Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যানবাহন সঙ্কটে ভোগান্তি

ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

আজ থেকে ১০দিনের টানা ছুটি। বিমান, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ। আজ থেকে বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে লোকসমাগমরোধে সরকার আজ থেকে টানা ১০দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সেই ছুটির আমেজে ঢাকা ছেড়েছে লাখ লাখ মানুষ। গতকাল বুধবার ছিল সেই ঘরে ফেরার শেষ দিন। একমাত্র গণপরিবহন ছিল বাস। শেষ মুহূর্তে ঘরে ফিরতে গিয়ে বাসের অভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। উপায় না পেয়ে অনেকে ট্রাক, পিকাপভ্যানেও রওনা করেছেন। সব মিলে ছুটি শুরুর আগে রাজধানী হয়ে গেছে একেবারেই ফাঁকা। ব্যস্ত এলাকাগুলোতেও গতকাল দুপুরে দু’একটার বেশি গাড়ির দেখা মেলেনি। আর গণপরিবহন বলতে মিনিবাস চলেছে হাতেগোনা। বাসের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা ছিল কয়েক গুণ।
রাজধানীর গুলিস্তান গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার আশপাশের এলাকা কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সাভার, ধামরাই এলাকায় যাওয়ার জন্য মানুষ বেশি ভিড় করেছে। গুলিস্তান ও ফুলবাড়ীয়া টার্মিনালে শত শত যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়লেও আগের দিনের মতো সংখ্যা বেশি ছিল না। দেশের সব এলাকার দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা কমে গেছে জানিয়ে মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, মঙ্গলবার যে সব বাস ঢাকার বাইরে ছিল সেগুলো ফিরে আসার পর আর ঢাকা ছাড়েনি। যে সব বাস ঢাকার বাইরে রাখার ব্যবস্থা আছে বা সেই এলাকার বাস চালক থেকে থাকলেই শুধু সেই বাস গতকাল ঢাকা ছেড়েছে।

এদিক, বাসের স্বল্পতার সুযোগে ঈদের মতোই ট্রাক, মিনিট্রাক, পিকাপভ্যানে করে মানুষ গাদাগাদি করে রওনা করেছে। পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় গিয়েও দেখা গেছে ট্রাক ও পিকাপে চড়ে গাদাগাদি করে মানুষ যাচ্ছে। এই গাদাগাদি করে যাওয়াকে বিশেষজ্ঞরা ‘মহাবিপদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শরীরে নভেল করোনাভাইরাস রয়েছে কিন্তু বুঝতে পারার মতো উপসর্গ দেখা দেয়নি বলে যারা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের কারণে একটি পুরো কমিউনিটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জোর প্রচার চালানো হলেও মানুষ খুব একটা কেয়ার করছে না। টানা ১০দিন ছুটি ঘোষণার পর হাজার হাজার মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে গ্রামের পথে রওনা করেছে তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপক ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সাধারণ ছুটির সময়টিতে নাগরিকদের জনসমাগম এড়িয়ে যার যার ঘরে থাকতে বলা হলেও শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ির দিকে যাত্রা করেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। এতে করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছে।
আইইডিসিআরের সবশেষ তথ্য মতে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন কোন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত না হলেও নতুন করে একজন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তা মানছেন না অনেকেই। বরং দীর্ঘ ছুটি পেয়ে অনেকেই গ্রামের দিকে ছুটে চলেছেন। জনসমাগম এড়িয়ে চলা তো দূরের কথা ভিড় ঠেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ঘরে ফিরছেন। বুঝতেও পারছে না কি ভুল করছেন তারা। নিজেদের জীবনের পাশাপাশি চরম ঝুঁকিতে ফেলছেন পরিবারের সদস্যদেরও।

আমাদের রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে দেখা যায়, ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড়। মনে হচ্ছে সবাই কোন উৎসবে বাড়ি ফিরছেন। ঢাকা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষের মিছিল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছে। লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা ফেরিতেই নদী পার হচ্ছেন। মাগুরার বাসিন্দা সবুজ মোল্লা বলেন, আমরা জানি করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে রোগ। তারপরও বেশ কয়েক দিন ছুটি পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেই বের হয়েছি।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে মানুষের প্রচন্ড ভিড় দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা সচেতন কবে হবে? যেখানে বাংলার ১৭ কোটি মানুষ রয়েছেন ঝুঁকিতে, সেখানে কিভাবে সম্ভব এভাবে বাড়ি ফেরা? ঘরমুখো এই মানুষেরা আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে।
সবাইকে সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য এবং আরো অধিক সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এখনি থামুন। আপনাদের সন্তানদের জন্য, আপনাদের পরিবারের জন্য হলেও অন্তত থামুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানবাহন

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ