Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আধিপত্য লড়াইয়ে সিলেট জাপার নেতৃত্ব বেসামাল

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ৭:০২ পিএম

কঠিন সংকটে এখন সিলেট জাতীয় পাটি নেতৃত্ব। একসময়ে জাপার দুর্গ সিলেট হলেও এখন সমর্থন তলানীতে। তবে নেতৃত্ব কেন্দ্রিক জটিলতায় তছনছ অবস্থায় জাপা। মতানৈক্য ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে জাপার ভবিষ্যত এখন ঘোর অন্ধকারে। এতে করে এক পক্ষ সম্মেলনের দায়িত্ব গ্রহণ করায় ক্ষেপেছে অপর পক্ষ। কেউ ঘোষণা দিচ্ছেন সম্মেলন ও নতুন কমিটির, অপরপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে প্রতিহতে সরব। পাল্টা জবাবে ‘তৃণমূলের’ ব্যানারে সামনে আসছেন তো আরেক পক্ষ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। রাজনীতির অবস্থান বিবেচনায় জাপা রাজনীতি কেবল সিলেটে নেতৃত্ব নির্ভর। তার উপর নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে জাপা এখন রূপলাভ করছে অগ্নিগর্ভে ।

জাপা রাজনীতি সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটির অনুমোদন দেন দায়িত্ব। ওই কমিটিতে আহবায়ক ছিলেন এটিইউ তাজ রহমান ও সদস্য সচিব ছিলেন উছমান আলী। প্রায় তিন বছরেও করতে পারেনি সম্মেলন সেই কমিটি । গেল ১৭ ফেব্রুয়ারি তাজ রহমানকে আহবায়ক আর উছমান আলীকে সদস্য সচিব করে জেলা জাতীয় পার্টিতে ১৩ সদস্যের নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি দেয় কেন্দ্র। আহবায়ক হিসেবে এটিইউ তাজ রহমান, সদস্য সচিব উছমান আলী, সদস্য আবদুল­াহ সিদ্দিকী, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, সাইফুদ্দিন খালেদ, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মালিক খান, এডভোকেট আবদুর রহমান, আলতাফুর রহমান আলতাফ, আবদুস শহীদ লস্কর বশির, দৌলা মিয়া ও আহসান হাবীব মঈন সম্মেলন প্রস্তুতিতে কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত হন। তাজ রহমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব (সিলেট বিভাগ)। উছমান আলী দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। অন্যরা বিভিন্ন পদে আছেন। ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে এর বিরোধীতা করে জেলা জাতীয় পার্টির একটি অংশ। তারা দাবি করেন, তিন বছরেও সম্মেলন করতে পারেননি তাজ রহমান ও উছমান আলী । তাদের দিয়ে ্র সম্মেলন হবে না জেলা জাতীয় পাটির। বিরোধী পক্ষটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির ‘তৃণমূল’ হিসেবে নিজেদের দাবি একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। ৯১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির আহবায়ক হিসেবে ইশরাকুল হক শামীম আর আহসান হাবীব মঈনকে সদস্য সচিব হিসেবে ঘোষনা করা হয়। আহসান হাবীব মঈন আবার কেন্দ্র ঘোষিত ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য। তারপরও ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন তিনি। এই বিরোধী পক্ষটিকে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি জহির উদ্দিন পল্টু এবং জাপা নেতা বাশির আহমদ নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, জেলা জাতীয় পার্টির ‘তৃণমূল’ দাবিদার আহবায়ক কমিটির নেতারা দলের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাথেও দেখা করেছেন। তবে কাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। এদিকে, গত সোমবার (৯ মার্চ) এই পক্ষটি সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্র ঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে যে লিখিত বক্তব্য সরবরাহ করা হয়, সেটিতে স্বাক্ষর করেন ইশরাকুল হক শামীম, আহসান হাবীব মঈন, মুজিবুর রহমান মুজিব, নাহিদা আক্তার ও মামুনুর রশীদ মামুন। তারা বলেন, এটিইউ তাজ রহমান ও উছমান আলীর নেতৃত্বাধীন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি যা করছে, তা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। এ কমিটি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দায়ী থাকবেন তাজ ও উছমান। এদিকে, কেন্দ্র ঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কাল বুধবার (১১ মার্চ) পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে। এ সংবাদ সম্মেলন থেকে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টিতে ‘বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের’ বিরুদ্ধে যথা শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে আগামী শনিবার জেলা জাতীয় পার্টির যে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত বলেও জানানো হয়। জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব (সিলেট বিভাগ) ও জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এটিইউ তাজ রহমান দাবি করেন, তৃণমূল জাতীয় পার্টি দাবিদার ব্যক্তিরা দল থেকে বহিষ্কার হয় ২০১১ সালে । তাদের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। দলের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এসব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে জাতীয় পাটির তৃণমুল ব্যানরে গঠিত কমিটির আহবায়ক ইশরাকুল হক শামীম বলেন, ২০১৭ ও ২০২০ইং পরপর দুইটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত পেয়ে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হন তাজ ও উছমান আলী। ২০১১৭ সালের সম্মেলন কমিটি না ভেঙ্গে পুনরায় নতুন কমিটি ঘোষনার মধ্যে দিয়ে তারা নিজদের রাজনীতি জ্ঞানকে কলংকিত করেছেন। তাজ বির্তকিতভাবে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে অবস্থান করে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের মতো জাপার রাজনীতিকেও ইমেজ সংকটে ফেলছেন। এছাড়া তাজ ্ও উছমান আলী তৃণমুল নেতাকর্মীদেও বহিস্কৃত মর্মে বক্তব্য প্রদান করে রাজনীতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় প্রকাশ করেছেন। দলীয় পদের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সর্ম্পকে অজ্ঞতা থাকায় এরকম বক্তব্য দিয়েছেন, কেননা তাদের ঘোষিত কমিটিতে আহসান হাবীব মঈনের নাম রয়েছে, মঈন বহিস্কৃত হলে এই নাম তারা কিভাবে সম্মেলন কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করলেন এটাই প্রশ্ন। তিনি বলেন, সদস্য সচিব উছমান আল্ওী দলত্যাগী, বহিস্কৃত ছিলেন, এখন নিজের অতীত ভূলে গেছেন তিনি। যারা অতীত ভূলে যায়, রাজনীতিক দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ তারা রাজনীতিক নেতৃত্বের উপযোগী হ্ওয়ার সুযোগ নেই।

 



 

Show all comments
  • ইশরাকুল হোসেন শামীম ১৩ মার্চ, ২০২০, ১১:৪৪ পিএম says : 0
    ছোট খাটো দুই একটি ভুল ছাড়া নিউজটি খুব সুন্দর তথ্যভিত্তিক সত্য প্রকাশ পেয়ে ধন্যবাদ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা ও ফয়ছল অামিন ভাই সহ সকল কে
    Total Reply(0) Reply
  • ইশরাকুল হোসেন শামীম ১৩ মার্চ, ২০২০, ১১:৪৫ পিএম says : 0
    ছোট খাটো দুই একটি ভুল ছাড়া নিউজটি খুব সুন্দর তথ্যভিত্তিক সত্য প্রকাশ পেয়ে ধন্যবাদ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা ও ফয়ছল অামিন ভাই সহ সকল কে
    Total Reply(0) Reply
  • আতিক রহমান ২৮ মার্চ, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
    তৃনমুল বলতে কোন সংগঠন নাই সব বহিস্কার যাহা এসব বলে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপা

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ