মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সঙ্গনিরোধ কার্যক্রম এবং সংক্রমিত এলাকাগুলি অবরুদ্ধ করে রাখার কারণে চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে চীনে অর্থনৈতিক উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতিগুলির মধ্যে অন্যতম চীনের জন্য এটি চার দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম অর্থনৈতিক সংকোচন। যদিও মন্দার পরিধি এবং সময়কাল বেশ কয়েক মাস ধরে জানা যাবে না, তবে এটা ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী দেশকে একটি প্রধান বৈশ্বিক শক্তি হিসাবে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য নেতা হিসাবে তার ক্ষমতা আরও দৃঢ় করতে এই সঙ্কটটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন। খবর : সিএনএন।
ইউরেশিয়া গ্রুপের চীন বিশ্লেষক অ্যান্ড্ু কোফ্লান এক গবেষণায় বলেছেন যে, করোনার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে শি›র প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি আশ্চর্যজনক বলে মনে হতে পারে। বেইজিং ভাইরাসটির অস্তিত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হওয়ার মাত্র কয়েক দিন পরেই তিনি এক সপ্তাহরেও বেশি সময়ের জন্য অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। তার এই উদাসীনতা সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা ও সমালোচনার জন্ম দেয় যা শি›র ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রদান ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ কার্যকরী শাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে তার বৈধতার কথা বলে দীর্ঘকাল ধরে দেশ শাসন করে আসছিল।
তাহলে কেন শি এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে প্রস্তুত হয়েছেন? প্রথমত, স্টেট ওউন্ড এন্টাপ্রাইজ-এসওইগুলি মহামারী পরবর্তী প্রণোদনা কার্যক্রমের মূল বাহকে পরিণত হবে। প্রেসিডেন্ট শি ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃস্টি করে এসওইগুলির নবজাগরণের তত্ত্বাবধান করায় চীন অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিকে সংযুক্ত করে রেল, পারমাণবিক ও নবায়নযোগ্য শক্তি এবং নির্মান উপকরণ সহ মূল খাতগুলিতে জাতীয় আদর্শ তৈরি করেছে। এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলিতে সীমাবদ্ধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপশি এসওইগুলি আরও বৃহত্তর জাতীয় ভূমিকা নেবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাঙ্কগুলির সাথে সংযোগ থাকায় তারা সম্ভবত প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পেতে যাচ্ছে। এবং বেইজিং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আরও অবকাঠামোগত বিনিয়োগের দিকে জোর দিচ্ছে যেখানে এসওইগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এদিকে, লকডাউনের কারণে সারা দেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চীনের স্থানীয়ভাবে মালিকানাধীন দোকান এবং রেস্তোঁরাগুলি নামকাওয়াস্তে মুনাফা অর্জন এবং পুনরায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু করতে বৃহত্তর অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার কারণে দেউলিয়া হওয়ার পথে। এতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিতে অস্বাভাবিক প্রভাব পড়েছে। এরফলে বেইজিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং শি এর নীতিগত অগ্রাধিকারগুলি বাস্তবায়নে নিয়োজিত এসওইগুলির অর্থনৈতিক ব্যয়ভারে আরও একটি পরিবর্তন যোগ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করার পাশাপাশি কর্মকর্তারা জাতীয়তাবাদী অনুভ‚তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে সামাজিক চাপ হ্রাস করার চেষ্টা করবেন। শি একদিকে, করোনার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাবধানতাকে ‘পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’র ত্রুটিগুলির অন্যতম চিহ্ন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং অপরদিকে, এই মহামারীকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সংকুচিত অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণ হিসেবে তুলে ধরবেন। শি’র এই বার্তা স্বাস্থ্য সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে সামাজিক উদ্বেগের অনুভূতিটিকে একটি সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সচেতন সেবা প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকার গর্বিত অনুভূতিতে পরিণত করার রাস্তা করে দেবে বেইজিংকে, যেখানে তিনি বিশাল ক্ষমতা শীর্ষে রয়েছেন।
তৃতীয়ত, দলের নেতিবাচক সাড়া সত্তে¡ও শি নিজেকে এবং অন্যান্য উচ্চবিত্তদেরকে ছাড়িয়ে করোনা মহামারী সম্পর্কে নিচু স্তরের কর্মকর্তাদের বহুল চর্চিত অসন্তোষকে ঝেড়ে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছেন। বেইজিং সিস্টেমের অন্য ক্ষেত্রতে দোষ চাপিয়ে দিয়ে মহামারীর প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে সংঘটিত ভুলগুলিকে উদঘাটনের জন্য পরিদর্শকদের প্রেরণ করেছে।
এতে করে, করোনার মোকাবেলায় ব্যর্থতার প্রারম্ভিক প্রতিক্রিয়া এবং শি’র নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলিতে আসা প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শক্তির পার্থক্যটি করোনা সম্পর্কে যারা কথা বলেছিলেন তাদের যে কোনও ব্যক্তিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য তার রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে কাজ করবে। মিশ্র বার্তাপ্রেরণের মাধ্যমেও শি উৎরে যাবেন। তিনি একই সাথে মহামারী এবং কাজকে সমান অগ্রাধিকারে রেখে পুনরায় কাজ করার উপর জোর দিয়েছেন। এভাবে তিনি নতুন করে মহামারী ছড়ানো বা চলমান অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে সমালোচনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন।
কোফ্লান বলেন, করোনা মোকাবেলা করে টিকে থাকার সাফল্য মারমুখি কোরেন্টাইন প্রচেষ্টাকে শি›র পক্ষে ন্যায়সঙ্গত করেছে। তবে আরও বিশদভাবে বল্লে, এই সঙ্গনিরোধ প্রক্রিয়া এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার নজির সৃস্টি করেছে যা একই সাথে নি¤œস্তরের কর্মচারীদের উপর একটি অবারিত ক্ষমতার নেতৃত্ব, রাজনৈতিক প্রচারণার অনুষঙ্গ এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতার চাবিকাঠি এনে দিয়েছে।
চীন যেহেতু সপ্তাহব্যাপী শাটডাউন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে, শি এই সাফল্যটি অর্থনীতি, জাতীয় সংলাপ এবং ািনচুস্তরের কর্মকর্তাদের উপর দলের ক্ষমতাকে প্রসারিত করার কাজে ব্যবহার করবেন। করোনা মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হোঁচট খাওয়ায় প্রেসিডেন্ট শি’র পদক্ষেপগুলো সমর্থন পাবে এবং এই মহামারীর কারণে সৃষ্ট চীনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতা সত্তে¡ও তিনি সম্ভবত আরও শক্তিশালী অবস্থানে উন্নীত হবেন। স‚ত্র : সিএনএন।
করোনা মোকাবেলায় আত্মবিশ্বাসী চীন
করোনা মহামারিতে বেড়েই চলেছে মৃত্যুমিছিল। সারা বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪১৫ জনে। ভেঙে পড়েছে বিশ্বব্যপী অর্থনৈতিক কাঠামো। তৈরি হয়েছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। বন্ধ কলকারখানা। অবরুদ্ধ জনজীবন। তবে যেখান থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু সেই চীন এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে অনেকটাই।
চীনের বিজ্ঞানী ও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, এই রোগটি মৌসুমী। ফলে এই বছরের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও আগামী বছর এর মারাত্মক ‘দ্বিতীয় তরঙ্গ’ আঘাত হানতে পারে। তবে তারা আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন যে, আবারও সংক্রমণ হলে চীনের কঠোর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি পুরো নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা সম্ভব হবে। যদিও তারা বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে নতুন করে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক রয়েছেন, তারা বলছেন, ‘যেভাবে সরকার স্ক্রিনিং ও কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে ২০০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স) নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল, একইভাবে কোভিড-১৯ নির্মূল করতেও সক্ষম হবে।’
এ বিষয়ে সোমবার পিকিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের উপ-পরিচালক কাও ওয়েই বলেন, ‘আমার মনে হয়, চীনে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাব বড় উদ্বেগের বিষয় হবে না।’ তিনি জানান, চীনে চ‚ড়ান্ত রায় দেয়ার জন্য আরও এক মাস সময়ের প্রয়োজন ছিল, তবে বিদ্যমান প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলো স্থানীয়ভাবে মহামারীটির অবসান ঘটাতে যথেষ্ট হবে।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকুলার বায়োসায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইয়ান হেন্ডারসন বলেছেন, ‘ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধ করার জন্য চীনের পদক্ষেপগুলো ‘অসাধারণ’ ছিল। তবে সেখানে এবার দ্বিতীয়বারের মতো প্রাদুর্ভাব হতে পারে, এবার বাইরে থেকে সেখানে এই ভাইরাস ঢুকতে পারে।’
চীনের সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, গত দু’দিন ধরে সেদেশে নতুন করে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। ফলে শোকের আবহেও আশার আলো দেখছে শি জিনপিংয়ের দেশ। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে এই নিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৪৮ জনের। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে যে, বৃহস্পতিবার সেদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনও নতুন খবর পাওয়া যায়নি। গত তিন মাসে কোভিড-১৯ এর বিস্তার রুখতে সবরকমের চেষ্টা করে চলেছে চিনের প্রশাসন। প্রথম দিকে কোনও লাভ না হলেও এখন দেখা যাচ্ছে আস্তে আস্তে করোনার বিস্তার রোখার চেষ্টায় সফল হচ্ছে তারা। তবে গতকাল চীেেনর জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন একথাও জানিয়েছে যে, বৃহস্পতিবার সেদেশে আরও ৩৯ টি নতুন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে, তবে ওই রোগীরা সবাই বিদেশ থেকে সেদেশে এসেছে বলে খবর। সূত্র : রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।