Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক চুক্তি, ১৪ মাসে সব সৈন্য প্রত্যাহার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৫৯ পিএম

অবশেষে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তালেবান ও মার্কিন ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তানে মোতায়েনরত সৈন্যদের ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। -রয়টার্স
বিবিসি বলছে, চুক্তির শর্ত মেনে আফগানিস্তানে তালেবান কোনও হামলা না চালালে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়াশিংটনের ন্যাটো মিত্ররা দেশটি থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদারের নেতত্বে ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। তবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ ও মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার। চুক্তি স্বাক্ষরের পর তালেবানের প্রতিনিধি মোহাম্মদ নাইম এই চুক্তিকে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটলো। এক বিবৃতিতে তালেবান বলেছে, আফগানিস্তানে দখলদারিত্বের অবসানে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
অঙ্গীকার রক্ষায় তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, আমি জানি, এখন দেশটিতে বিজয় ঘোষণার একটি লোভ থাকবে। কিন্তু আফগানদের বিজয় তখনই অর্জন হবে; যখন তারা শান্তি এবং সমৃদ্ধির সাথে বসবাস করতে পারবেন।
দোহায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, আল-কায়েদা এবং অন্যান্য চরমপন্থী কোনও গোষ্ঠীই তালেবান নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। আফগান লাখ লাখ নাগরিকের আশা, এই চুক্তির ফলে দেশের ভেতরে আমেরিকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধের অবসানের পথ তৈরি হবে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আফগান অপর জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার হামলার কয়েক সপ্তাহ পর দেশটিতে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দেড় যুগের আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২ হাজার ৪০০ সেনা নিহত হয়েছে।
ওয়াশিংটন অভিযোগ করে, জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা এবং সংগঠনটির প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে তালেবানের। দেশটির ক্ষমতা থেকে অপসারিত হলেও এখনও প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তালেবানের হাতে।
এই যুদ্ধ অনেক আগে শুরু হলেও ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তা তালেবান যোদ্ধাদের আন্তর্জাতিক বৈধতা দেবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যেকোনও ধরনের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাদের নির্দেশ দেয় তালেবান। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, শান্তি চুক্তি এবং সমঝোতার সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।
দোহার শেরাটন হোটেলে ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
আফগানিস্তানে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। চুক্তির পর তালেবান-মার্কিন যৌথ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা ৮ হাজার ৬০০ জনে কমিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে এই যৌথ ঘোষণার ১৩৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, আগামী ২৯ মে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অংশ নিয়ে তালেবান সদস্যদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাবে আফগান সরকার।

 



 

Show all comments
  • মো হেদায়েত উল্রাহ ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:০৭ পিএম says : 0
    চুক্তিটিকে স্বাগত জানাই।আমেরিকা কথা মানুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১ মার্চ, ২০২০, ১১:৩২ এএম says : 0
    Finally USA have found an exit way
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ