মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপ‚র্ণ অঞ্চল। সারা বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষের বসতি এখানে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই দক্ষিণ এশিয়া। এখানে সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ বসবাস করেন। চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো না হয়ে এ অঞ্চলে এখনও তুলনামূলকভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ন্য‚নতম। এই আটটি দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাকিস্তান ও ভারতে। মারা গেছেন ৭ জন। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এরই মধ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্র নেয়নি। এ অঞ্চলে দেশজুড়ে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। আঞ্চলিক ‘হেভিওয়েট’ ভারত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, তারা এক সপ্তাহের জন্য বাইরে থেকে আসা সব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করছে। প্রতি মাসে এমন সব ফ্লাইটে ভারতে আসা-যাওয়া করেন প্রায় ৫০ লাখ যাত্রী। ভারত সরকার বলছে, শনাক্ত করা হচ্ছে আক্রান্তদের। জনগণের মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার বন্ধের চেষ্টা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন দাবি সত্য নয় বলেই মনে হচ্ছে। এমন কথা বলার জন্যই খুব সামান্য টেস্ট করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা ভয় পাচ্ছেন যে, ভারত ও এর প্রতিবেশীরা বিশ্বের অন্য স্থানের মতো ভয়াবহতার মুখে পড়তে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই সংক্রমণ দ্রæত বিস্তার লাভ করেছে এবং সেখানকার হাসপাতালগুলো এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এরই মধ্যে গত এক সপ্তাহে এ অঞ্চলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ভাইরাস বিষয়ক সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ টি জ্যাকব জোন বলেন, প্রকৃত সত্যটা দেখা দেবে সামনের কয়েক দিন বা সপ্তাহে। তিনি মনে করছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ভারতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে বহুগুণে (এক্সপোনেনশিয়ালি)। তাই ভারত এক অপ্রত্যাশিত কঠিন সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব ভারতীয়কে ঘরের ভিতর অবস্থান করার আহŸান জানিয়েছেন। বিকল্প সার্জারি স্থগিত রাখার আহŸান জানিয়েছেন। রোববারে জনগণকে ১৪ ঘন্টার কারফিউ পালনের আহŸান জানিয়েছেন। একে তিনি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। করোনা সংক্রমণ ত্বরান্বিত হলে দক্ষিণ এশিয়া এক ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হবে। এখন পর্যন্ত মারাত্মকভাবে আক্রান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে, এ ভাইরাসের বিস্তার মোকাবিলায় সবচেয়ে কম প্রস্তুতি এ অঞ্চলের। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা এমনিতেই দুর্বল। এতে রয়েছে কম মাত্রার অর্থায়ন। সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা দুর্ভোগ। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। কারণ, তারা স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে বৈশ্বিক স‚চকে অনেকটা ভাল করেছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোÐঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডাটা অনুসারে ভারতে প্রতি ১০০০ মানুষের জন্য হাসপাতালে আছে ০.৫টি বেড। পক্ষান্তরে ইতালিতে আছে ৩.১টি বেড, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২টি বেড। বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া সা¤প্রতিক এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, যদি এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য সুবিধা সব রকম সমস্যায় পড়বে। আমাদের সক্ষমতা নেই। আমাদের কোনো রিসোর্স বা উৎস নেই। উদ্বেগের বিশেষ একটি উৎস হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। এখানে বসবাস করেন কমপক্ষে ২০ কোটি মানুষ। রয়েছে নাজুক ও দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। গত সপ্তাহে রোববার সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৮। কিন্তু বৃহস্পতিবার মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তা দশগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৬। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা স¤প্রতি ইরান থেকে ফিরেছেন। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের রয়েছে অভিন্ন সীমান্ত। গত সপ্তাহে সারা দেশে স্কুল, কলেজ বন্ধ করেছে পাকিস্তান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে গণজমায়েত। শ্রীলঙ্কায়ও নিশ্চিত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সপ্তাহান্তে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬। বৃহস্পতিবার তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩। মঙ্গলবার বাইরে থেকে যাওয়া সব রকম ফ্লাইটের অবতরণ নিষিদ্ধ করে শ্রীলঙ্কা। তবে যেসব পর্যটক শ্রীলঙ্কায় আছেন, তারা আগামী দুই সপ্তাহে আকাশপথে বেরিয়ে যেতে পারবেন। কেউ নতুন করে প্রবেশ করতে পারবেন না। দক্ষিণ-প‚র্ব এশিয়া বিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম খেত্রাপাল সিং বলেছেন, ভারত ও এর প্রতিবেশীদের জন্য এখনও ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তিনি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এবং হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে সব দেশের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি আবর্তিত হলে সেই অনুযায়ী তখন ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ভারত সরকার দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া ও মুক্ত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরকারকে কৃতিত্ব দেন কিছু বিশেষজ্ঞ। ভারত নিজেকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্ত। ভারতে নতুন করে যেতে চাওয়া প্রায় সব পর্যটকের ভিসাই বাতিল করেছে। এখন ভারতে আসা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে। বৃহস্পতিবার নাগাদ ভারতে নোভেল করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে ১২৪০০ জনের। সরকারি পরীক্ষাগার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিনামূল্যে এসব পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের হার নাগরিকদের প্রতি ১০ লাখের মধ্যে মাত্র ৯ জন। মোটামুটিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই হার ১১৪। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০০০। ভারতে এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে ১৭৩ জনের। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকার কিছু বিধিনিষেধ দিয়ে দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যাদের লক্ষণ দেখা দিয়েছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে অথবা আক্রান্ত এলাকা সফর করেছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এই পরীক্ষা করতে হবে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা লাভ আগরওয়াল বলেছেন, ব্যাপকহারে বা গণহারে যদি পরীক্ষা করা হয় তাতে অপ্রয়োজনীয় এক প্যানিক বা পীড়া সৃষ্টি হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, সারা দেশে যেসব মানুষের শ্বাসযন্ত্রের রোগ আছে তাদের নমুনাই পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওদিকে ভারতের অর্থনীতির রাজধানী হিসেবে পরিচিত মুম্বই থেকে তিন ঘন্টার পথ পুনে। ফুলে-ফেঁপে ওঠা এই মেট্রোপলিটনে বসবাস করেন কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষ। এমন সব স্থানের ওপর নির্ভর করবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ। এর একটি উপশহরে এরই মধ্যে ১১ জনের দেহে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। পুনেতে ৭ জনের দেহে পাওয়া গেছে। এরা সবাই বিদেশ সফরের সঙ্গে যুক্ত। পুনের উপশহর পিমপ্রি-চিনচাওয়াড়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০০ মানুষের ওপর নজরদারি রাখছে। তারা করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। ফলে সন্দেহজনকদের আইসোলেট বা জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি স্থাপনা প্রস্তুত করছিল কর্তৃপক্ষ। সেখানকার মিউনিসিপ্যাল কমিশনার শ্রাবণ হারদিকার বলেছেন, এই ভাইরাস যাতে না ছড়ায় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ যতœ বা দেখাশোনা করছি। সবাইকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।