মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের রাজধানী দিল্লির বেশ কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ ধর্মীয় দাঙ্গা আবারো প্রমাণ করলো যে, যেকোনো সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি শিকার হয় নারী ও শিশুরা। দিল্লি থেকে বিবিসির গীতা পান্ডের প্রতিবেদন।
দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে সহিংসতায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই রয়েছেন। হাজার হাজার মুসলমান নারী ও শিশু ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
শহরের ইন্দিরা বিহার এলাকার একটি বড় কক্ষে সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত অসংখ্য নারী ও শিশু মাদুরের ওপর বসে রয়েছেন। অনেক তরুণীর কোলে শিশু রয়েছে, সেই সঙ্গে একটু বড় শিশুরাও আশেপাশে খেলা করছে। এই কক্ষটি একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর, যা এখন বাস্তুচ্যুত মানুষজনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অন্যতম প্রধান দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকা শিব বিহারে নিজেদের বাড়িঘরে হিন্দু দাঙ্গাকারীরা হামলা করার পরে এই মুসলমান নারী ও শিশুরা পালিয়ে এসেছে।
কর্মজীবী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অলিগলিতে ভরা শিব বিহারে বেশ বড় সংখ্যায় মুসলমানরা বসবাস করে। নোংরা একটি নালার পাশ দিয়ে কয়েকশো মিটার দূরে চামান পার্ক আর ইন্দিরা বিহারে আবার মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
মাত্র একটি সড়ক দ্বারা মুসলমান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো আলাদা হয়ে রয়েছে। এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষরা বহুকাল ধরে একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু সেই অবস্থার এখন পরিবর্তন হয়েছে।
শিব বিহারের ঘরবাড়ি থেকে পালিয়ে আসা নারী নাসরিন আনসারী বলছেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর সেখানে সহিংসতা শুরু হয়, যখন শুধুমাত্র নারীরাই বাড়িতে ছিলেন। তাদের বাড়ির পুরুষরা তখন কয়েক মাইল দূরে, দিল্লির আরেক অংশে একটি ইজতেমায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন।
‘আমার ৫০-৬০ জন মানুষকে দেখতে পাই। তারা কারা জানি না, আগে কখনো দেখিনি,’ বলছেন নাসরিন।
‘তারা আমাদের বলে, আমরা তোমাদের রক্ষা করতে এসেছি, তোমরা ঘরের ভেতরে থাকো’।
তিনি এবং অন্য নারীরা তাদের বাসার জানালা এবং বারান্দা দিয়ে তাদের দেখছিলেন। একটু পরেই তারা বুঝতে পারে, এই মানুষগুলো তাদের রক্ষা করার জন্য আসেনি।
বিবিসি সংবাদদাতাকে একটি ভিডিও দেখান নাসরিন, যা তিনি বাসার জানালা থেকে ভিডিও করেছিলেন। সেখানে বেশ কয়েকজন পুরুষকে দেখা যায়, যারা সবাই হেলমেট পরে রয়েছেন এবং হাতে লম্বা কাঠের লাঠি রয়েছে।
নাসরিন বলছিলেন, এই পুরুষরা জয় শ্রী রাম এবং হনুমান চালিসার মতো হিন্দু ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করছিলেন।
তার মা নুর জাহান আনসারী বলছেন, একজন মুসলমান প্রতিবেশী তাকে ডেকে বলেন যে, তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘আমাদের জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম, আরেকজন মুসলমান প্রতিবেশী এবং তার ওষুধের দোকান আগুনে জ্বলছে’।
হামলাকারীরা বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ভাঙচুর করে এবং ধুলায় পুরো এলাকা আচ্ছাদিত হয়ে যায়।
‘কিছুক্ষণ পরে আমাদের চারদিকেই যেন আগুন জ্বলতে শুরু করে। তারা মুসলমানদের দোকান এবং বাড়িঘর লক্ষ্য করে মলোটভ ককটেল এবং রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ছুড়ে মারছিল। কিন্তু কোন হিন্দু বাড়িতে হামলা করেনি। আমরা কখনো ভাবিনি, এরকম কোন কিছু কখনো ঘটতে পারে। আমাদের একমাত্র দোষ, আমরা মুসলমান’ তিনি বলেন।
নাসরিন বলেন, নারীরা তখন পুলিশের কাছে অনেকবার টেলিফোন করে। ‘প্রত্যেকবার তারা আমাদের আশ্বস্ত করছিল যে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তারা এখানে পৌঁছে যাবে’।
একপর্যায়ে নাসরিন কয়েকজন আত্মীয়কে টেলিফোন করে বলেন, আজ রাতে তাদের আর রক্ষা হবে না।
হামলা শুরুর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর অবশেষে রাত তিনটার দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়, যখন চামান পার্ক আর ইন্দিরা বিহারের মুসলমান ব্যক্তিরা পুলিশের সঙ্গে সেখানে পৌঁছান।
‘আমরা আমাদের জীবন বাঁচাতে ছুটছিলাম। এমনকি পায়ে জুতা পরার সময়টাও পাইনি,’ তিনি বলেন।
ওই আশ্রয় কেন্দ্রের আরো কয়েকজন নারী সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে একই রকম কাহিনী বললেন।
উনিশ বছর বয়সী শায়রা মালিক বলছেন, তিনি এবং তার পরিবার একজন প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ‘আমরা যেন সেখানে ফাঁদে আটকে পড়েছিলাম। বাইরে থেকে বৃষ্টির মতো সেখানে পাথর আর মলোটভ ককটেল ছুড়ে মারা হচ্ছিল’।
অনেক নারী বিবিসির সংবাদদাতাকে বলেছেন, সেদিন রাতে যৌন হামলার কতো কাছাকাছি থেকে তারা বেঁচে গিয়েছেন। হামলাকারীরা তাদের স্কার্ফ খুলে ফেলেছিল এবং কাপড়চোপড় ছিঁড়ে ফেলেছিল।
কীভাবে ঘরে ঢুকে কয়েকজন ব্যক্তি তার কাপড়চোপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে, সেটা বর্ণনা করতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন একবছর বয়সী একটি শিশুর মা- একজন নারী।
ত্রিশ বছর বয়সী আরেকজন নারী বলেন, তার একজন হিন্দু প্রতিবেশীর সহায়তার কারণেই তিনি বেঁচে আছেন।
‘আমার প্রতিবেশী হামলাকারী ব্যক্তিদের বলেন, আমি তাদের পরিবারের সদস্য। এখানে কোন মুসলমান নারী নেই। দাঙ্গাকারীরা পেছন দিকে চলে গেলে তিনি আমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন’ বলেন ওই নারী।
এই অর্থহীন সহিসংতার শুরু হয় রোববার বিকাল থেকে যখন নতুন বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক ও বিরোধিতাকারীরা শিব বিহারের কয়েক কিলোমিটার দূরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আশেপাশের এলাকাগুলোয় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে রয়েছে শিব বিহার এবং চামান পার্ক।
সংবাদদাতা যখন ওই এলাকার ভেতর দিয়ে হাঁটছিলেন, সেখানকার পথেঘাটে তখনো সহিংসতার ছাপ দৃশ্যমান ছিল। অনেক দাঙ্গা পুলিশ সতর্ক নজর রাখছেন, যাতে আর নতুন করে কোন সহিংসতার শুরু না হয়।
সড়ক জুড়ে ইট আর পাথরের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও আগুনে পোড়া গাড়ি, দোকান এবং বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে। শিব বিহারে একটি মসজিদেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
ইন্দিরা বিহারের আশ্রয় কেন্দ্রে নারীরা বলেছেন, তাদের কোন ধারণাই নেই যে, কখন তারা আবার নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে পারবেন।
শাবানা রেহমান বলছেন, তার তিনটি সন্তান ক্রমাগতভাবে তাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন যে, কবে তারা নিজেদের বাড়িতে যাবে।
‘অগ্নিসংযোগকারীরা আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন কোথায় যাবো? আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী? আমাদের এখন কে দেখবে? আমাদের সব কাগজপত্র পুড়ে গেছে, ‘যখন তিনি এই কথা বলছিলেন, তখন তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে নামছিল।
বহু বছর ধরে বসবাস করে আসা তার শিব বিহারের বাড়িটি স্বল্প হাটা পথের দূরত্বে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন সেই দূরত্ব যোজন যোজন দূরে। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।