মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আক্রান্ত : ৬,৪৫,১৫৮ মৃত : ২৯,৯৫১ সুস্থ : ১,৩৯,৫৫০
শনিবার একদিনে আরো প্রায় ৪৯ হাজার আক্রান্তের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৮ জনে। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জনের। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫০ জন মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সর্বাধিক প্রায় ১২ হাজার একদিনে আক্রান্ত বেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ ল্যাখ ১৫ হাজার ৯৮৬ জনে। এদিকে গতকাল শনিবার বিশ্বজুড়ে আরো ২ হাজার ৫৬৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে ৮৮৯ জনের। এর ফলে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এরপর স্পেনে ৬৭৪, ব্রিটেনে ২৬০, যুক্তরাষ্ট্রে ২৪১, ইরানে ১৩৯, হল্যান্ডে ৯৩, বেলজিয়ামে ৬৪, জার্মানিতে ৫২, পর্তুগালে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, মৃত্যু হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে করোনা মোকাবেলায় সবচেয়ে সফল দেশ হচ্ছে জার্মানি। ইউরোপের বাকি দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশটিতে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৫৭৫ জনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২ হাজার ২৮৫ জন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এতে সত্যিকারের মৃত্যুর হার এখনও অস্পষ্ট। পরীক্ষায় ধরণে ভিন্নতার কারণে দেশ ভেদে প্রাপ্ত তথ্যেও অনেক ফারাক দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৪.৫ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ২২ জন রোগীর মধ্যে ১ জন এই রোগে মারা যাচ্ছেন। তবে, মৃত্যুর হার আরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ভাইরাসে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ইতালি। সেখানে মৃত্যু হারও সবচেয়ে বেশি, ১১.৩ শতাংশ। দেশটিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেখানকার প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং তুলনামূলকভাবে একটি ছোট অঞ্চলে মহামারিটির তীব্রতা দেখা যাওয়ায় এই সংখ্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবচেয়ে কম মৃত্যু হার জার্মানিতে। সেখানে আক্রান্ত প্রায় ৫০ হাজার রোগীর মধ্যে ৩০৪ জন মারা গেছে। অর্থাৎ, মৃত্যু হার ০.৬২ শতাংশ। শৃঙ্খলা এবং উপযুক্ত সরকারি পদক্ষেপের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
যে দেশ থেকে করোনা ছড়িয়েছে সেই চীনের চেয়েও মৃত্যুর হারের শতাংশ অনেকটাই বেশি ইওরোপের একাধিক দেশে। পরিসংখ্যান বলছে, করোনার জেরে চীনে মৃত্যুর হার যেখানে ৪ শতাংশ, সেখানে ইতালিতে ১১.৩ শতাংশ, স্পেনে ৭.৪ শতাংশ, ফ্রান্সে ৫.৩ শতাংশ,ও ব্রিটেনে ৫.২১ শতাংশ। দেখা গিয়েছে এই সমস্ত দেশের প্রশাসন প্রথম থেকেই করোনা নিয়ে বেশ উদাসীন ছিল।
খানিকটা স্বস্তি জার্মানিতে! শতাংশ ও পরিসংখ্যানের বিচারে করোনার গ্রাসে জার্মানিতে মৃত্যুর হার অনেকটাই কম। ইতালিতে জনসংখ্যার বিচারে বেশির ভাগের গড় বয়স, ৬৩। সেখানে জার্মানিতে গড় ৪৭ বছর। সেই দিক থেকে জার্মানিতে বয়স্কদের সংখ্যা কম। তার জেরে জার্মানিতে করোনা আক্রান্ত বয়স্কদের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের থেকে কম। ফলে, করোনায় জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা অনেকটাই কম।
করোনার প্রকোপ ইওরোপ জুড়ে ছড়াতেই সতর্ক ছিল জার্মানি। ফ্রান্স, ইউকে, স্পেনে যে সংখ্যক কোভিড ১৯ টেস্টিং হয়েছে, সেই সংখ্যাগুলো যোগ করলে যা দাঁড়ায়, তার চেয়েও বেশি সংখ্যক কোভিড ১৯ টেস্টিং করেছে জার্মানি। প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার নাগরিকের করোনা টেস্ট করেছে ইওরোপের এই দেশ। জানা গিয়েছে চিকিৎসার ধাঁচ নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে জার্মানি। কোভিড ১৯ রুখতে দেশের একাংশেই শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থা বা হাসপাতালগুলিকে কুক্ষিগত করেনি সেদেশ। সারা দেশে এমন হাসপাতালের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পরিষেবা সকলেই পেয়েছেন। আর এভাবেই মৃত্যুমিছিল খানিকটা রোধ করেছে জার্মানি।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় চীন ও ইতালিকে ছাপিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্পের দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক মানুষ শুধুমাত্র নিউইয়র্কেই এই ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। জানা গিয়েছে, শনিবার অবধি আমেরিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০০রও বেশি। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দুই হাজার জনের। নিউইয়র্কের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় দেশজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেব রাখে। তাদের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে শুধুমাত্র নিউইয়র্কেই ৫০ হাজারের মতো মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মৃতের সংখ্যা ও হার দুইই ইতালির থেকে অনেক কম আমেরিকার। এই মুহ‚র্তে আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ১.৫ শতাংশ।
ভাইরাসটি শুরু হওয়া চীনের উহান প্রাপ্ত তথ্যের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, করোনভাইরাস রোগীদের প্রকৃত মৃত্যুর হার প্রায় ১.৪ শতাংশ - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমানের তুলনায় ৩.৪ শতাংশ কম। এ বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডানকান ইয়ং বলেছেন, একটি দেশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ‘পরীক্ষার নীতির উপর নির্ভর করে’। সূত্র : ডেইলি মেইল, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।