পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সারা বিশ্বের জন্য বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকার বা সরকারের পক্ষে বেআইনিভাবে এবং মর্জিমাফিক হত্যাকাÐ, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, খেয়ালখুশি মতো অন্যায়ভাবে বন্দি রাখার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক ‘২০১৯ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়।
গত বছরে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহের বর্ণনা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান সংবাদ মাধ্যমসহ মিডিয়াকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সরকার এই অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় উল্লেখ করার মতো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হয়রানি, প্রতিশোধের ভয়ে কিছু সাংবাদিক সরকারের সমালোচনাকে নিজেরাই সেন্সর করেন। সংবিধানের সমালোচনাকেও রাষ্ট্রদ্রোহীতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তি তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদÐ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার প্রকাশিত দীর্ঘ ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের জেলখানার অবস্থা নাজুক, নাগরিকের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। গোপনীয়তার বিরুদ্ধে মর্জিমাফিক বেআইনিভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়। সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মীদের খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার করা হয়। সেন্সরশিপ করা হয়। ওয়েবসাইট বøক করে দেয়া হয়। এনজিও’র বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক আইন রয়েছে। এনজিও’র কর্মকাÐের ওপর রয়েছে বিধিনিষেধ। স্বাধীনভাবে আন্দোলনে রয়েছে উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ।
রাজনৈতিক কর্মকাÐে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে বিধিনিষেধ। যেখানে নির্বাচনকে খাঁটি, মুক্ত ও অবাধ বলে দেখা যায়নি। রয়েছে মানবপাচার ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধ। নির্যাতন বা নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ব্যাপক দায়মুক্তি পান। তাদের বিরুদ্ধে নামমাত্র তদন্ত ও বিচার করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা অংশে বলা হয়েছে, আইনে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্যকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তবে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য কোন ধরনের বক্তব্যকে বলা হবে। এর ফলে সরকার তার ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে গেলে, বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিরুদ্ধে গেলে এবং জনশৃঙ্খলা, শিষ্টাচার ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে গেলে, আদালত অবমাননা হলে, মানহানি করলে সহিংসতায় উস্কানি দিলে এমন বক্তব্যকে সরকার বিধিনিষেধ দিতে পারে।
সাইবার অপরাধ কমিয়ে আনতে সরকার দৃশ্যত পাস করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮। এর আওতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়ার শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ বছর পর্যন্ত জেল। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিষ্পেষণ ও মুক্ত মত প্রকাশকে অপরাধের আওতায় আনার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রæপগুলো, সাংবাদিকরা, মিডিয়া আউটলেট ও বিরোধী দলগুলো। অক্টোবরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম দেখতে পেয়েছে যে, গত এক বছরে বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার অবনমন হয়েছে। দেশের সরকারি টেলিভিশনগুলো এবং বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে সরকারি ‘কন্টেন্ট’ বিনা খরচে স¤প্রচারে সম্পাদকীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো বলেছে, লাইসেন্স দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে। গত বছর সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো। মানবাধিকারের কর্মীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি ভীতি সৃষ্টিকারী হাতিয়ার হিসেবে দেখে থাকেন। সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ বলে বর্ণনা করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে। এখানে বিচারের আগেই আটক এবং আটকের হুমকিতে রয়েছেন অনেকেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও হয়রানির চিত্র তুলে ধরে ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, যেসব মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করে অথবা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড বা বিবৃতি প্রচার করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় ফেলেছে সরকার।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে, সরকার ও তার এজেন্টদের হাতে মর্জিমাফিক ও বেআইনি হত্যাকাÐের অনেক খবর আছে। সারা বছরেই আইন প্রয়োগকারীরা কোনো না কোনো স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে। প্রথমত তারা এটা করেছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে। কিছু কিছু তল্লাশির সময় সন্দেহজনক মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যথারীতি ক্রস ফায়ারে বা বন্দুকযুদ্ধে বা এনকাউন্টারে হত্যা বলে দাবি করে। পুলিশ বাহিনীর এই বর্ণনাকে ব্যবহার করে মিডিয়া। তবে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ও মিডিয়া আউটলেটগুলো দাবি করে, এসব ক্রসফায়ারের বেশির ভাগই বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকাÐ। নভেম্বরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টে বলে যে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিচার বহির্ভ‚ত হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন ৪৬৬ জন।
আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা তিনগুণ বেশি। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকার রিপোর্টে বলেছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১৫ জন মানুষ নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। কথিত বিচার বহির্ভ‚ত হত্যাকাÐ ও গ্রেফতার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ।
জোরপূর্বক গুম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে জোরপূর্বক গুম, অপহরণ অব্যাহত আছে বলে রিপোর্ট করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রæপগুলো ও মিডিয়া। এসব ঘটনা থামাতে অথবা তদন্তে সীমিত প্রচেষ্টা ছিল সরকারের। নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর কোনো অভিযোগ ছাড়াই কিছু মানুষকে ছেড়ে দিয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।
অন্যদের দেখিয়েছে গ্রেফতার, না হয় পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায় অথবা তারা কোথায় আছেন তা কখনো জানাই যায়নি। এপ্রিলে জোরপূর্বক গুম নিয়ে প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেসব জোরপূর্বক গুম হয়েছে তা একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে। যারা এর শিকার হয়েছেন তাদেরকে কর্তৃপক্ষ আগেই টার্গেট করেছিল।
প্রথমে আটক, পরে নিখোঁজের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন অনেকে। ইউএন ওয়ার্র্কিং গ্রæপ অন এ্যানফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানায়। কিন্তু সরকার সেই অনুরোধ রাখেনি। বলা হয়, তথ্য আদায়ের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীরা নির্যাতন করে। তারা হুমকি দেয়, প্রহার করে, নিক্যাপিং, বৈদ্যুতিক শত দেয়। ব্যাপক নির্যাতন ও আইন প্রয়োগকারীদের অশোভন আচরণের অভিযোগে আগস্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউএন কমিটি এগেইনস্ট টর্চার।
ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘উস্কানিমূলক বিবৃতি’ দেয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালের আগস্টে গ্রেফতার করা হয় ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে। অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে জেলখানায় নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি হাইকোর্টে আবেদন করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে জামিন পান। এখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মুলতবি আছে। ১৮ আগস্ট তার মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
বিএনপি বলেছে, সারা বছরে তাদের হাজার হাজার সদস্যকে খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব নেতাকর্মী রাজনৈতিক র্যালিতে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অথবা তারা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে যেমন ভীতি দেখানো হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়া থেকে নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরত রাখা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫ বছরের জেল দেয় আদালত।
কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবরে তার শাস্তি বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট। এসব অভিযোগের তথ্য প্রমাণে ঘাটতি থাকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক ও দেশের ভিতরের আইন বিষয়ে অভিজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সরকারের এসব কর্মকান্ড হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সরিয়ে দেয়া। তার পক্ষে জামিন আবেদনের ক্ষেত্রে ধীর গতি অবলম্বন করেছে আদালত। যদিও তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।