পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
দীর্ঘ বিলম্বে হলেও অবশেষে প্রকাশিত ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত চিলকট রিপোর্ট বিশ্বময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে উত্থাপিত হচ্ছে এই যুদ্ধের কার্যকারণ এবং উদ্দেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন। ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায় ও আগ্রাসীমূলক এই যুদ্ধ ইরাকসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যে অশান্তি ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়, তার রেশ
বর্তমানে গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। আজকে যে আইএস সংকটকে দুনিয়াব্যাপী এক মহসংকট হিসাবে দেখা
হচ্ছে তাও ইঙ্গ-মার্কিন অপশক্তির সেই আগ্রাসী যুদ্ধেরই ফল। চিলকট রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে জনরোষ ধুমায়িত হচ্ছে। লেবার পার্টি থেকে তার বহিষ্কার
দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযানও শুরু হয়েছে। এমনকি ওই অন্যায় ও আগ্রাসী যুদ্ধের মূল হোতা বুশ-ব্লেয়ারের
বিচারের দাবিও ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠছে। ২৬ লাখ শব্দের ওই প্রতিবেদনে ইরাক যুদ্ধ-সংক্রান্ত তদন্ত
কমিশনের প্রধান জন চিলকট ব্রিটেনের ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে
বিতর্কিত সেনা সম্পৃক্ততা বলে মন্তব্য করেছেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যের সারাংশ হিসেবে তিনি
বলেন, ইরাক যুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি ভুল ছিল, যার ফল
বিশ্ববাসীকে আজো ভোগ করতে হচ্ছে।
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ইনকিলাব ডেস্ক : ২০০৩ সালের মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক আগ্রাসনে ব্রিটেনের জড়িত হওয়ার ব্যাপারে বহু বিলম্বিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে ওই আগ্রাসনে অংশগ্রহণ করার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনের সবচেয়ে বিতর্কিত ওই সামরিক ভূমিকার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ২০০৯ সালে ‘চিলকট ইনকোয়ারি’ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। গত বুধবার ৬,০০০ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে ওই আগ্রাসনে জড়িত হওয়ার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার সামরিক আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তি আছে বলে যে দাবি করেছিল তা ‘মোটেই সন্তোষজনক’ ছিল না। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইরাকের সাবেক একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের পক্ষ থেকে ২০০৩ সালে এমন কোনো হুমকি সৃষ্টি হয়নি যাতে দেশটিতে আগ্রাসন চালানো যায়। অথচ ব্লেয়ার ওই আগ্রাসনের আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেছিলেন, সাদ্দামের কাছে পরমাণু, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র রয়েছে যা ধ্বংস না করলে বিশ্বে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার ইরাকের কথিত গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। অথচ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই নিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল এবং ওই তথ্য কখনোই যাচাই করে দেখা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘শেষ উপায়’ হিসেবে ইরাক আগ্রাসনে জড়ায়নি ব্রিটেন। তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান জন চিলকট বলেছেন, ওই আগ্রাসন ছিল মারাত্মক ভুল যার ফল আমরা আজও দেখতে পাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, যে কোনো যুদ্ধে জড়ানোর আগে বিষয়টি ভালো করে হিসাব-নিকাষ এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এরপর কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু ইরাক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার এর কোনোটিই করেনি। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ইরাক আগ্রাসনে সে সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ইরাক দখল করে ইঙ্গোমার্কিন বাহিনী। এরপর দেশটির আবু-গারিব কারাগারে বন্দিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায় দখলদার সেনারা। দেশটির বিভিন্ন শহরে তারা ধর্ষণ ও গণহত্যাসহ নানা অপকর্মের জন্ম দেয়। এর ফলে ক্ষুব্ধ ইরাকি জনগোষ্ঠী দখলদার সেনাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। পাশাপাশি তৈরি হয় উগ্র কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী। পরবর্তীতে ইঙ্গো-মার্কিন সেনারা ইরাক থেকে চলে গেলেও বর্তমানে দেশটির সরকারকে এসব জঙ্গি গোষ্ঠীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, ডেইলি মেইল, মিরর, দি গার্ডিয়ান। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।