Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চিকিৎসকের অবহেলায় হাসপাতাল নয় সড়কে সন্তান প্রসব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২০, ১১:১০ এএম

চিকিৎসকের অবহেলায় হাসপাতাল নয় সড়কে সন্তান প্রসব করেছেন এক অসহায় মা। জানা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করার আধা ঘণ্টার মাথায় সড়কে সন্তান প্রসব করেন রাজিয়া খাতুন (২২) নামে এক মা।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ডের ফুটওভার ব্রিজের নিচে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সামাদ ভালুকা শেফার্ড মিলে ফল্ডিং পদে চাকরি করেন। তিনি পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ওয়াবদা এলাকার মঞ্জিলা খাতুনের বাসায় ভাড়া থাকেন।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবদুস সামাদের স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের প্রসবব্যথা উঠলে তাকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

রাজিয়াকে দেখে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমিত কুমার রায় রোগীকে আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য খোদেজা হালিম হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান।
এ সময় কর্তব্যরত নার্স শামীমা খাতুন ওই ক্লিনিকে ফোন করে বলেন, আলট্রাসনোগ্রামের জন্য রোগী পাঠাচ্ছি। ওই নার্স রাজিয়ার সঙ্গে এক নারীকেও পাঠিয়ে দেন।

ক্লিনিক থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করে রাজিয়াকে নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে গেলে নার্স শামীমা আলট্রাসনোগ্রাম দেখে রোগীর স্বামীকে বলেন, তাকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আবদুস সামাদ কোনো উপায় না দেখে রিকশায় রাজিয়াকে নিয়ে ভালুকা বাসস্ট্যান্ডে তার স্ত্রী ও শাশুড়ি মোমেনা আক্তারকে দাঁড় করিয়ে গাড়ির জন্য যান। এ সময় রাজিয়ার প্রচণ্ড প্রসবব্যথা ওঠে। এ সময় ক্রাউন ওয়্যারস প্রা. লিমিটেডের নারী শ্রমিকরা এগিয়ে আসেন।

এ অবস্থা দেখে ১০-১২ শ্রমিক চারপাশ থেকে প্রসূতিকে ঘিরে ফেলেন। এ সময় শ্রমিক সুমার সহযোগিতায় রাজিয়া দ্বিতীয়বারের মতো ছেলেসন্তান প্রসব করেন।

রাজিয়ার রক্তক্ষণ শুরু হলে তাকে উদ্ধার করে আবারও ভালুকা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর প্রসূতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে মা ও ছেলে ভালোই আছেন এবং শঙ্কামুক্ত।

রাস্তায় সন্তান প্রসব হওয়ার খবর পেয়ে ভালুকা মডেল থানার পুলিশ ও ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।

খোদেজা হালিম হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে রাজিয়ার বর্তমানে ৩৪ সপ্তাহ ৫ দিন চলছে। বাচ্চা হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছে ২৪.০৪.২০২০ইং এর এক সপ্তাহে আগে অথবা পরে। আলট্রাসনোগ্রাম করেন ডা. মো. এম রহমান। আবদুস সামাদ জানান, আমার স্ত্রীর প্রসবব্যথা ওঠার পর হাসপাতালে নিয়ে এলে খোদেজা হালিম হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে আবার হাসপাতালে যাই। এ সময় রিপোর্ট দেখে আমার স্ত্রীকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বাসস্ট্যান্ডের ফুটওভার ব্রিজের নিচে আমার স্ত্রী ও শাশুড়িকে দাঁড় করিয়ে গাড়ি খুঁজতে গেলে রাস্তার মাঝেই ছেলেসন্তান প্রসব হয়।

নার্স শামীমা আক্তার জানান, আমি আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট দেখে রোগীকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছি। এটি আমার ভুল হয়েছে।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমিত কুমার রায় জানান, আমি রোগীকে ময়মনসিংহ স্থানান্তর করিনি। প্রশ্ন করা হয় তা হলে রোগীর স্বামী কী অঙ্গীকার নামা দিয়ে এ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছেন? উত্তরে তিনি জানান, সেটি আমি জানি না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন জানান, আমি খবর নিয়ে দেখলাম, হ্যাঁ হাসপাতালের বাইরে একটি বাচ্চা হয়েছে। এখন মা ও নবজাতক ভালোই আছেন।



 

Show all comments
  • jack ali ১৯ মার্চ, ২০২০, ১১:২৫ এএম says : 0
    These people must be punished....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপচিকিৎসা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১২ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ