পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশ হেফাজতে নারী হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন বাড়ছে। সে অনুপাতে দায়ের হচ্ছে না মামলা। মামলা না হওয়ায় বিচার মিলছে না। অথচ নিরাপত্তা হেফাজতে শারীরিক এমনকি মানসিক নির্যাতনেরও যাতে বিচার চাওয়া যায়- এ লক্ষে ২০১৩ সালে প্রণীত হয়েছে ‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’। এ আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম শাস্তি ৫ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার। নির্যাতনে মৃত্যু হলে রয়েছে যাবজ্জীবন কারাবাস ও অর্থদন্ড। জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আইনটি প্রণয়ন করে। বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। এ ভীতি থেকে মামলা রুজুতে আগ্রহী নন অধিকাংশ। নির্যাতনের শিকার অধিকাংশই জানেনও না- এ বিষয়ে প্রতীকারমূলক আইন রয়েছে। প্রণীত আইনের প্রয়োগ ও প্রচারণা নেই। বাড়ছে ভুক্তভোগীদের মাঝে হতাশা। ভয়ে চুপসে যাওয়া কিংবা অর্থের বিনিময়ে আপস-রফার পথই বেছে নিচ্ছেন পুলিশি নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ ভুক্তভোগী।
কেস স্টাডি-(এক) : গাজীপুর পুলিশ হেফাজতে মারা যান ইয়াসমিন বেগম (৪০) নামক এক নারী। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই নারী মারা যান। ইয়াসমিন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডেও ভাওয়াল গাজীপুর এলাকার আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। নিহতের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত অভিযোগ করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ভাওয়াল গাজীপুর এলাকায় তাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশ তার বাবাকে খোঁজ করে। না পেয়ে মা ইয়াসমিন বেগমকে ধরে নিয়ে যায়। মা পুলিশের সঙ্গে যেতে না চাইলে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এরপরও মায়ের মোবাইলে ফোন করলে পুলিশ ফোন ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় মাকে মারধর করার শব্দ শুনতে পায় ইয়াসিন। রাত ১১টার দিকে এক পুলিশ সদস্য তার মায়ের মোবাইল দিয়ে ফোন করে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যেতে বলেন। পরে আবার ফোন আসে। তখন তাকে বলা হয়, তার মা অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ইয়াসিন যেন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায়। পরে ইয়াসিন হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারে। রাত একটার দিকে মায়ের লাশ পুলিশ ইয়াসিনকে দেখতে দেয়।
তবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনজুর রহমান দাবি করেন, নির্যাতনে ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়নি। তার হৃদ রোগ ছিলো। দু’টি রিং পরানো ছিল। হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
কেস স্টাডি-(দুই) : গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে ডি-টাইপ কলোনিতে পতিতাবৃত্তির খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় জোসনা, শাহিনুর, সোহাগ, সেলিনা নামের চারজনকে আটক করা হয়। ওই রাতেই থানা হেফাজতে জোসনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তবে স্বজনদের অভিযোগ, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, অসুস্থতাজনিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহত জোসনা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সেলিম মিয়ার স্ত্রী। সেলিম পেশায় গাড়িচালক। গতকাল বিকেলে সেলিম মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ আমাদের বলছে, জোসনা স্ট্রোক করেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না।
এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এখনো পর্যন্ত আমার পরিবারের কেউ স্বাভাবিক হতে পারেনি। তাই এখনো মামলা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আমাদের পাশে কেউ নেই। তাই কি করব তা বুঝতেছি না।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর ছেলে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। তাদের নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন বলেও জানান তিনি।
তবে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, জোসনাকে থানায় নিয়ে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও অসুস্থতাজনিত কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে ওসি আরো জানান, স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার কারণে স্বজনরা কোনো অভিযোগ করেনি।
মামলা ও বিচার নেই বহু ঘটনার : শুধু ইয়াসমিন কিংবা কল্পনা নয়। এ দুটি ঘটনা নিকটবর্তী দৃষ্টান্ত মাত্র। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অসংখ্য নজির রয়েছে। নজির রয়েছে রক্ষকও স্বয়ং ভক্ষকে পরিণত হওয়ার। পাবনায় গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। গৃহবধূর সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজনের সাথে বিয়ে দেয়া হয় থানায়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ওসি ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার ও এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে পাবনার এ ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয়। একই বছর ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার কনস্টেবল ২৫ বছর বয়সী হালিমা গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন। হালিমা তার ডায়েরিতে লিখে রাখেন তার আত্মহত্যার একমাত্র কারণ তারই সহকর্মী পুলিশ অফিসার, যিনি হালিমাকে ধর্ষণ করেন ১৭ মার্চ। সেবছর জুনে মাসে মাদারীপুর কালকিনি উপজেলায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় পুলিশ প্রথম মামলা না নিয়ে কিশোরী ও তার স্বজনদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী পরিবার।
রাজধানীতে ধর্ষণের শিকার এক এসএসসি পরীক্ষার্থী সাহায্য চাইতে গিয়ে পুলিশের এক কনস্টেবলের কাছে আবারও ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা রয়েছে। ফেসবুকে জয় ঘোষ নামের একজনের সাথে পরিচয় হয় মেয়েটির। গত ৩১ মার্চ শাহবাগ এলাকায় তাকে ধর্ষণ করে জয়। এরপর ওই কিশোরী কনস্টেবল বাদল হোসেনকে ঘটনাটি জানিয়ে সহায়তা চায়। পরে মেয়েটিকে যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে সে। ২০১৭ সালে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে দুই পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিষয়ে ‘ব্যবস্থা’ বলতে এটুকুই। পরে বিষয়টি ‘আপস-রফা’ হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে ‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’ খুব একটা কাজে লাগতে দেখা যায়নি গত ৭ বছরে।
ইয়াসমীন ধর্ষণ ও হত্যা মামলাই ছিলো ‘শেষ বিচার’ : প্রতিকারের যৎসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় আইনটি প্রয়োগের আগে। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুরে পুলিশের পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কিশোরী ইয়াসমিন (১৪)। ওই ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল গোটা দিনাজপুর। পুলিশ এতে গুলি চালায়। এ গুলিতে প্রাণ দেন অন্তত: ৭ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় অনেককে। ক্ষোভ প্রশমনে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সরকারকে কারফিউ জারি করতে হয়। জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল ঘটনাটি। এ ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা হয়। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান, ১৯৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় প্রমাণিত হয় ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মতিন ৩ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন। দন্ডিত এএসআই মইনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিক-আপ ভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ২০০৪ সালে। কিন্তু ‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’ পাসের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। অথচ বিশ্লেষকদের মতে, এখনকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই বেশি উদ্ধ্যত, বেপরোয়া এবং অপরাধপ্রবণ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজার মতে, পুলিশ গ্রেফতারের পর মারধর করে এদেশে এটি কমন বিষয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ আইনে মামলা হয় না। নিরাপত্তার অভাবে মামলায় সাহস করেন না ভুক্তভোগীরা। নির্যাতনের শিকার অধিকাংশই জানেন না আইনটির খবর। নির্যাতিত হয়েও এ আইনে মামলা করতে ভয় পায় মানুষ। প্রতীকার না পাওয়ার হতাশাও রয়েছে। মামলা না হওয়ায় বিচারও হচ্ছে না। তিনি বলেন, যে কোনো আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশি সহযোগিতা প্রয়োজন। ‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’ নামক আইনটি পুলিশেরই বিরুদ্ধে। অন্য আইনের মতো নয় এটি। ‘বিশেষায়িত আইন’ হিসেবে এটির প্রয়োগে সরকারকে কৌশলী হতে হবে। আইন প্রণয়নের মাঝেই সরকারের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ নয়।
‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট’র নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে আইনটি প্রণীত হওয়ার পর পুলিশ দ্বারা নির্যাতনের শিকারের ঘটনায় মাত্র ১৭টির মতো মামলা চলমান রয়েছে- মর্মে তথ্য আছে। নিগ্রহের শিকার হয়েও যখন মানুষ আইন ব্যবহার করে না তখন বুঝতে হবে আইনটি কার্যকর নয়। ‘পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’র আওতায় দায়ের হওয়া মামলায় কারও বিচার হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই।
আইনের প্রয়োগ এবং বিচার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘ইনকিলাব’কে বলেন, এরই মধ্যে এ আইনের আওতায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন। এ আইনের আওতায় চার্জশিট হলে সেটির প্রভাবমুক্ত বিচারের নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।