পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অর্থ সঞ্চয় করতে চান না এমন কেউ কি আছেন? ছোটবেলা থেকে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করি টাকা জমানোর। মাতাপিতা টিফিন খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিলে ওখান থেকে সঞ্চয় করে রাখতাম মনের শখ-আহ্লাদ পূরণ করার জন্য। আমাদের সমাজে ছোট থেকে বড় সবার ক্ষেত্রে এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কিন্তু ব্যাপারটি অনেক কষ্টের। মানব জাতি হিসেবে আমাদের চাওয়া আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। মধ্যবিত্ত ও ছা পোষা পরিবার হলে তো কথাই নেই! কিন্তু কীভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ থেকে আপনি টাকা সঞ্চয় করে রাখবেন?
দ্রব্যমূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মধ্যে কোরোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতি গোল্লায় যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ থেকে ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় করা খুবই দূরূহ ব্যাপার। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিমাসে বাধ্যতামূলক কিছু ব্যয় করতে হয়। যেমন: বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, বাড়ি ভাড়া, ইন্টারনেটের খরচ, খাওয়ার খরচ, যাতায়াত খরচ, ইত্যাদি। এর বাহিরেও অনেক রকমের শখ-আহ্লাদ থাকে। এ কারণে কিছু অপরিকল্পিত ব্যয় আমাদেরকে করতে হয়। তাই মাসের শেষে অর্থের টান পড়ে।
অর্থ সঞ্চয় করে রাখার জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। এ কৌশলের নাম হচ্ছে ‘কাহকেইবো’। ১৯০৪ সালে হানি মতোকা নামের জাপানি এক মহিলা এই কৌশলের প্রবর্তন করেন। গৃহস্থালি কাজে খরচের হিসাব রাখার জন্য কাহকেইবো উদ্ভাবন করেছিলেন এই নারী। কাহকেইবো পদ্ধতিতে নিয়মিত খরচের হিসাব লিখে রাখতে হয় কাগজে। কাগজে লেখার অভ্যাস আমাদের অনেকের মধ্যে কমবেশি আছে। কিন্তু কাগজে লেখার মধ্যেই এই পদ্ধতি শেষ না । এই পদ্ধতি আপনাকে আরো কিছু প্রশ্নের সন্মুখীন করবে। যেমন: ১. আপনার কাছে কী পরিমাণ অর্থ আছে? ২. আপনি কতটুকু সঞ্চয় করতে চান? ৩. আপনার খরচ কতটুকু? ৪. পরিস্থিতির উন্নতি করবেন কীভাবে?
প্রতি মাসের শুরতে আপনাকে এই চারটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এই প্রশ্নগুলো যখন আপনি নিজেকে করবেন তখন আপনি বুঝে ফেলবেন খরচের কোন খাত প্রয়োজনীয় আর কোন খাত নিষ্প্রোয়জন। মাসের শুরতে কাগজে লিখে ফেলুন নির্দিষ্ট মাসিক আয়। মূল আয় থেকে বাধ্যতামূলক খরচ বিয়োগ করলে পাওয়া যাবে বাকি অর্থের পরিমাণ। এবার হচ্ছে বড় ঝামেলা। কোনো কিছু কেনার ইচ্ছা মনে জাগলেই তা বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। শুরতে কিছুটা সময় নিয়ে আকাক্সক্ষার সঙ্গে নিজের মানি ব্যাগের তুলনা করতে হবে। ভাবতে হবে যে আসলে বস্তুটি ক্রয় করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? বর্তমান আর্থিক অবস্থায় এটা কি সম্ভব? কেনার পর সেটা কি আদৌ ব্যবহার করা হবে? অনেক সময় আমরা হুজুগে পড়ে চিন্তা ভাবনা না করে হুটহাট করে ফেলি। এটা করা যাবে না
আমাদেরকে দুইটি বিষয় এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে। প্রথমত, কোনটি আমাদের প্রয়োজন এবং কোনটি আমাদের চাওয়া। দুইটা শব্দ কিন্তু একই বিষয় নয়। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য কোন জিনিসটি অতীব জরুরি এবং কোন জিনিসটি আমাদের শখের বসে চাওয়া। যখনই আপনি চাওয়া এবং প্রয়োজন এই দুটি শব্দের অর্থ বুঝতে পারবেন, তখনই আপনি আপনার আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে কোনো বস্তু ক্রয় করতে গেলে আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারবেন। এভাবে সর্বোচ্চ প্রয়োজনের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করতে হবে।
কাহকেইবো পদ্ধতি মাসের পাশাপাশি সপ্তাহে ও বছরে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিটি সময় সীমার শেষে লিখে রাখা হিসাবের পর্যালোচনা করতে হবে। তখন বোঝা যাবে কোন খাতে আপনি কতটুকু ব্যয় করছেন। এরপর কীভাবে পরিস্থিতির উন্নতি করবেন তা নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের হাতে লেখা খরচের খাতের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর সুযোগ নেই, সেহেতু পরিস্থিতির উন্নতির চাবিকাঠি নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতেই। কাহকেইবো পদ্ধতি একজন ব্যক্তিকে নিজের খরচের ব্যাপারে সচেতন করে তোলে।
এই পদ্ধতিতে অনেক ব্যবহারকারী বাড়তি খরচের জন্য কিছু শ্রেণি তৈরি করে নিতে পারে। যেমন: ১. বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যম্ভাবী খাত। ২. ঐচ্ছিক খাত। ৩. অতিরিক্ত খরচ।
এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে চাহিদা এবং প্রয়োজন এই শব্দ দুইটির পার্থক্য নিশ্চিত করতে পারবেন। তো আর দেরি কেন? এখন থেকে প্রয়োগ করা শুরু করে দিন। এই কাহকেইবো পদ্ধতির মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনি লাভবান হবেন অবশ্যই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।