বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনের এক ক্ষুদ্র অংশ হলো শখ। শখ আমাদের যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি কাজে শক্তিও যোগায়। শখ পূরণ করতে মানুষ কত কিছুই না করে। তাই তো বলা হয় যে, ‘শখের তোলা লাখ টাকা’। তেমনি এক বিচিত্র শখের মানুষ জয় নন্দী। তার শখ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকেট সংগ্রহ করা। শখের বসে কয়েক বছরে একটু একটু করে মুদ্রা, নোট ও ডাকটিকেটের এক দারুণ সংগ্রহভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন। এখন পর্যন্ত মোট ২০৫টি দেশের ও অঞ্চলের মুদ্রা রয়েছে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে। জয় নন্দী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
শুরুর গল্প : জয় নন্দীর শুরুর গল্পটা নতুনত্ব আর ভিন্নতার প্রতি আগ্রহ থেকে। মুদ্রা সংগ্রহের মাধ্যমে অন্য একটা দেশের বা অঞ্চলের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যাবে এই ভেবে শখের সৃষ্টি হয়। এগুলো জয়কে অনেক আকৃষ্ট করে। তাই শখের বশে মুদ্রা সংগ্রহ করতে শুরু করে জয় নন্দী।
জয়ের সংগ্রহের শুরু ২০০৩/২০০৪ সালের দিকে। ছোটবেলার তার বয়স যখন ৬ বা ৭, তখন তার মামাবাড়িতে তার দিদা›র একটা বাক্সের মধ্যে তিনটা ভারতীয় ২ পয়সা আর ৫ পয়সার কয়েন পেয়েছিল। দেখতে অন্যরকম কয়েন বলে আগ্রহ জন্মেছিল তার, নিয়ে এসেছিলাম সাথে করে। এগুলোই জয় নন্দীর সংগ্রহের প্রথম কয়েন। তারপর থেকে যাকেই পেতো কাছে তাকেই বলতো, বিদেশি কয়েন থাকলে দেওয়ার জন্য।
জয় জানান, ২০১০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় আরো ২/৩ জন মুদ্রা সংগ্রাহকের সাথে পরিচয় হই, তাদের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে কিছু মুদ্রা সংগ্রহ করি। লেবাননের ৫০০ পাউন্ড এর একটা ব্যাংকনোট দেন জেঠী, সেটাই আমার সংগ্রহের প্রথম ব্যাংকনোট।
জয়ের সংগ্রহের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসে ২০১৮ সালের দিকে, ফেসবুকে মুদ্রা সংগ্রাহকদের বেশকিছু কমিউনিটি আছে, সেগুলোতে যুক্ত হবার মাধ্যমে। সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটা সময়ের পরে জয় তার পারিবারিক সাপোর্ট পেয়েছে। যখনই নতুন কিছু সংগ্রহ করত, বাসার সবাইকে দেখাতো; তারা আগ্রহ নিয়েই দেখতেন, জিজ্ঞেস করতেন। জয় নন্দীর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবী, বেশ কয়েকজন সিনিয়র ও জুনিয়র সবসময়ই তাকে উৎসাহ দেয়।
জয় নন্দীর সংগ্রহে যা আছে : এই মুহূর্তে জয় নন্দীর কাছে ৩৯০টিরও বেশি বিদেশি নোট, ৩৮০টিরও বেশি বিদেশি কয়েন আছে। আর এই সংখ্যার বাইরেও বাংলাদেশের নোট, কয়েন আছে অনেক ধরনের। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাংকনোট ১৯৭২ ও প্রথম কয়েন ১৯৭৩ সালে ইস্যু হয়। বাংলাদেশের সব গভর্নর এর স্বাক্ষরিত ব্যাংকনোট, পলিমার (প্লাস্টিক) আছে তার সংগ্রহে।
উল্লেখযোগ্য কিছু সংগ্রহ : বিলুপ্ত দেশ ও সাম্রাজ্যের মুদ্রা, বিভিন্ন দেশের শতবর্ষী ব্যাংকনোট, ঔপনিবেশিক অঞ্চলের মুদ্রা, ২০০০ বছরেরও আগের মৌর্য সাম্রাজ্যের পাঞ্চ মার্ক রৌপ্যমুদ্রা, ব্রিটিশ আর্মড ফোর্সের ক্যান্টিনে ব্যবহার করার জন্য ইস্যুকৃত নোট ইত্যাদি আছে। এছাড়া জয় নন্দীর পছন্দের থিম হচ্ছে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর ছবিযুক্ত বিভিন্ন দেশের নোট, অড ডিনোমিনেশন বা অদ্ভুত মূল্যমানের নোট। যেমন: বাংলাদেশের ৪০, ৬০, ৭০ টাকার স্মারক নোট, কুক আইসল্যান্ড এর ৩ ডলার, বার্মার ১৫, ৩৫, ৪৫ কিয়াট, নামিবিয়া ৩০ ডলার ইত্যাদি।
অনেক দেশ বা অঞ্চল যার নাম সচারাচর শোনা যায় না এমন দেশের মুদ্রাও জয়ের সংগ্রহে আছে। আবার বিলুপ্ত দেশ বা ডেড কান্ট্রির মুদ্রাও আছে। যেমন: যুগোস্লাভিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বিয়াফ্রা, অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে ১৫টা দেশ হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটার ব্যাংকনোট আছে তার সংগ্রহে। এছাড়া সে আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে প্রচলিত ভিন্ন ভিন্ন ধরণের কোয়ার্টার ডলার সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন ঔপনিবেশিক অঞ্চলের মুদ্রা তার সংগ্রহে আছে। যেমন: ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, ব্রিটিশ মালয়, ব্রিটিশ হংকং, মালয় ব্রিটিশ বোর্নিও ইত্যাদি। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর ছবিযুক্ত মুদ্রা জয় নন্দীর পছন্দের থিম। তার কাছে ব্রিটেন, আইল অব ম্যান, মালয়, ব্রিটিশ বোর্নিও, সেন্ট হেলেনা, ইস্ট ক্যারিবিয়ান স্টেটস (৮টি দেশ ও অঞ্চলের সমন্বয়), ব্রিটিশ ক্যারিবিয়ান টেরিটোরি, ক্যায়মেন আইসল্যান্ড, জিব্রাল্টার, বাহামাস, জার্সি, ফিজি, বারমুডা, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশ ও অঞ্চলের এলিজাবেথ এর ছবিযুক্ত মুদ্রা আছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের পলিমার নোট ও বাইমেটাল কয়েন (দুই ধাতুর কয়েন) আছে জয়ের সংগ্রহে।
যেভাবে সংগ্রহ করে : বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন ব্যক্তি মাধ্যমে, মানি এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে, অনলাইন থেকে ইত্যাদি মাধ্যমে এসব সংগ্রহ করে থাকে জয়। এছাড়াও জয়ের বাবা তাকে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশের নোট উপহার দিয়েছিলেন, শতবর্ষী ব্যাংকনোট উপহার পেয়েছিল দুইজন কালেক্টর ভাইয়ের থেকে, আর বন্ধুবান্ধবী ও সিনিয়র-জুনিয়রদের থেকে অনেক গিফট পেয়েছে এবং এখনো পায়।
পরিকল্পনা : প্রদর্শনীতে আগামীতে দেখানোর ইচ্ছা আছে জয় নন্দীর। তার ভবিষ্যতে একটা ব্যক্তিগত জাদুঘর করার ইচ্ছা আছে। আরেকটা ইচ্ছা হল নতুন সংগ্রাহক তৈরি করা। তার মতে, একটা সময় সে বেঁচে থাকবে না, কিন্তু তার সংগ্রহশালা থাকবে। সেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে। নতুন প্রজন্ম জাতীয় ও বৈশ্বিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারবে এখান থেকে। কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে মুদ্রা সংগ্রহ শুরু করবে। তখনই জয় সার্থক হবে, জয়ের সংগ্রহের সার্থকতা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।