Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

জাতি মহাড়ম্বরে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। এ উপলক্ষে জাতীয়ভাবে এবং সারাদেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ও স্থানীয়ভাবে মুজিববর্ষ উৎযাপন করছে। এ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও বাড়াবাড়ি ও অপচয়েরও অভিযোগও উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে মুজিববর্ষ পালনের অজুহাতে চাঁদাবাজি ও বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালা কাঁটছাট ও সীমিত করা হলেও কোথাও কোথাও অনাকাক্সিক্ষত বাড়াবাড়ি চোখে পড়ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর পক্ষ থেকে জনহিতকর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ঘোষিত হচ্ছে। তবে আজকের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শকে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা। তার জন্মদিন নিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখা গেলেও স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে, একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসেবে এবং উদারনৈতিক শাসক হিসেবে তার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে না। তারা একদিকে দলীয় সভা সমাবেশে জনসমাগম ও আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে, সেইসাথে তাদের অনেকেই চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পেশিশক্তির আস্ফালন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে দুর্নীতি, ক্যাসিনো, রংমহল ও কালোটাকার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। গত বছরের শেষার্ধ থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এদের বাড়ি-অফিস তল্লাশি করে কোটি কোটি টাকা ও সোনা-জহরতের ভান্ডার, মাদক, অস্ত্র, জুয়ার সামগ্রী, টর্চারসেল ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দেখে পুরো জাতি বিস্মিত। সম্প্রতি নরসিংদী জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগ নেত্রীর র্কীতিকলাপের যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তাতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও আদর্শবান নেতারা লজ্জিত ও বিব্রত। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের পদপদবি ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করে বেড়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর মনোভাব স্পষ্ট হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পিতার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করলেও দলের সব নেতাকর্মী তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এক শ্রেণির নেতাকর্মী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দখলবাজি, লুটপাট ও অপরাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের বহিষ্কারসহ আইনী পদক্ষেপ নিতেও প্রধানমন্ত্রী কুণ্ঠিত হননি। তবে প্রশাসনে পেশাদারিত্বের অভাব এবং নানা ক্ষেত্রে আইনগত নিরপেক্ষতার বদলে দলবাজির কারণে তৃণমূল পর্যায়ে পরিবর্তন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুজিববর্ষের কর্মসূচি হিসেবে এসব বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন বটে, তবে তিনি রাজনীতিকে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর লেখা ডায়রি ও অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ছত্রে ছত্রে সে আদর্শের নমুনা দেখতে পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতারা জাতির পিতার এই মনোভাব ও আদর্শ সম্পর্কে কতটা অবগত ও আন্তরিক তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, বেশিরভাগ নেতাকর্মীই তাঁর সুমহান চেতনা ও রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করছেন না। অখন্ড ভারতে মুসলমানদের বিপদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু যথাসময়ে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এরপর বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং স্বাধীনতা চিরস্থায়ী করার জন্য তিনি আজীবন সাধনা ও সংগ্রাম করে গিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘অখন্ড ভারতে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না’। বর্তমান ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ ও শাসকদের মুসলিম বিরোধী ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর সেই আশঙ্কাকেই সত্য বলে প্রমাণ করছে। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে রাজনৈতিক পদপদবি ব্যবহার করে গড়ে ওঠা চোর ও চাটার দলের বিরুদ্ধেও তিনি আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন। কতিপয় ছদ্মবেশী অনুসারী ও পদলেহির যোগসাজশেই ১৫ আগস্টের মমার্ন্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এসব ভুলে যাননি। তিনি সচেতন রয়েছেন। মুজিববর্ষের আয়োজন ও অঙ্গীকারে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন কঠোর হাতে দমন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শুদ্ধাচারের রাজনীতির পথ উন্মোচিত হবে, এটাই হোক সকলের প্রত্যাশা ও সংকল্প।



 

Show all comments
  • নূরুল্লাহ ১৮ মার্চ, ২০২০, ৩:২১ পিএম says : 0
    সত্য উচ্চারণে অধম্য সাহস।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুজিববর্ষ

২০ এপ্রিল, ২০২১
১৭ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন