Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

রাজশাহীতে ভারতীয় নাগরিকের পাসপোর্ট, মামলা দায়ের

পাসপোর্ট পেয়ে ভারতীয় হাফেজ আহম্মেদ পাড়ি জমিয়েছেন সউদী আরবে

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের মানুষ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে দিনের পর দিন হয়রান হলেও সহজে মেলেনা তাদের পাসপোর্ট। অথচ ভারতীয় এক নাগরিক রাজশাহী ভিসা ও পাসপোর্ট অফিসে নিজের পাসপোর্ট করিয়েছেন। তারপর পাসপোর্ট অফিস থেকে তার সমস্ত নথিপত্র গায়েব করে দেয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়েছে। অবৈধ এ কাজের সঙ্গে ৭ জনের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে তদন্তে। এদের মধ্যে দুই কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। তবে তার আগেই হাফেজ আহম্মেদ (৪৯) নামের ওই ভারতীয় সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ৮ জনের নামে মামলা হয়েছে। এর আগে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলার অনুমোদন দেয়। পরদিন প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী সংস্থার সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে হাফেজ আহম্মেদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ হোসেন। মা জয়নব বেগম। মামলার এজাহারে তাকে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের ঠিকানায় হাফেজকে পাসপোর্ট দেয়া হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের তৎকালিন সহকারি পরিচালক আবজাউল আলম, উচ্চমান সহকারি দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাস উদ্দিন, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল ওয়াদুদ, অফিস সহায়ক হুমায়ন কবির, এমএলএসএস রঞ্জু লাল সরকার এবং দফতরি ইব্রাহিম হোসেন।

এদের মধ্যে আবজাউল আলম বর্তমানে যাত্রাবাড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক। দেলোয়ার আগারগাঁও অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। আর আলমাস উদ্দিন জয়পুরহাট, আব্দুল ওয়াদুদ রাজশাহী ও ইব্রাহিম গোপালগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত। আর হুমায়ুন ও রঞ্জু সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৬ জুন হাফেজ আহম্মেদ রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ব্যাংক ড্রাফট না থাকলেও পরদিন এমএলএসএস রঞ্জু লাল সরকার আবেদন গ্রহণ করে নিজের হেফাজতে রাখেন। সেদিনই গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে এ পাসপোর্ট করে দেয়ার ব্যাপারে তার অবৈধ লেনদেনের চুক্তি হয়।

পরে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে রঞ্জু নিজেই ভারতীয় হাফেজের জন্ম সনদ তৈরি করেন এবং ১৩ জুন তিনি ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করেন। পরে রঞ্জু আবেদনটি দেলোয়ারকে দেন। দেলোয়ার ৩১ জুলাই পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠান। পরবর্তীতে পুলিশের প্রতিবেদনে হাফেজকে ভারতীয় নাগরিক উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু এ প্রতিবেদন কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট করেননি অফিস সহকারি হুমায়ুন কবীর। তাই ১৬ আগস্ট আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহিত হয়ে যায়। ৩০ আগস্ট সহকারি পরিচালক আবজাউল আলম অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাসের মাধ্যমে হাফেজের আবেদনপত্রে বাড়ি নম্বর পরিবর্তণ করে চূড়ান্তভাবে আবেদনপত্র গ্রহণ করেন। শুরু হয় পাসপোর্ট তৈরি কার্যক্রম।

৭ সেপ্টেম্বর রেকর্ডকীপার ইব্রাহিমের ইউজার আইডি থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি করা হয়। রঞ্জু লাল সরকার নিজেই পাসপোর্ট গ্রহণ করে হাফেজ আহম্মেদকে দেন। এরপর ভিসা নিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি হাফেজ সৌদি আরব চলে যান। পরে তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন কি না এ রকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুদক জানিয়েছে, মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে পুলিশি প্রতিবেদন গোপন করে অবৈধভাবে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে। পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যাবার পর হাফেজের সমস্ত রেকর্ডপত্র গায়েব করে দেয়া হয়। তবে বিষয়টি ধরা পড়লে পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর তদন্ত করেছে।

অধিদফতরের উপপরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন ও ডাটা সেন্টারের অ্যাসিসটেন্ট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি এ ঘটনার জন্য পাসপোর্ট অফিসের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারিকে দায়ী করেছেন। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দু’জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে প্রথমে দুদক অনুসন্ধান করে। এ সময় প্রাথমিকভাবে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। তারপর কমিশন মামলা অনুমোদন করে। এরপরই মামলাটি হলো। এখন আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। আর তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র প্রস্তুত করবেন। এ পাসপোর্ট ইস্যুর সঙ্গে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ