Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

‘ভারতের পানি আগ্রাসন ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে’

জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতের পানি আগ্রাসন ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। ‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের নতজানু মানসিকতার কারণে ভারত মাথার উপর বসেছে। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে গড়িমসি করছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করলে সরকার দিল্লির প্রতি নতজানু মানসিকতা পরিহার করবে; দিল্লি বাংলাদেশের ন্যায্য পানি দিতে বাধ্য হবে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সৈয়দ ওয়ালিউল্লা তাঁর তিনটি উপন্যাস লাল সাবুজ, চাঁদের সমস্যা, কাঁদো নদী কাঁদো-তে নদীর সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, নদী কাঁদছে, নদী মরছে, ফেরিঘাট সরে যাচ্ছে। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদীরা নদী-পানিসহ দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মওলানা ভাসানী ফারাক্কাসহ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে লংমার্চসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছেন। তিনি আরো বলেন, নদী পানির সাথে আমাদের সমুদ্র ও তার সম্পদ নিয়ে আন্দোলনের কথাও এ কমিটিকে ভাবতে হবে। নদীর সঙ্কটের কারণ কি, সমাধানে করণীয় কি তা জনগণকে জানানোর জন্য প্রকাশনা লাগবে, এটা শুধু ভারত-বাংলাদেশের সমস্যা নয়, তাই আমাদের অধিকারের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে।

খালেকুজ্জামান বলেন, ৫৭ নদী বিদেশ থেকে এসেছে এর মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে এসেছে। এসব নদী ভারতে উৎপত্তি নয়, কোনোটা চীনে, কোনোটা বার্মা, নেপালে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একাধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদী আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে গণ্য হয়। ফলে উজানের দেশ ভাটির দেশকে বঞ্চিত করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। ভারত আমাদের বঞ্চিত করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে আইন লংঘন করছে। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে মনমোহন সিং, নরেন্দ্র মোদি উভয়ে আমাদের ছেলে ভোলানো আশ্বাস দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। ভারতকে অনেকে বন্ধুরাষ্ট্র বলেন, বন্ধুরাষ্ট্রের নমুনা কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্তে হত্যা, উপক‚লে রাডার স্থাপন, বাণিজ্য ঘাটতি দূর না করা। তিনি ভারত কর্তৃক পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু মানসিকতার কারণে ভারত মাথার উপর বসেছে। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে গড়িমসি করছে। অথচ ফেনি নদীর পানি ভারতকে দেয়া হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে দিল্লির কাছ থেকে পানি আদায় করতে হবে।

নঈম জাহাঙ্গীর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ভারতের আগ্রাসন ও অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে ভারত বঞ্চিত করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ চুপ করে বসে থাকতে পারে না। লাখ লাখ শহীদের জীবনদানের বিনিময়ে অর্জিত একটি দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা কতিপয় নেতা-নেত্রী বা দু-চারটি রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধির কাছে আমরা বিসর্জন দিতে পারি না। দেশের সার্বভৌমত্ব হরণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও শাসক শ্রেণির বাইরে সকল দল মত নির্বিশেষে যারা ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী তাদের সাথে নিয়ে আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’-এর সদস্য সচিব নঈম জাহাঙ্গীর। বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, ডাক্তার জাফরউল্লা চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. এনামুল হক, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণদলের সভাপতি এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, কমিউনিস্ট লীগের অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বিশিষ্ট রাজনীতিক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, গরির মুক্তি আন্দোলনের সামছুজ্জামান মিলন, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সামছুল আলম, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)-এর সিরাজুম মুনীর, স্বাধীনতা পার্টির ফয়েজ হোসেন, মানবিক রাষ্ট্র আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক পরিষদের মো: সামছুদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের আবদুর রাজ্জাক, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ৩০টি রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, নদী ও পানি বিশেষজ্ঞসহ ব্যক্তিবর্গ প্রাথমিকভাবে এই ‘নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন’-এর সাথে যুক্ত হয়ে এই আন্দোলনের সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১৩ মার্চ, ২০২০, ৯:৩৬ এএম says : 0
    দেখুন? কিসের সরকার? যাদেরকে চাপ দেওয়ার কথা হলেন ওদেরকি মানবিক জ্ঞান আছে। Kik them out for our beloved country Bangladesh and Bangladeshi people. INSALLAH.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ