মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের শহর থাত্তার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে দুইদিন আগে একটি টেলিফোন আসে যে, গ্রামে তাবলীগ জামাতের একটি দল এসেছিল এবং এতে গ্রামবাসীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় বাজোরা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হাসান সোমরো। এই তথ্যের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সেখানে যায় এবং দশজন ব্যক্তিকে নিয়ে এসে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে হাসান সোমরো বিবিসিকে জানান, করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার কারণে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যখন মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে যে রাইউইন্দে তাবলীগে অংশ নেয়া অনেকের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সেই উদ্বেগ অনেকটাই বেড়ে যায়। এসব উদ্বেগের বিষয়ই তিনি কন্ট্রোল রুমকে জানিয়েছিলেন।
স্থানীয় সিভিল হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ২০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন, যাদের মধ্যে অন্তত দু’জনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দৃশ্যমান ছিল। তাদেরকে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়নি।
তাবলীগ জামাতের সদস্যদের নিয়ে এই ভীতি শুরু হয় রাইউইন্দে তাদের বাৎসরিক ইজতেমার পর থেকে। সিন্ধুর স্বাস্থ্য বিভাগ এটা নিশ্চিত করেছে যে ইজতেমা থেকে ফেরা চার জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। রাইউইন্দে মার্চ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখে তাবলীগ জামাত যে আন্তর্জাতিক ইজতেমার আয়োজন করেছিল, তাতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। এরপরেই পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় এমন ভীতি ছড়িয়ে পড়ে যে ওই ইজতেমায় অংশ নেয়া অন্যদের মধ্যেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। ফলে তারা এলাকার মসজিদে এলে কিংবা ধর্মপ্রচার করতে এলে তাদের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে।
তবে থাত্তাই সিন্ধুর একমাত্র জেলা নয় যেখানে তাবলীগ জামাতের মানুষজন বিরোধিতা আর প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছেন। লারকানা জেলার সাইহার জেলার একটি মসজিদে তাবলীগ জামাতের সদস্যরা যাওয়ার পর স্থানীয় মানুষের বিরোধিতার মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ডোকরি তহসিল এলাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এসে তাদের পরীক্ষা করে দেখতে হয়। তবে ডোকরি হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আজিম শাহ বলছেন, তাদের কারো মধ্যেই করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও তাবলীগ জামাতের সদস্যদের নিয়ে ভীতি কাটেনি।
ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক মসজিদ ও বিভিন্ন এলাকায় থাকা তাবলীগ জামাত সদস্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। অনেকে তাদের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি তুলেছেন।
সামাজিক উন্নয়নে কাজ করেন এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত মাসুদ লোহার ফেসবুকে একটি পোস্টে দাবি করেছেন, তাবলীগ জামাত যদি এখনই নিষিদ্ধ করা না হয়, তাহলে সারা দেশেই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে যেতে পারে। শাহাদতকোটের একজন বাসিন্দা মুরাদ পান্দারানি ওই পোস্টে সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, সিন্ধু সরকারের উচিত খুব তাড়াতাড়ি তাদের নিষিদ্ধ করা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া।
কেউ কেউ তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন। সিন্ধু থেকে প্রকাশিত জার্নাল ‘অ্যাফেয়ার’-এর সম্পাদক আলী আহমদ রিন্দ তার একজন বন্ধুকে উদ্বৃত করে লিখেছেন যে, তার ওই বন্ধু করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে করাচী থেকে শিকারপুরে পালিয়ে আসেন, কিন্তু সেখানেও তাবলীগ জামাতের একজন প্রচারক তার দিকে এগিয়ে এলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তখন তিনি একটি ইট তুল তাদের ধাওয়া করেন এবং চিৎকার করতে থাকেন, ‘তুমি নিজেও করোনাভাইরাসে মারা যাবে আর আমাদেরও মারবে!’
আলী আহমদ রিন্দের ভাষ্য অনুযায়ী, তার বন্ধু তাকে বলেছেন যে সউদী আরব যেখানে মহামারি থেকে বাঁচতে পবিত্র স্থাপনাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে তাবলীগ জামাতের লোকজনের উচিত ঘরের ভেতরে থাকা।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির সিনেটর সাস্সি পালেজু বিবিসিকে বলেছেন, তিনি মনে করেন তাবলীগ জামাতের লোকজনের উচিত তাদের বাড়িতে থাকা। তিনি বলেন, লকডাউন ও কড়াকড়ি সত্ত্বেও রাইউইন্দ থেকে তাদের সদস্যরা বেশ কয়েকটি জেলায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘রাইউইন্দের ইজতেমায় যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সবাইকে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি, ফলে তাদের যে কারো মধ্যে করোনাভাইরাস থাকতে পারে। আমার থাত্তা জেলায় তাদের যে সদস্যরা এসেছেন, তাদের মধ্যে আফ্রিকান নাগরিক যেমন আছে, তেমনি খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং পাঞ্জাবের লোকজনও আছে। তাদের উচিত এটা বুঝতে পারা যে এখন এভাবে ধর্মপ্রচারের সময় নয়। তাবলীগ জামাতের সদস্যদের উচিত তাদের নিজেদের এলাকায় এবং বাড়িতে থাকা।’
১৯২৬-২৭ সালের দিকে ভারতে তাবলীগ জামাতের উৎপত্তি হয়। মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লির শহরতলীর মেওয়াটি এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ধর্মপ্রচার করতেন মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস। জানা যায়, তাবলীগ জামাতের প্রথম সম্মেলন হয় ১৯৪১ সালে, ভারতে, যেখানে মোটামটি ২৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।
চল্লিশের দশক পর্যন্ত তাবলীগ জামাত তৎকালীন অখণ্ড ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পাকিস্তান, পরবর্তীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব হওয়ার পরে তাবলীগ জামাতের দ্রুত বিস্তার ঘরে এবং সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
তাবলীগ জামাতের সবচেয়ে বড় সম্মেলন, ইজতেমা, প্রতিবছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পাকিস্তানের রাইউইন্দেও প্রতিবছর বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
সিন্ধু ও পাঞ্জাবে তাবলীগ জামাতের হয়ে ধর্ম প্রচারণার কাজ করেছেন আহমদ খান (ছদ্মনাম)। তিনি বলছেন, তিনি জেনেছেন যে, সিন্ধের প্রত্যন্ত অনেক এলাকার মসজিদ থেকে তাবলীগ জামাতের সদস্যদের বের করে দেয়া হচ্ছে। তিনি সিন্ধু, শুক্কুর, ভাট শাহ ও হালাসহ অনেক এলাকায় ধর্মপ্রচারণার কাজ করেছেন, কিন্তু এরকম ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি।
করাচির মক্কি মসজিদকে ভিত্তি করে কাজ করে তাবলীগ জামাত। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রদেশের মসজিদগুলোয় দলগুলোকে ভাগ করে দেয়া হয়। তাদেরকে সেসব এলাকার মসজিদের বিস্তারিত তালিকা দেয়া হয়, যেখানে তাদের অবস্থান করতে হয়।
আহমদ খান বলছেন, ‘এসব দলে আট থেকে দশজন সদস্য থাকে, সেই সঙ্গে থাকেন দুইজন কর্মী, যাদের কাজ খাবারদাবার প্রস্তুত করা। সাধারণত এটি দশদিনের সফর হয়ে থাকে, যেখানে তারা অন্তত দশটি মসজিদে যান। তারা খুব সকালে বেরিয়ে দোকানদার, পথচারীদের মসজিদে এসে ধর্মীয় বাণী শোনার আহবান জানান। 'স্থানীয়ভাবে ধর্মপ্রচারের পর দলটি তাবলীগ জামাতের মূল কেন্দ্র রাইউইন্দে গিয়ে তিনদিন অবস্থান করেন। সেখানে তারা তাদের সফরের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। কাদের কাছে তারা ধর্মের বাণী নিয়ে গেছেন, সেখানে কেমন আচরণ পেয়েছেন ইত্যাদি বর্ণনা করেন। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।