পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাংকের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। শেয়ারবাজার বা বন্ড মার্কেটে তাদের অতীত অভিজ্ঞতাও বেশ নেতিবাচক। দেশে প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাপক অর্থে কোনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। তাই সরকার অল্প আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ হিসেবে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে ব্যাংক ব্যবস্থার চেয়ে বাড়তি সুদে বিনিয়োগের সুযোগ রেখেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় সরকার প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষ যাতে উপকৃত হন এবং এই সুবিধা তারাই যেন ভোগ করতে পারে সে জন্য নতুন কিছু নিয়ম করেছে। এই নিয়মে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ২ লাখ টাকার বেশি হলেই পরিচয় নিশ্চিত করতে টিআইএন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারণ বেশ কিছুদিন থেকে প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষের নিরাপদ সঞ্চয়ে কালো টাকার মালিকরা বিনিয়োগ করছেন।
ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে সুদহার এবং নীতিমালার বিষয়টি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেছেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু অবৈধ কালো টাকার মালিক-এর সুযোগ নিয়ে সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর স্কিমে বিনিয়োগ করায়-এর উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। তাই ডাকঘরে সঞ্চয় কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। আর ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম এতোদিন অটোমেশনের আওতায় ছিল না বলে কালো টাকার মালিকরা দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের সুযোগটা নিয়েছেন। আর তাই গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক পরিপত্রে ডাকঘরে যে সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে, সেই ব্যাংকের সুদের হার কমানো হয়। তবে দেশের ডাকঘরগুলোকে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় আনার পর আগামী ১৭ মার্চ থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদ আগের হারে ফিরিয়ে নেয়া হবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনমানুষের নেত্রী। আমিও গরিবের সন্তান, তাই গরিবরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা প্রধানমন্ত্রী এবং আমি কোনোভাবেই চাইব না। গরিবদের স্বার্থবিরোধী কোনো আইন করব না। তাই গরিবদের সুবিধার্থে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানো হচ্ছে না। তবে যাদের জন্য এই সুবিধা দেয়া হয়েছে তারা যাতে পায় সেটা নিশ্চিতে কিছু নীতিমালা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। একইসঙ্গে বর্তমান সরকার ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের সুযোগ কমায়নি বরং আগের চেয়ে বেশি বিনিয়োগের সুযোগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বর্তমান নিয়মে এখন থেকে একক নামে ৫০ লাখ টাকা, যৌথ নামে ১ কোটি এবং পেনশনাররা দেড় কোটি পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। মাঝে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদের হার কমানো অবৈধ কালো টাকার মালিকদের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করার একটি কৌশল মাত্র। যা আগামী ১৭ মার্চ থেকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শামসুন্নাহার বেগম ইনকিলাবকে বলেন, সঞ্চয়পত্র ইতোমধ্যে অটোমেশনের আওতায় এসেছে। নতুন নিয়মে একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। গ্রাহক পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। তবে সম্প্রতি কমানো ডাকঘর স্কিমে বিনিয়োগে সুদের হার ১৭ মার্চ থেকে আগের অবস্থানে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়ে শামসুন্নাহার বেগম বলেন, সরকার মনে করলে পুনঃবিবেচনা করবেন। আমরা তা বাস্তবায়ন করব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে সঞ্চয়পত্রের জন্য সমন্বিত বিধিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটির সুপারিশে এসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ হাবীবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত ১০ সদস্যের কমিটিতে সঞ্চয় অধিদফতর ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাকঘর ও সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির প্রতিনিধিরা রয়েছেন। কমিটি এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করে নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। কিছু প্রক্রিয়া শেষে যা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ডাকঘরে চারভাবে টাকা রাখা যায়। ডাকঘর থেকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাব খোলা যায়। আবার ডাক জীবন বীমাও করা যায়। সম্প্রতি সুদের হার কমানো হয় ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাবে। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। যা আগামী ১৭ মার্চ থেকে আবার ১১ দশমিক ২ শতাংশে ফিরে আসবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যমান নিয়মে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আলাদা সীমা নির্ধারিত আছে। একই ব্যক্তি নিজ নামে এবং যৌথভাবে সব সঞ্চয়পত্রের ঊর্ধ্বসীমা পর্যন্ত কিনতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করা। কিন্তু এতদিন কালো টাকার মালিকরা এই সুযোগ নিতেন। নামে-বেনামে বিনিয়োগ করতেন। তাই অটোমেশনের ফলে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অটোমেশনে এলে কালো টাকার মালিকদের সুযোগটা কিছুটা হলেও কমবে। সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে এই সুযোগ নিতে পারবেন।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো না, ব্যাংকে সুদ কম। সাধারণ মানুষ অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে পারছে না। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অংশ ডাকঘর স্কিম ও সঞ্চয়পত্র। গরিব, অবসরপ্রাপ্তদের চিন্তা করে ডাকঘর স্কিমের সুদের হার আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে এনে অর্থমন্ত্রী উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের কার্যক্রমকে পুরো অটোমেশনে এনে কালো টাকার বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন রাশিদুল ইসলাম। এর মাধ্যমে এখন সত্যিকার প্রবীণ, কর্মহীন বা দরিদ্র মানুষ এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ক্রেতা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর বা ডাকঘর যেখান থেকেই সঞ্চয়পত্র কিনুক না কেন, সব তথ্য জমা হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি ডাটাবেসে। এক লাখ টাকার বেশি হলে ক্রেতাকে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিতে হচ্ছে। এছাড়া সবধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে কালো টাকার বিনিয়োগ অনেকটা কমে এসেছে। একইসঙ্গে আগামী ১৭ মার্চ থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমও অটোমেশন প্রক্রিয়ার আতওায় আসছে।
যদিও এ বছর গত বছরের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রেও সুদের ওপর উৎসে করের হার ১০ শতাংশ এবং যাদের টিআইএন নেই, এ হার তাদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ।
পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে সরকারের নানা শর্তে সঞ্চয়পত্রে কালো টাকার বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। তাই সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণও কমেছে। সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র সরকার নিট ঋণ নিয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। যদিও চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা; এই অঙ্ক গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে ২ হাজার ২১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
সঞ্চয়পত্র নিয়ে অধিদপ্তরের বক্তব্য
সঞ্চয় অধিদফতর বলেছে, স¤প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মুনাফার হার কমানোর বিষয়ে নানামুখী বিভ্রান্তিকর ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য সম্বলিত সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, যা এ খাতে বিনিয়োগকারী তথা সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের বক্তব্য-
অধিদফতর থেকে পরিচালিত বিদ্যমান সঞ্চয় স্কিমসমূহের মুনাফার হার কমানো হয়নি। সঞ্চয়পত্রসমূহের মুনাফার হার যথাক্রমে একইরূপ (৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র : ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র : ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্র : ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র : ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ) বলবৎ রয়েছে। এছাড়া, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিদ্যমান ৩টি বন্ডের মুনাফার হারও কমানো হয়নি। অর্থাৎ ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ১২ শথাংশ, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড-৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলবৎ রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।