Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকা সড়ক ধসে খালে

গোয়ালন্দে অপরিকল্পিত খনন কাজ

মো. মোজাম্মেল হক, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার চর আন্ধারমানিক রেললাইন-চরকৃষ্ণপুর থেকে সেলিম ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত এক বছর আগে নির্মিত এলজিইডির পাকা সড়কের ২০০ মিটারের অধিক অংশ পাশের খালে ধসে পড়ে গেছে। প্রায় ৩ মাস ধরে ৩ চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ।
দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোনো মুহুর্তে পায়ে চলার পথও বন্ধ হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে গোয়ালন্দের ছোটভাকলা ইউনিয়নের চর আন্ধারমানিক রেললাইন-চর কৃষ্ণপুর হয়ে সেলিম ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত চেইনেজ ১০০০ মিটার থেকে ১৬৩৫ মিটার পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের পাকা কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ করার পর গত বছর ১২ মে পোস্টওয়ার্ক গ্রহণ পূর্বক চূড়ান্ত বিল প্রেরণ করে। রাস্তার ২ পাশে মাটির কাজ শেষে দৃশ্যমান সুন্দর করে সম্পন্ন করা হয়। রাস্তার চেঃ ১৩৫০ থেকে ১৫৫০ মিটার পর্যন্ত অংশের বাম পাশ দিয়ে পদ্মা নদীর শাখা খাল প্রবাহিত হয়েছে। গত বর্ষার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই শাখা নদীতে গভীর করে খাল পুনঃখনন করে। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা ঘেষে খাল পুনঃখনন করায় ভরা বর্ষায় খালটি দিয়ে পানির তীব্র স্রোত বয়ে যায়। এতে রাস্তার ১৩৫০ থেকে ১৫৫০ মিটার অংশের বাম পাশের পেভমেন্টসহ ধসে পড়ে। এরপর কাজ না হওয়ায় পরবর্তী যোগদানকারী গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকশৌলী মো. বজলুর রহমান খান চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পুনরায় নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করে পত্র দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২১ জানুয়ারি রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র লিখেন।
মাহমুদপুর এলাকার মুদি দোকানি রোস্তুম মোল্লা (৭০) বলেন, গত বন্যার কিছুদিন আগে রাস্তার পাশের খাল খনন করে। প্রায় ৭ ফুট করে গভীর ও ৩০ ফুট করে প্রসস্থ করায় বর্ষায় পানিরপ্রবাহ বেড়ে যায়। বর্ষার পানি কমতে শুরু করায় ধীরে ধীরে পাকা রাস্তারপার ধসে পড়তে থাকে। এভাবে খালের ২ পাড়ের মাটি ধসে পড়ায় রাস্তা ভেঙে যেতে থাকে।
স্থানীয় বরাট ভাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুপা আক্তার ওলিয়ারসহ কয়েকজন জানায়, আমরা রাস্তাটি দিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করি। আগে প্রতিদিন অটোরিকশা, মাহেন্দ্র, রিকশা, ভ্যান এমনকি ছোট ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়মিত চলাচল করত। পাকা রাস্তার অর্ধেকের বেশিঅংশ খালে ধসে পড়ায় এখন ৩ চাকার গাড়ি আসা যাওয়া করে না। ফলে আমাদের প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
রাস্তার পাশেই সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন বিধবা বৃদ্ধা ছামিরুননেছা (৭০) বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় স্বামী গোলাগুলিতে মারা যান। এরপর চার মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছেন। মানুষের কাছ থেকে ধারকর্জ করে নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দেন। থাকার জায়গা না থাকায় গত বছর সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ পান। রাস্তার বেশিরভাগ ভাঙনে খালে যাওয়ায় নিজের ঘর রক্ষা করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, গত বর্ষার আগে পাউবোর খাল খননের পর সড়কের পাশ ধসে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে মাটিসহ পাকা কার্পেটিং সড়ক ধসে এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে গত ৩-৪ মাস ধরে ৩ চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে একাধিকবার পাউবোকে অবগত করেছি। দ্রুত মেরামত করা সম্ভব না হলে রাস্তাটি দিয়ে পথচারীদেরও চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের খাল খনন প্রকল্পের আওতায় পাউবো খাল পুনঃখনন করেছি। এলজিইডির প্রকৌশলীর মাধ্যমে পাউবোকে অবগত করে প্রাথমিকভাবে মাটি ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা ঠিক রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ সরকার বলেন, রাস্তার অনেকটা খালের জায়গার মধ্যে। এ বিষয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট খাল পুনঃখনন প্রকল্পের ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পাইলিং করে মেরামতের ব্যবস্থা নিচ্ছি। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে মনে করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ