মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবায় প্রতি ঘণ্টায় প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। নিউইয়র্কে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেছে ২৩ জন। আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এই মৃতের তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে ৭১৬ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নিউইয়র্ক রাজ্যে। নিউইয়র্কে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। টুইন টাওয়ারে হামলায় নিহতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ব্যস্ত নগরী নিউইয়র্ক। এ কারণে নগরীর n আকুতি জানিয়েছেন, ‘আমার নগরীর জনগণ বিপন্ন। স্রষ্টার দোহাই, দ্রুত ব্যবস্থা নিন।’
বাংলাদেশিদের লাশের লাইনও দীর্ঘ হচ্ছে। আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট ৬২ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।
রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জরুরি আদেশ জারি করেছেন। যেখানে ভেন্টিলেশন যন্ত্র আছে, সেখান থেকে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের উঠিয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। মেয়র লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের নগরীর সংকটে এগিয়ে আশার জন্য অ্যালার্ট জারি করেছেন। নিউজার্সির গভর্নর রাজ্যে জাতীয় পতাকা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩ এপ্রিল মেয়র বিল ডি ব্লাজিও আমেরিকার সর্বত্র ডাক্তার ও নার্সদের তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব পেশাজীবীদের দ্রুত করোনাভাইরাস উপদ্রুত এলাকায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রাখতে বলেছেন। আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্ক, ডেট্রয়েট এবং লুইজিয়ানা নগরীর অবস্থা খুবই নাজুক হবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিল ডি ব্লাজিও। সর্বত্র সেনা মোতায়েন না করলে এবং আগে কখনো করা হয়নি এমন কোনো ব্যবস্থা না দিলে অনেক মূল্যবান জীবন ঝরে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আসছে সপ্তাহে নিউইয়র্ক নগরীর হাসপাতালে পাঁচ হাজারের বেশি লোক ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকবে এবং তাদের কাছে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর নেই বলে মেয়র জানিয়েছেন।
আতঙ্কিত মেয়র ব্লাজিও আকুতি জানিয়ে বলেছেন, ‘এখনো শান্তিকালীন অবস্থার মতো দেশ চলছে। অথচ আমার নগরীর জনগণ বিপন্ন। স্রষ্টার দোহাই, দ্রুত ব্যবস্থা নিন।’
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি নিউইয়র্কে অনেক সাহায্য করেছেন। নেভাল হাসপাতাল পাঠিয়েছেন, ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছেন। অন্য রাজ্যের দিকেও তাঁকে নজর রাখতে হবে।
মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ এখন বলছে, করোনাভাইরাস অন্যজনের সরাসরি কথা থেকেও ছড়াতে পারে। ছয় ফুট ছাড়াও ভাইরাসটি বাতাসে ২৭ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাস্থ্যবিমা থাক বা না থাক সবার জন্য চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসক চৌধুরী সরোয়ারুল হাসান বলেন, নগরীর কোনো হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। করিডরে রোগী রাখা হয়েছে। জীবন বাজী রেখে ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে হাসপাতালেই দিন রাত কাটাচ্ছেন। এসব স্বাস্থ্যসেবীরা নিজেদের, তাঁদের পরিবারের জীবনকে বিপন্ন করে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমেরিকার হাসপাতালে প্রথমবারের মতো চিকিৎসকেরাও অসহায় বোধ করছেন। চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটের কারণে জীবন রক্ষা করার সর্বোচ্চ প্রয়াস তাঁদের ব্যর্থ হচ্ছে।
চৌধুরী সরোয়ারুল হাসান আশঙ্কা করছেন, এই মহামারি সহসাই যাবে না। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি এর জন্য লড়াই করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
এদিকে অবরোধের কারণে নিউইয়র্ক নগরীতে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে লোকজন কার্যত গৃহবন্দী। অনেকের ঘরেই খাবারের মজুত শেষ হয়ে আসছে। জরুরি খাদ্য সহযোগিতার জন্য অবশ্য প্রতিটি এলাকায় তৈরি খাবার দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা।
দূরের অন্যান্য রাজ্য থেকেও চিকিৎসা কর্মীদের আগমন ঘটছে নিউইয়র্কে। রাজ্যের অবসরে যাওয়া অনেক ডাক্তার, নার্স স্বেচ্ছাসেবায় এগিয়ে এসেছেন। বাইরে থেকে আসা লোকজনের থাকার জায়গা পর্যন্ত নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।