Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনে করোনা আক্রান্তদের সেবায় রোবট ডাক্তার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি উহানের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় রোবট নিয়োগ করা হয়েছে। অসংখ্য রোগীকে একটানা চিকিৎসা সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত মানব ডাক্তার-নার্সদের বিশ্রাম দেয়ার লক্ষ্যেই এই রোবট নিয়োগ করা হয়।

মানুষের থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এয়ার ড্রপলেটের মাধ্যমেই একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আক্রান্ত রোগীদের ধারেকাছেও যাওয়াও তাই বিপজ্জনক। চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন রোগে। করোনার সাঁড়াশি চাপ থেকে রেহাই পেতে তাই অভিনব উপায় বার করল উহানের স্বাস্থ্য দফতর এবং চিনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নামানো হল প্রশিক্ষণ দেয়া রোবটের দল।

শনিবার থেকেই উহানের বিভিন্ন হাসপাতালে জোরকদমে কাজে নেমে পড়েছে ডাক্তার-রোবটরা। কীভাবে রোগীদের আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে, সেখানে কী কী করণীয়, কেমন ভাবেই বা হবে চিকিৎসা, সব শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই রোবটদের। সংক্রমণ কতটা হলে কী ওষুধ দিতে হবে সেটাও ভরে দেয়া হয়েছে রোবটদের ডেটা সিস্টেমে। ৫-জি পাওয়ারের রোবট। এ টু জেড সব কাজ করতে পারে। ডাক্তারি তো বটেই। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও তাদের। যান্ত্রিক হাত বাড়িয়ে রোগীদের নির্দ্ধিতায় ছুঁচ্ছে এই রোবটরা। শরীরের তাপমাত্রা মাপছে, ওষুধও দিচ্ছে। সময় হলেই খাবারের থালা সাজিয়ে রোগীদের সামনে হাজির করছে ডাক্তার-রোবটরা। রোগীদের জামাকাপড় কাচা, তাদের পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও এদেরই ওপরে।

দিনের পর দিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীদের একঘেয়েমি কাটাতে হাল্কা নাচ-গানও করছে তারা। চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোবট মানুষের মতোই কথা বলতে পারে। মুখের অভিব্যক্তিও আছে। রোগীরা ওষুধ না খেলে বকাঝকাও করছে।

ডাক্তার-রোবটের প্রজেক্ট প্রথম শুরু হয় চিনের উচাং হাসপাতালে। এখন হুবেই প্রদেশের প্রায় সব হাসপাতালেই এই রোবটদের আমদানি শুরু হয়ে গেছে। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, হাসপাতালের ওয়ার্ড স্যানিটাইজ করার কাজও করছে এই রোবটরা। গত ৭ মার্চ সংক্রমণ সন্দেহে উহানে ২০০ জনকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। ১০টি হাসপাতালে নতুন করে তৈরি হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। তাছাড়া উহানের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই ঠাসাঠাসি ভিড়। প্রতিদিন গাদা গাদা বর্জ্য জমা হচ্ছে যা হাসপাতালের কর্মী ও ডাক্তারদের জন্যও বিপজ্জনক। এইসব আগে সাফাইয়ের দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল কর্মীদের উপরেই। সেটা করতে গিয়েই অনেকে ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছিলেন। উহানে এখনও পর্যন্ত হাজার দুয়েক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত। চীনের মূল ভূখন্ডে করোনা সংক্রামিতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার হাজার। উহানেই আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার।

সম্প্রতি আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেছেন উহানের বেশ কিছু হাসপাতালের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, রোগীদের সঙ্গেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দি করে রাখা হত তাদের। খাবার দেয়া হত না, শৌচাগারে যাওয়াও বারণ ছিল। অভিযোগ ছিল, বার্থ কন্ট্রোল পিল খাইয়ে অধিকাংশ মহিলার ঋতুস্রাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পিরিয়ডস শুরু হলেও দেওয়া হত না স্যানিটারি ন্যাপকিন। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনেক মহিলা কর্মীই।

চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীদের কাছে যাওয়াটা প্রাণঘাতী। সারাদিনই রোগীদের সংস্পর্শে থাকতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্মীদের। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতেই এই রোবটদের কাজে লাগানো হয়েছে। আর রোগীরাও এমন রোবট-বন্ধুদের পেয়ে নাকি বেশ খুশি। মন খারাপ হলেই নেচে দেখাচ্ছে রোবটরা। ওষুধও খাওয়াচ্ছে যত্ম করেই। সূত্র : সি-নেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ