রীতিমত ‘অমানবিক’ এবং ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন সেখানে অবস্থানরত একজন চিকিৎসক।
গোপনীয়তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ঐ চিকিৎসক বলেন, একে তো আমরা হাসপাতালে অনেক চাপের মধ্যে কাজ করি, তারওপর দিনের পর দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় না। এরপর হোটেলে ফিরে তিন বেলার সাধারণ খাবারটা যদি আপনি না পান, সেটা কতটা হতাশাজনক একটু ভাবেন! কেবল বিস্কুট আর পাউরুটি খেয়ে কত থাকা যায়?
এরপর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছাসেবী এক ক্যাটারিং সার্ভিসের সরবারহ করা খাবার খাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ আজই অর্থাৎ বুধবার তাদের অন্য আরেকটি আবাসিক হোটেলে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অবশ্য চিকিৎসকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেয়া হলেও এখন ঐ হোটেলে থাকছেন হাসপাতালের সেবাকর্মীরা।
হোটেল কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবস্থান করছিলেন যে হোটেলে সেই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আসিফ বাবু বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় থেকে কেবল খাবার ব্যবস্থা নয়, কোনও সুবিধাই দেয়া যাচ্ছিল না হোটেলের অতিথিদের। ‘হোটেলের শুধু রাঁধুনি নয়, আমার ৩৬ জন স্টাফের সবাই পালিয়ে গেছে। বিশেষ করে ২৭শে মার্চের পর থেকে আর একজন স্টাফও ছিল না, এমনকি টেলিফোন অপারেটরও না, কেবল আমি একাই আছি।’
‘যেহেতু ডাক্তাররা প্রতিদিন করোনাভাইরাসের রোগীই ডিল করে, আমার স্টাফরা সবাই ভয় পেয়েছি। আর আশেপাশের লোকেরা তাদের আরো ভয় দেখিয়েছে। যে কারণে এরা বলতে গেলে এক রাতের মধ্যেই সবাই চলে যায়।’
বাবু বলেন, নতুন করে হোটেলটিতে আবার কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে আগের মত পুরোদমে হোটেলের সব সেবা চালু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
কিন্তু এতদিন কিভাবে খেলেন ডাক্তারেরা?
কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ওই চিকিৎসক বলেন, প্রায় তিনদিন খাবারের কষ্ট করার পর একদিন অনলাইনে তারা একটি পোস্ট দেখতে পান।
ঐ পোস্টে বলা হয়, চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী একটি দল ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থানরত যেকোনও চিকিৎসকের জন্যে সুলভ মূল্যে খাবার সরবারহের ব্যবস্থা করছেন। এরপর অনলাইনেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা।
চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী দলটির একজন সদস্য ডা. আয়েশা হোসেন সাদিয়া বলছিলেন, ডাক্তাররা যোগাযোগ করার পর থেকে তারা গত ২৭শে মার্চ থেকে খাবার সরবারহ করছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে সরকার অনেক কিছু করছে, কিন্তু সাধারণ নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’
তবে, ঢাকার কিডনি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া বলেন, কিছুদিন আগে একজন সহকর্মীর খাবারের কষ্ট দেখে প্রথম এই সার্ভিস চালুর কথা মাথায় আসে তার। অনেক ভাবনা-চিন্তা করতে করতে শেষ পর্যন্ত এই ডাক্তারদের দিয়েই শুরু হয়েছে তাদের সার্ভিস। দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য তারা মাত্র ৮০ টাকা নেন। যদিও সাধারণ ছুটির মধ্যে খাবার তৈরি আর পরিবহন মিলে তাদের খরচ আরও বেশি হয়।
তিনি জানান, কেবল কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক নন, এই মুহূর্তে ঢাকার আরও ১৫টি হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।



 

Show all comments
  • ash ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ৭:০৯ এএম says : 0
    HAY RE BANGLADESH ! AMON DESH TI KOTHAO KHUJE PABE NAKO TUMI ???? SHOTTTI
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ