মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনা মহামারিতে লণ্ডভণ্ড বিশ্ব পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী ও উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলো। ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা এই ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের তুলনায় সম্পদ ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে থেকেও সফলতা দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত সেখানে ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের, আর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৮৫ জনের।
অল্প সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশজুড়ে লকডাউন চলছে এক সপ্তাহ ধরে, আর এর মধ্যেই সরকারের নেয়া পদক্ষেপ এবং তা কার্যকর করার ধরণে আশাবাদী হচ্ছেন সেদেশের অনেকে। ৬৭টি ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষা ইউনিট তৈরি করে কাজে লাগিয়েছে দেশটির সরকার। গাড়ি চালিয়ে পার হওয়ার সময়ও পরীক্ষা করা হচ্ছে অনেককে। দক্ষিণ আফ্রিকা কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিদিন ৩০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করতে পারবে।
বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষাকৃত দ্রুত, কার্যকর এবং অনেকটা নির্দয় ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ভয়ানক একজন নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। নেতা হিসেবে সহানুভূতিশীল, ধীর স্থির চরিত্রের অধিকারী হলেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ও বেসরকারি খাত থেকে সাহায্যের প্রবাহ নিশ্চিত করে পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর প্রেসিডেন্টের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রী জুয়েলি এমখিজেও তার কর্মচঞ্চল ও পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি মার্জিত ও ওয়াকিবহাল দৈনিক সংবাদ সম্মেলনের জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছেন।
এই সময়ে যে কোনো ভুলত্রুটি হয়নি, তা কিন্তু নয়। অনেক সময়ই পুলিশ এবং সেনাবাহিনী তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যবসায়িক রাজধানী জোহানেসবার্গ এবং অন্যান্য এলাকার রাস্তায় সাধারণ মানুষকে পেটানো, অসম্মানজনক আচরণ করা থেকে শুরু করে গুলিও করেছে। কিছু নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দোটানা ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্ট বার্তা দেয়া এবং কয়েকজন মন্ত্রীর কথা ঘুরানোর মত ঘটনাও ঘটেছে।
তবে সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে দারিদ্রপীড়িত এবং ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও তাদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা। অনেকে মনে করেন সেসব এলাকায় এখনও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যেই ধরণের লকডাউনের মধ্যে এক সপ্তাহ পার করেছে, সেরকমটা বিশ্বের আর কোনো দেশেই দেখা যায়নি।
এই লকডাউনের মধ্যে ঘরের বাইরে দৌড়ানো বা কোনো ধরণের ব্যায়াম করতে যাওয়া, সিগারেট বা বিয়ার কিনতে যাওয়া, কুকুরকে নিয়ে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, যা পৃথিবীর অনেক দেশেই অনুমোদিত ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার যেই সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অকার্যকর হিসেবে সমালোচনা করা হয় এবং তাদের দেশের যেই বেসরকারি খাতকে বিচ্ছিন্ন ও লোভী হিসেবে সমালোচনা করা হয়, তারা যেভাবে এই দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে, যে বিষয়টি আসছে আলোচনায়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এই মুহূর্তে যেই ব্যক্তি আত্মপ্রসন্নতায় ভুগতে নিষেধ করছেন এবং আত্মতুষ্টির সম্ভাব্য ভয়াবহতা সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, তিনি দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার উদ্বোধন করার সময় বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তার এমখিজে বলেন, ‘আমরা এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা সম্ভবত প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের আগের শান্ত অবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেই তাহলে যেকোনো সময় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারি। তখন আমরা সতর্ক হওয়ারও সুযোগ পাবো না।’ তার মন্তব্য, ‘যেহেতু দেশের ভেতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, আমরা এখনও সমস্যার সঠিক চিত্র পাই নি।’
অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও, দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আসল পরীক্ষা এখনও বাকি। আর যেহেতু আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসম সমাজ ব্যবস্থাগুলোর একটি দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজ, সেই পরীক্ষার ফল নির্ধারিত হবে দেশটির দরিদ্রতম সম্প্রদায়গুলোর আচরণে।
জোহানেসবার্গের একপ্রান্তে থাকা শহরতলী আলেক্সান্দ্রার রাস্তা দিয়ে এক বিকেলে হাঁটলেই ধারণা পাওয়া যায় যে দক্ষিন আফ্রিকার জন্য এই ভাইরাস আটকে রাখা কতটা কঠিন হতে পারে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি, গণমাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে ক্রমাগত বার্তা দেয়া, পিক আপ ট্রাকে করে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করায় পরীক্ষা করার ইউনিটগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ থাকলেও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাটির রাস্তায় শিশুদের ফুটবল খেলতে অথবা তরুণদের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দেখা যায়। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।