গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে উৎপত্তি হয়
করোনা ভাইরাসের। এ ভাইরাসের স্বরূপ বুঝতে ৩৫টি দেশ মিলে হাজারের বেশি জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করেছে
করোনার। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মানুষকে আক্রান্ত করা ভাইরাসটির আট ধরনের খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বারবার বৈশিষ্ট্য বদল করা এ ভাইরাসের স্বরূপ বুঝতে চেষ্টা করছেন সবাই। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, উহান থেকে ছড়ানো
করোনা ভাইরাসের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের
করোনা ভাইরাসের মিল নেই।
বিজ্ঞানীদের দাবি,
করোনা ভাইরাসের আটটি প্রজাতি পুরো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে। এসব ভাইরাস দ্রুত তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করছে। আর এজন্যই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে
করোনা ভাইরাসে ব্যাপক প্রাণহানি হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এ তেমন প্রভাব পড়েনি।
এ বিষয়ে ভারতের পদ্মভূষণ পুরস্কার জয়ী চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন ও ভারতে ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা হয়েছে। তবে ভারতে ছড়ানো ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্যে তারতম্য রয়েছে। ভারতে যে
করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন সেটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু জিনগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষকরা বলেছেন, যে সব জায়গায়
করোনা হামলা চালিয়েছে সব থেকে বেশি সেখানকার গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৪ থেকে ৯ গ্রাম। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়লে
করোনা জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সার্স, মার্স, সোয়াইন ফ্লু যে কোনও ভাইরাসের বিস্তারেই আবহাওয়ার প্রভাব ছিল।
করোনার ক্ষেত্রেও তাই। আবহাওয়ার তারতম্যে এই ভাইরাসের গতিবিধি ভিন্ন হয়। ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতাও নির্ভর করে আবহাওয়ার তারতম্যে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শ্বাসনালীতে প্রবেশের পরই
করোনা কোষ দখল করে লাখ লাখ সংস্করণ তৈরি করছে। তাই উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ইতালিতে যে প্রজাতির
করোনা আক্রমণ চালিয়েছে সেটির ইআরএনএতে তিনটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সেটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল বাশার মীর মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম বলেন, ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনের হার এখন কমে এসেছে। এতে আক্রমণের ক্ষমতাও কমতে পারে। এ কারণেই হয়তো ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে তেমন আক্রান্তের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সী বলেন, জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির আটটি ধরন বা প্রজাতি পাওয়া গেছে। আর ভাইরাসের নিউক্লিওটাইডে ১১টি পরিবর্তন দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এসব পরিবর্তনে উল্লেখ করার মতো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তাই অন্তত জিনগত বৈশিষ্ট্যের জন্য আলাদা অঞ্চলে আলাদা প্রভাব পড়ার কথা নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে যত
করোনাভাইরাস দেখা গেছে, সবগুলোর মধ্যেই ঋতুভিত্তিক একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। সার্স, মার্স, সোয়াইন ফ্লু- সবকিছুতেই ঋতুর একটি প্রভাব ছিল। নতুন
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভারতে উন্মোচিত জিনগত বৈশিষ্ট্য থেকে আশাবাদী হয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অঞ্চলে ইউরোপের মতো ক্ষতি নাও হতে পারে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) কয়েকজন বিজ্ঞানীর গবেষণা বলছে, আক্রান্ত দেশগুলোর গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৪ থেকে ৯ গ্রাম। আর এশিয়ার যে দেশগুলোয় বর্ষা মৌসুম আছে, সেখানে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো কম হবে। কারণ, এই অঞ্চলে প্রতি ঘনমিটারে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ গ্রাম পর্যন্ত।
জানা গেছে, চীনের পরপরই তাদের প্রতিবেশী হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরে
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তিনটি দেশই
করোনার ব্যাপক বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এর মধ্যে গোটা দুনিয়ার সঙ্গে এশিয়ার যোগাযোগের হাব হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুর। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯ জন, যার মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। এতে আশাবাদী হয়ে তাঁরা বলছেন, চীন থেকে ইউরোপ ঘুরে ভাইরাসটি দক্ষিণ এশিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে এটি দুর্বল হয়েছে। এ অঞ্চলের উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কাজ করেছে
করোনার বিস্তারের প্রতিকূলে।