পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় মূল অনুষ্ঠান স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে দেশ ও জনস্বার্থে সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্টদের ওই অনুষ্ঠান স্থগিত করতে নির্দেশ প্রদান করেন। একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার উপস্থিতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়। পরে কমিটির সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাংবাদিকদের মূল অনুষ্ঠান স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস ও সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বড় পরিসরে জনসমাগম করা হবে না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনুষ্ঠানসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে ওইদিন ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের কর্মসূচি থাকছে। এছাড়া স্মারক ডাকটিকিট ও মুদ্রা প্রকাশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান প্রচার ও প্রকাশ যথারীতি অপরিবর্তিত থাকবে। তিনি আরো জানান, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে। ফলে বিদেশিদের উপস্থিতিতে যেসব অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল সেগুলো পরেও হতে পারে। করোনাভাইরাস যেহেতু দ্রুত সংক্রমণশীল একটি ভাইরাস, সুতরাং তার প্রাদুর্ভাব হওয়ার প্রেক্ষাপটে সতর্ক ও সাবধান হওয়ার এবং প্রত্যেকের জনসমাগমস্থল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার বিকল্প নেই। এহেন পরিপ্রেক্ষিতে মূল অনুষ্ঠান, যেখানে দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিত থাকার কথা ছিল, স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা এজন্য তাকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই। এটা নিঃসন্দেহে তাঁর দিক থেকে বড় রকমের একটা ত্যাগ এবং সেই ত্যাগ তিনি স্বীকার করেছেন জনগণের ভালো ও কল্যাণের জন্য।
অতিদ্রুতই দেশের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। দু’দিন আগেও আমাদের মধ্যে এক প্রকার স্বস্তি বিরাজমান ছিল। প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ তার বাইরে ছিল। এরপর হঠাৎই তিনজনের কারোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে দৃশ্যপট সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশের অন্যতম। উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ এখানেই। তবে যথাযথ সর্তকতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলে আক্রান্ত হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া মোটেই কঠিন নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বলেছেন, করোনা মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের আছে; উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। দেশের প্রথিতযসা চিকিৎসক, রোগতত্ত্ববিদ ও গবেষকগণ বলেছেন, এখনই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। করোনা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে যে প্রস্তুতি গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসমাবেশ পরিহার এবং সতর্কতা-সাবধানতা অবলম্বন অত্যাবশ্যক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে: সর্দি, কাশি, হাঁচি, জ্বর হলে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে, জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে, কারো মধ্যে সর্দির লক্ষণ দেখা গেলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, বহু ব্যবহারের স্থানসমূহে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে, নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি। অর্থাৎ এই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকাই নিরাপদ থাকার উপায়। সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক না থাকলেও এর চিকিৎসা আছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, এপর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অত্যন্ত সতর্ক ও সক্রিয় থাকতে হবে, জনসাধারণকেও চিকিৎসাবিদদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তবে ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার-প্রপাগন্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এহেন মসিবতের সময় বিভ্রান্ত ও আতংকিত হওয়া যাবে না।
জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ মুহূর্তে সরকারের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, জনগণের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা উপলব্ধি করেই মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের পরিসর সংকুচিত করেছেন। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী পালন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বটে। সরকারের তরফ থেকে এব্যাপারে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল, ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানটি স্থগিত হওয়ায় তারা আর আসছেন না। অনুষ্ঠানটি হলেও সবাই আসতেন বা আসতে পারতেন কিনা বলা যায় না। কারণ, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার গোটা বিশ্বের জন্যই একটা বড় বিপদ হিসাবে আপতিত হয়েছে। এনিয়ে সবাই ব্যস্ত। ওদিকে অন্য কারো ব্যাপারে না হলেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার আসার ব্যাপার নিয়ে জনগণের, বিশেষত তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে ব্যাপক বিরোধিতা হয়েছে। গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার জন্য যেমন অনেকেই মোদিকে দায়ী করেন তেমনি দিল্লির সাম্প্রতিক মুসলিম গণহত্যার জন্যও দায়ী করেন। বাংলাদেশের মানুষ সঙ্গতকারণেই গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত কাউকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেখতে চায়নি। অনুষ্ঠানটি স্থগিত হওয়ায় উভয়কূল রক্ষা হয়েছে। প্রবল গণবিরোধিতার মুখে বাংলাদেশে আসার বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতি থেকে মোদি যেমন রক্ষা পেয়েছেন, তেমনি আমাদের সরকারও বিব্রতকর অবস্থা থেকে রেহাই পেয়েছে। এখন সরকারের উচিৎ হবে, স্বল্পপরিসরে মুজিববর্ষের অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা এবং করোনাসৃষ্ট যাবতীয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথোচিত মনোযোগ ও পদক্ষেপ নেয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।