পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। মূলত তারাই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। আগামী ১২ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চার লেন এক্সপ্রেসওয়েটির উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা দুই দফা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এরপরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেওয়া হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার তিন কোটি ৯১ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় পড়ছে ২০০ কোটি সাত লাখ টাকা, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি শুরু হয়েছে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশনে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে গিয়ে মিশেছে মাওয়ায়, পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে। পদ্মা সেতু পার হয়ে এটি চলে গেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি ধীরগতির গাড়ি চলার জন্য দুই পাশে রাখা হয়েছে দুটি করে আরো চারটি লেন। ব্যয় বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে এটি পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক হিসেবে।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে রোড মার্কিংসহ বিভিন্ন সাইন-সিগন্যালের কাজ চলতে দেখা গেছে। একইভাবে চলছে বিভিন্ন বাস-বের নির্মাণকাজও। এক্সপ্রেসওয়েঘেঁষা এসব বাস-বের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন যাত্রী ছাউনিও। তিন-চারটি বাস থামানোর উপযোগী করে একেকটি বাস-বে নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর কাজও শেষের দিকে। কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের ভেতর গড়ে তোলা হচ্ছে এমনই একটি বাস-বে। এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে এ রকম আরো কয়েকটি বাস-বে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে এক্সপ্রেসওয়েটিতে ‘বৈধ বাসস্ট্যান্ডের’ চেয়ে অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের সংখ্যা বেশি। মোড়ে-বাজারে নিজেদের সুবিধামতো স্থানে অঘোষিত বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে বাসগুলো।
গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক্সপ্রেসওয়েকে দুই পাশে উঁচু ব্যারিয়ার দিয়ে আলাদা করা হয়, যেন মাঝখান দিয়ে কোনো গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ের ভেতর ঢুকতে না পারে। ইন্টারসেকশন, মোড়, জনবহুল হাটবাজার, লেভেল ক্রসিংসহ চলাচলের নানা প্রতিবন্ধকতা এড়াতে নির্মাণ করা হয় ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ওভারপাস। এক্সপ্রেসওয়েগুলোর নকশা করা হয় দ্রুতগতির গাড়ি চলাচল উপযোগী করে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নকশাও করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। এক্সপ্রেসওয়েটিতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হয়েছে আটটি পথ। ঢাকার বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ, আব্দুল্লাপুর, আব্দুল্লাপুরসংলগ্ন টোলপ্লাজা, শ্রীনগর ফ্লাইওভার ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মোড়ে রয়েছে এসব প্রবেশ-নির্গমনপথ। আর এক্সপ্রেসওয়ের ভেতরে কিছু দূর পরপর নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী ছাউনিসংবলিত বাস-বে।
এক্সপ্রেসওয়েটির একটা বড় অংশ পড়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলায়। এর নকশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ঢাকা থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে কখনো বাস-বে বা বাস স্টেশন থাকে না। বাসের স্টেশন থাকলে বাসগুলো আর সেটি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে না। রাস্তায় বাস দাঁড়িয়ে থাকলে যান চলাচল ব্যাহত হবে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় বাস-বে ছিল না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সুপারিশে এসব যোগ করা হয়েছে। বিদেশে কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-বে হয় না। ইমার্জেন্সি স্টপেজও রাখা হয় না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর স্থানীয় মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-বে যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করেছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে টোল দিতে হবে। এছাড়া পদ্মা সেতুতেও টোল দিয়ে চলতে হবে যানবাহনকে। এ নিয়ে জটিলতা এড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির সভায়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) অনুষ্ঠিত ওই সভায় বলা হয়, প্রস্তাবিত মহাসড়কটিতে দুটি টোল প্লাজার সংস্থান রাখা হয়েছে। অন্যদিকে নির্মাণাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতুর টোল প্লাজাও রয়েছে। সময় সাশ্রয়ের নিমিত্তে একটি সমন্বিত টোল প্লাজা করা যায় কি না, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে থাকা প্রয়োজন। এছাড়া কার্ড পাঞ্চ বা ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সুবিধার মাধ্যমে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়েও মতামত প্রদান করতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, আইএমইডির সুপারিশ অনুসারে অত্যাধুনিক পদ্ধতির টোল প্রদানের সুবিধা রাখা হয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।