Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লকডাউনে শত মাইল হাঁটছেন ভারতের অভিবাসী শ্রমিকরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তিন সপ্তাহের নজিরবিহীন লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর সে দেশের ভিন্ন রাজ্য থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা অনেকেই রুটিরুজি হারিয়ে নিজের গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। লকডাউনে তাদের কাজকর্ম থেমে গেছে, এর মধ্যে ট্রেন ও বাস আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অনেকেই শত শত মাইল পথ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিতে শুরু করেছেন।
দিল্লি থেকে অনেকেই তারা রওনা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানের দিকে, আবার গুজরাট থেকেও কেউ কেউ টানা দু’দিন বা তিন দিন একনাগাড়ে হেঁটে ফিরে আসছেন রাজস্থানে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অনেক মহাসড়কে এখন গাঁট্টি-বোচকা, ব্যাগ-সুটকেস মাথায় দল ধরে ধরে বহু মানুষকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার এই অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তারা কেউই সরকারি সাহায্যের ভরসায় অপেক্ষা করতে পারেননি।
দুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার লকডাউন ঘোষণার ভাষণে বলেছিলেন, ‘দেশবাসীর এখন আগামী কয়েকদিন একটাই কাজ - নিজেদের ঘরের ভেতর আটকে থাকা’। কিন্তু যারা রুটিরুজির ধান্দায় নিজের ঘর ছেড়ে বহু দূরে ছোটখাটো কাজ করছিলেন তারাই এতে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেনÑ কারণ তাদের ঘরে ফেরার ট্রেন-বাস সবই বন্ধ।
রাজস্থানের ঢোলপুরের বাসিন্দা কিষেণলাল দিল্লির একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। দোকান বন্ধ থাকায় তার মাইনেও জুটছে না, কাজেই তিনি কয়েকশো মাইল দূরের ঢোলপুরের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। কিষেণলাল বিবিসিকে বলছিলেন, ‘রাস্তায় কোনো ট্রাক বা গাড়ি কিছুটা রাস্তা বসিয়ে নিলে ভাল, নয়তো হেঁটেই গোটা রাস্তা মেরে দেব’। এই যাত্রায় তার সঙ্গী রাকেশ জানান, ‘এখানে বসে থাকলে কেউ তো আর মাইনে দেবে না - দেখি গাঁয়ে গিয়ে কিছু কাজ পাই কি না। অন্তত ক্ষেতে গম তো কাটতে পারব’। রাজস্থানের সুরথগড়ের একটি কোল্ডস্টোরেজে কাজ করত বিহারের চম্পারণের জনা পঞ্চাশেক কর্মী। কাজ হারিয়ে এই গোটা দলটি আবার প্রায় বারোশ মাইল দূরে তাদের গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন - যদিও দুদিনে তারা পৌঁছেছেন সবে আগ্রা পর্যন্ত। প্রচÐ গরমে, ক্ষিদেয় আর পিপাসায় এর মধ্যেই তাদের দশা রীতিমতো কাহিল।
ওদিকে দিল্লি থেকে দুতিনশো মাইলের মধ্যে যাদের গ্রাম, তারা রাস্তায় নেমে পড়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবছেনই না। কোলের শিশু-সমেত পাঁচ জনের একটি পরিবার যেমন এদিন যাচ্ছিল দিল্লি থেকে আলীগড়। রীতিমতো ধুঁকতে ধুঁকতেও জাতীয় সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের বউটি বলছিল, ‘পৌঁছে আমরা নিশ্চয় যাবÑ হ্যাঁ, সময় লাগবে, কষ্টও হবে, দুটি পুরো দিন হয়তো লেগে যাবে। তারপরও শনিবার ভোরের দিকে গাঁয়ে চলে যেতে পারব বলে আশা করছি’। তার জা আবার পাশ থেকে যোগ করেন, ‘দিল্লিতে যার পকেটে পয়সা নেই, সে কী খাবে বলুন তো? পেটে কি কিল মেরে থাকবে? গ্রামে গেলে অন্তত রুটি আর চাটনি তো আশা করি পাব’। তার স্বামীরও আক্ষেপ, ‘এভাবে পথে নেমে পড়া ছাড়া কোনও উপায় নেই, কারণ দিল্লি শহরে কেউ কাউকে দেখে না’। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ